২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ৭:১৫

ডলার বিক্রি ও ধার করে তহবিল ঘাটতি সমন্বয়

একদিনে ২২ হাজার কোটি টাকা ধার দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ডলার বিক্রি ও ধার করে তহবিল ঘাটতি সমন্বয় -

দীর্ঘদিন ধরে কিছু ব্যাংকের তহবিল ঘাটতি চলছে। একপর্যায়ে এই ঘাটতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে সংরক্ষিত হিসেবেও ঋণাত্মক হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় তহবিল জোগান দিয়ে আসছিল। কিন্তু বিপত্তি বাধে বছরের শেষ প্রান্তে এসে হিসাব সমন্বয় নিয়ে। এ কারণে বিশেষ ব্যবস্থায় টাকার সংস্থান করে বছরের শেষ প্রান্তে তহবিল ঘাটতি সমন্বয় করেছে কিছু ব্যাংক। আর এ ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থায় বেশি দরে ডলার সংগ্রহ করে তা আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে কম দামে বিক্রি করা হয়েছে। পাশাপাশি রাষ্ট্র খাতের একটি ব্যাংক থেকে বেশি সুদে বড় অঙ্কের অর্থ ধার করা হয়েছে। সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মিত তহবিলের জোগান তো রয়েছেই। সব মিলেই সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলোর তহবিল ঘাটতি মেটাতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গতকাল সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর ধার দেয়ার বিশেষ উপকরণ যেমন, রেপো, বিশেষ রেপো ও বিশেষ তারল্য সুবিধার আওতায় গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ধার দেয়া হয়েছে। একই সাথে কলমানি মার্কেট থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১২ শতাংশ সুদে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ধার করেছে সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার কয়েকটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে প্রতি ডলার ১১০ টাকা দরে টাকা পরিশোধ করেছে। ডলার কিনে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে জোগান দেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। আর ওই অর্থই দিয়েই কিছু ব্যাংক তাদের তহবিল ঘাটতি সমন্বয় করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এর মধ্যে একটি ইসলামী ব্যাংক বিক্রি করেছে ২০০ মিলিয়ন ডলার। আবার ওই ব্যাংকটিই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে ধার করেছে এক হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রেমিট্যান্স ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় আহরণ করার কথা। কিন্তু কিছু ব্যাংক প্রতি ডলারে ১২০ টাকা থেকে ১২৩ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। আর বেশি দামে ডলার কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে ১১০ টাকা দরে। আর এভাবেই লোকসান গুনছে কিছু ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে বাধ্যতামূলক তহবিল সংরক্ষণ করতে গিয়ে হঠাৎ কোনো ব্যাংকের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তহবিল জোগান দিয়ে থাকে। আপদকালীন এ সঙ্কট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ উপকরণের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর সহায়তা করতে পারে। কিন্তু মাসের পর মাস তহবিল জোগান দেয়া যায় না। আর এ কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সামনে কঠোর অবস্থানে নিতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একাধিকবার ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। তহবিল ঘাটতি মেটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে ব্যাংকগুলোর বছরের শেষ প্রান্তের হিসেব সম্পন্ন করতে গতকাল ছিল শেষ দিন। আর এ কারণেই গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেকর্ড তহবিল জোগান দেয়া হয়েছে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার জোগান দেয়া হয়েছে। একই সাথে আন্তঃব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো ধার করেছে আরো প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। এজন্য সর্বোচ্চ সুদ গুনতে হয়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ। আর এভাবেই ব্যাংকগুলো তাদের বছরের শেষ দিন পার করেছে বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/802209