৪ জানুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:০৩

তৃতীয় শ্রেণীর ইসলাম শিক্ষা বইয়ে দেব-দেবীর ছবি

 

- সাতক্ষীরা থেকে ফেরত নেয়া হয়েছে ৮১৫০ কপি বই
- স্যাবোটাস কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে : এনসিটিবি চেয়ারম্যান

বই বিতরণের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফেরত নেয়া হয়েছে তৃতীয় শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বই। সাতক্ষীরা জেলার এক হাজার ৯৪টি স্কুল থেকে আট হাজার ১৫০ কপি বই গত সোমবারই ফেরত নেয়া হয়েছে। ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের ভেতরের প্রচ্ছদে দেব-দেবীর ছবি থাকায় এই বই নিয়ে ইতোমধ্যে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বইয়ের ব্যবহৃত এই বিতর্কিত ছবি ছড়িয়ে পড়েছে।

এ দিকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, এ ধরনের ভুল হয়তো বাইন্ডিংয়ের সময়েই হয়েছে। তবে যেভাবেই ভুল হোক না কেন এটি অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে। অন্য দিকে ইসলাম ধর্মের বইয়ের ভেতরের প্রচ্ছদে হিন্দুদের দেব-দেবীর ছবি যুক্ত করে দেয়া কোনো স্যাবোটাস কি না সে বিষয়েও সতর্ক থেকে অনুসন্ধান করবে এনসিটিবি।

সূত্রমতে, বই উৎসবে বিতরণের কয়েক ঘণ্টা পরই সাতক্ষীরায় এক হাজার ৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইসলাম ধর্মের সব বই ফেরত নেয়া শুরু করেছে সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। গত ১ জানুয়ারি বই উৎসবের পরপরই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণকৃত ওই পাঠ্যবই ফেরত নেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দেন উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক কর্মকর্তারা। এর পর থেকে ওই পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের থেকে ফেরত নেয়া শুরু করেন শিক্ষকরা। তবে কেন এই পাঠ্যবই ফেরত নেয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি নন কেউ।

গত মঙ্গলবার সাতক্ষীরা শহরের টাউন সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ওই বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্মের সব বই জমা দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। যারা আসতে বা বই জমা দিতে দেরি করছে তাদেরকে মোবাইল ফোনে দ্রুত বই জমা দেয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।

বই জমা দিতে আসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বই বিতরণের পর স্ব স্ব ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা তাদের তৃতীয় শ্রেণীর বিতরণকৃত ইসলাম ধর্মের সব বই গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার ভেতরে ফেরত দেয়ার জন্য বলেন। এ জন্য তাৎক্ষণিকভাবে থেকে বই ফেরত নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে না এলেও শিক্ষকরা তাদের বাসাতে গিয়ে বই সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা কাজ করছি। কোনো কিছু জানার থাকলে তাদের কাছে শুনতে পারেন। এ ব্যাপারে আমরা কেউ কোনো কিছু জানি না। একই বক্তব্য অপর দুই সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও রবিউল ইসলামের। সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইসলাম ধর্মের আট হাজার ১৫০টি বই বিতরণ করা হয়েছিল। আর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের শিক্ষকদের কাছ থেকে বইগুলো সংগ্রহ করছে শিক্ষা অফিস। কর্মকর্তারা বলছেন, পরে এসব বইয়ের বিষয়ে যে নির্দেশনা আসবে তা পালন করা হবে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূঁইয়া চৌধুরী বলেন, প্রিন্টিং মিসটেকের কারণে বইগুলো তুলে নেয়া হচ্ছে। তবে সাতক্ষীরার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) হোসনে ইসায়মিন করিমী বলেন, সাতক্ষীরা জেলার সব উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ইসলাম ধর্মের সব বই শিক্ষার্থীদের থেকে ফেরত নেয়া হচ্ছে। বইতে কোনো ভুল আছে কি না, সেটা দেখার জন্য বই ফেরত নেয়া হচ্ছে। শুধু তৃতীয় শ্রেণীর ইসলাম ধর্মের বই কেন ফেরত নেয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু বলা সম্ভব না। বিষয়টি আমরা আপনাদের পরে জানাতে পারব।

সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্কুল থেকে বই ফেরত নেয়া প্রসঙ্গে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে বলেন, সাতক্ষীরায় তৃতীয় শ্রেণীর ইমলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের কিছু ভুল আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে। এখন পর্যন্ত অন্য কোনো জেলায় ভুলের বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। কিভাবে এমন ভুল হলো? এ প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, এটি ইচ্ছাকৃত ভুল নাকি অসৎ উদ্দেশ্যে সাবোটাস করা হয়েছে সেটিও সতর্কতার সাথে অনুসন্ধান করা হবে।
এখন এই ভুলের কিভাবে শোধরাবেন? এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিই আছে যে, কোনো ভুল ধরা পড়লে ১৫ দিনের মধ্যে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান নিজ খরচে আবার বই ছেপে দেবেন। আর এখানে অন্য কোনো বিষয় যদি থাকে তাহলে সে বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/803634