১৩ জানুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ৩:০৪

বাজার ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন

-ইবনে নূরুল হুদা

আমাদের দেশের মত নিয়ন্ত্রণহীন ও নৈরাজ্যকর বাজার ব্যবস্থা বিশ্বের আর কোথাও দেখা  যায় না। বাজারের ওপর সরকার বা সরকারি কোন সংস্থার তেমন কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। নিয়ন্ত্রণ নেই প্রকৃত ব্যবসায়ি বা ভোক্তা সাধারণেরও। ফলে বাজার চলে বাজারের গতিতে; অতি মুনাফাখোর, মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। মূলত, এরাই হলো বাজার ব্যবস্থাপনার দ-মু-ের কর্তা। এরাই বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এজন্য অজুহাত সৃষ্টিতেও এরা বেশ করিৎকর্মা। অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রায়শই আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ধুয়া তোলা হয়। কিন্তু যখন বৈশি^ক বাজারে মূল্য হ্রাস পায়, তখন আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে তার কোন ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় না। এজন্যও অজুহাতের কোন অভাব হয় না। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, যেসব পণ্য আমদানি নির্ভর নয়, সে সবের ক্ষেত্রেও একই অজুহাত দেখানো হয়। এতে প্রমাণ হয়, দুর্জনের কখনো ছলনার অভাব নেই। আর এক্ষেত্রে কোন জবাবদিহিতাও নেই। তাই আমরা সকলেই এদের কাছে অনেকটাই জিম্মি।

একথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, নানাবিধ কারণেই ২০২২ সালে বৈশি^ক খাদ্য বাজার বেশ অস্থির ছিল। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছিলো অস্বাভাবিকভাবে। করোনা ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল। ফলে, জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার গড় মূল্যসূচক রেকর্ড সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। যা বৈশি^ক জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তোলে। আমাদের দেশও এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে আলাদা ছিল না। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারেও ব্যাপক মূল্যস্ফীতি ঘটে।

বিদায়ী বছরের শুরুতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানায়-২০২২ সালে খাদ্যমূল্য সূচক গড়ে ১৪৩.৭ পয়েন্ট হয়েছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় ১৪.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত, ১৯৯০ সাল থেকে খাদ্য মূল্য রেকর্ড শুরুর পর এটি ছিল সর্বোচ্চ। এর আগে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে খাদ্যপণ্যের দাম ২৮ শতাংশ বেড়েছিল। রয়টার্স বলছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর কৃষ্ণসাগরে বাণিজ্যে বিঘœ ঘটার আশঙ্কায় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নভেম্বরে সংশোধিত ১৩৫.০০ পয়েন্টের তুলনায় ডিসেম্বরে বেঞ্চমার্ক সূচকটি টানা নবম মাসে ১৩২.৪ পয়েন্টে নেমে আসে। আগে নভেম্বরের পরিসংখ্যান ১৩৫.৭ পয়েন্ট হিসাব দেয়া হয়েছিল। এফএও বলছে, ডিসেম্বরে সূচকের পতনের কারণ ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক মূল্য হ্রাসের সঙ্গে কিছু খাদ্যশস্য ও গোস্তের দাম কমে যাওয়া। তবে, চিনি ও দুগ্ধজাত পণ্যের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

তবুও ২০২২ সালের পুরো সময় জুড়ে এফএও'র কয়েকটি খাদ্য উপ-সূচকের মধ্যে কিছু পণ্য যেমন, গোস্ত, দুগ্ধজাত পণ্য ও ভোজ্যতেলের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। তখন চিনির দাম ১০ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল। এফএও'র সিরিয়াল প্রাইস ইনডেক্স সূচক ২০২২ সালে ১৭.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে-সরবরাহ ঘাটতি, উৎপাদন ও ইনপুট খরচ, প্রতিকূল আবহাওয়া এবং ক্রমাগত চাহিদা বৃদ্ধি। তবে বিদায়ি বছরে এসে সে অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে এবং বিশ^বাজারে পণ্যের দাম অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। আর এ ধারা এখনো অব্যাহতই রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে এর কোন প্রভাব নেই বরং অভ্যন্তরীণ বাজারে নৈরাজ্য আরো বেড়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত বছর (২০২৩) বিশ্বব্যাপী খাবারের দাম আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। যেখানে একই সময় বাংলাদেশে খাবারের দাম ১০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ বেড়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র দেখা গেছে। এফএওর খাদ্য মূল্যসূচক ২০২৩ প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) খাদ্যের দাম ১০ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। আর সারা বছর (২০২২ এর তুলনায় ২০২৩ এ) ব্যবধানে কমেছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ওই প্রতিবেদন বলছে, এ সময় প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে শুধু চিনি ছাড়া।

এ প্রতিবেদন যখন প্রকাশ হয়েছে একই সময়ে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান (বিবিএস’র তথ্য) বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট) জানুয়ারিতে সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ থেকে আগস্টে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২৩ সালে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কখনো ১০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশের কম ছিল না। ২০২৩ সালের শুরু থেকেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বছরের শেষ ভাগে এসে তা আরও বেড়েছে। সরকারের নানা পদক্ষেপেও খাদ্যপণ্যের দামে লাগাম টানা যায়নি। বেড়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের শুরু থেকেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বছরের শেষ ভাগে এসে তা আরও বেড়েছে। সরকারের নানান পদক্ষেপেও খাদ্যপণ্যের দামে লাগাম টানা যায়নি। বেড়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য।

গত আগস্ট মাসে হঠাৎ খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কের ঘরে উঠে যায়, যা ছিল গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরের তিন মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশের ওপরে। অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে, খাদ্যের বাড়তি থাকা দাম বাংলাদেশের ৭১ শতাংশ পরিবারের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে এক বছর ধরেই খাদ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান। ওই প্রতিবেদনও বলেছে, বছরজুড়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, ভুটান ও নেপালে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের চেয়ে বেশ কম ছিল। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমাদের দেশে কোনো পণ্যের দাম বিশ্ববাজারে বাড়লে সেটা সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর করার একটি প্রবণতা থাকে ব্যবসায়ীদের, যেটা দাম কমার ক্ষেত্রে হয় না। এতে সাধারণ মানুষ বিশ্ববাজারের মূল্যবৃদ্ধির মাশুল দিলেও দাম কমার সুফল পান না। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো খাদ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সাল পুরোটা দ্রব্যমূল্যের অস্বস্তি নিয়ে কেটেছে। বিশেষত নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ে বছরজুড়েই নাকাল ছিল মানুষ। নিকট অতীতের কোনো একক বছরে পণ্যমূল্যে এতটা অস্থিতিশীলতা দেখেনি দেশবাসী। উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বগতিতে বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল নাভিশ্বাস অবস্থা। সীমিত আয়ের মানুষেরা পুরো বছরে সংসার চালাতে বিশেষত খাদ্য ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেয়েছে। অনেকে বাধ্য হয়ে খাওয়া-দাওয়া সীমিত করেছেন। খাদ্যপণ্য কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। অনেক পরিবার আকাশচুম্বী দামের কারণে বছরজুড়ে মাছ, গোস্ত, ডিম, দুধের চাহিদা মেটাতে পারেনি। বছরজুড়েই বাজারে জিনিসপত্রের দাম ছিল বেশ চড়া। কখনো ডিম, কখনো আবার পেঁয়াজ বা আলুর দাম বেড়েছে। শাক-সবজি, মাছ-গোশতের দামও ছিল সাধারণের নাগালের বাইরে। এছাড়া তেল, ডাল, চিনি, আটা ও ময়দার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও ছিল অস্বস্তিকর পর্যায়ে।

গত বছরের দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম)-এর বক্তব্য হচ্ছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, যা সব শ্রেণির মানুষের জন্যই আতঙ্কের। বাজারে গিয়ে বছরজুড়ে কেউ স্বস্তি পায়নি। সংস্থাটি আরো বলছে, গত এক বছরে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা তেমন একটা কাজে আসেনি। বেশকিছু পণ্য আমদানির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ছিল, কিন্তু তার সুফল মেলেনি। এছাড়া বছরের শেষে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতায় নিম্নবিত্তের উপার্জন কমেছে। এতে তাদের কষ্ট আরও বেড়েছে।

গত এক বছরে বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সামান্য কমেছে। তবে দাম বেড়েছে এমন পণ্যের তালিকাই দীর্ঘ। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নিয়মিত বাজার দরের হিসাব রাখে। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতির কোন উন্নয়ন নেই বরং বাজার পরিস্থিতির আরো বড় ধরনের অবনতিই ঘটেছে। বাজার চলছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ি ও সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। ফলে ইতোমধ্যেই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হতে শুরু করেছে। বাজারে যা হচ্ছে, সেটাকে ব্যবসা বলার কোন সুযোগ নেই। ভোক্তাকে জিম্মি করে ডাকাতি চলছে। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অনাকাক্সিক্ষত। বাজারে সুশাসনের ঘাটতির কারণেই সমস্যা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম নির্ধারণ করছেন, সরকারের কোনো বিধি-বিধানের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। মনে হয় সরকারই তাদের কাছে রীতিমত অসহায়। সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে শুধু চাল ও আটা-ময়দার দাম কমেছে। অন্যদিকে ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আলু, ডিমসহ মসলা, মাছ, গোস্তের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

বছরজুড়েই বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতিতে কিছুটা দুরবস্থা সৃষ্টি করেছে। বছরের শুরুতে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, ডলারের ঘাটতি, পণ্য ও কাঁচামাল আমদানিতে ডলার সংকট, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিসহ বেশকিছু কারণে দ্রব্যমূল্যের সরবরাহ সংকটও ছিল। তারপরও এ বছর গম, চিনি ও ভোজ্যতেলের মতো বিভিন্ন আমদানিভিত্তিক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে। কিন্তু ডলার সঙ্কট এবং জ্বালানির দাম বাড়ায় উচ্চতর আমদানি ব্যয়ের কারণে আমদানিকারকরা পণ্যের দাম কমায়নি। এতে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে এর সুফল পাননি ভোক্তারা। বরং বছরজুড়ে ওইসব সমস্যা পুঁজি করে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাজার সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। প্রকৃতপক্ষে যতটুকু দাম বাড়ার কথা তার চেয়ে কয়েকগুণ দাম বাড়িয়ে অবৈধ মুনাফা লুটেছে অতি মুনাফালোভীরা।

বছরের মাঝামাঝি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে পণ্যের উচ্চমূল্য শুধু বাহ্যিক বা আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে নয়। এর পেছনে আছে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের অভাব, বাজারের সিন্ডিকেট, প্রয়োজনীয় মনিটরিংয়ের অভাব ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা। মূলত, এজন্য বাজার প্রশাসনে সুশাসনের অভাবই দায়ী। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের কোন কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না।

এসব বিষয়ে ভোক্তা-অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, বাজারে যা হচ্ছে, সেটাকে ব্যবসা বলা যাবে না। ভোক্তাকে জিম্মি করে ডাকাতি চলছে। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। ক্যাবের ভাষায়, বাজারে সুশাসনের ঘাটতির কারণেই সমস্যা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম নির্ধারণ করছেন, সরকারের কোনো বিধি-বিধানের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। যেসব পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া হয়েছে সেগুলো কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। মাঝেমধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তর কিছু জরিমানা করছে। এতে ব্যবসায়ীদের টনক নড়ছে না। তাদের কিছু যায়-আসেও না।

মূলত, বাজারে সুশাসনের অভাবেই আমাদের দেশের মূল্য পরিস্থিতির ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। আবার বাজারে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির জন্য একশ্রেণির সরকার সংশ্লিষ্টরা দায়ী হওয়ার কারণে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না। ফলে মূল্যবৃদ্ধির কুশীলবরা অনেকটা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। অনেক সময় সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা অনেক চটকদার ও ছেলে ভোলানো কথা বললেও তা কথামালার ফুলঝুড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এমতাবস্থায় বাজারে সুশাসন ফিরিয়ে এনে বাজার ব্যবস্থাপনাকে জনবান্ধব করতে হলে সরকারকে গণমুখী ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাজারে নৈরাজ্যের কুশীলবদের বিরুদ্ধে প্রদর্শন করতে হবে শূন্য সহনশীলতা। অন্যথায় আগামী দিনে পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। যা কারো কাম্য নয়।

 

https://www.dailysangram.info/post/545836