২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ৬:৫৫

নির্বাচন-নির্বাচন খেলা দেশকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দেবে

ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের আয়োজনে সাজানো নির্বাচন ২০২৪: অতীত নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা কী বলে’ শীর্ষক ওয়েবিনারে দেশের বিশিষ্টজনেরা বলেন, নির্বাচন-নির্বাচন খেলা দেশকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দেবে। যে ধারায় নির্বাচন চলে গেছে, এই প্রক্রিয়ায় এ দেশ কখনও আর সুষ্ঠু নির্বাচন পাবে না। আগামী ৭ জানুয়ারিও এমন হতে যাচ্ছে। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন কোনো নির্বাচনের সংজ্ঞায় পড়ে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের নামে নিজেদের স্বতন্ত্র প্রার্থী, ডামি প্রার্থী, অনুগত প্রার্থী আর কিংস পার্টি দাঁড় করানো হয়েছে। ভয়-ভীতি দেখিয়ে সরকার নির্বাচনে শতভাগ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছে। যতই উপস্থিতি দেখানো হোক কোনো মহলেই এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এই নির্বাচন দেশকে ভয়াবহ সংকটে ফেলবে। তাদের ভাষ্য, এই নির্বাচন-নির্বাচন খেলা দেশকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দেবে। যে ধারায় নির্বাচন চলে গেছে, এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ দেশ কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন পাবে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের উদ্যোগে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সাজানো নির্বাচন ২০২৪: অতীত নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা কী বলে’ শীর্ষক ওয়েবিনারে সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, ব্রতীর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শারমীন এস মুরশিদ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার অধ্যাপক মো. মাহমুদুল হাসান প্রমুখ। সাজানো নির্বাচন ২০২৪: অতীত নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা কী বলে শিরোনামে আয়োজিত সভায় বক্তারা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য বিকল্প খুঁজে বের করার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, বিশিষ্ট নাগরিক ও গণমাধ্যমও কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে এ নির্বাচন ঠেকানো দরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ছাত্রদের মধ্যে এখন বিরাজনীতিকরণ চলছে। আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দেখা যেত, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন জয়ী হতো না। অন্তত এতটুকু গণতান্ত্রিক ছিল প্রতিষ্ঠান। এখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেট্রোরেলে চড়াকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। পরিকল্পিতভাবে নিরপেক্ষতাকে ধ্বংস করা হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ৭ জানুয়ারি যে কর্মকা- হবে, সেটাকে নির্বাচন বলা যায় না। একটি দল তাদের বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন-নির্বাচন খেলা খেলছে। এই নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন কৌশল নেয়া হয়েছে। নিজেদের পছন্দমতো লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে প্রবল দলীয়করণ হয়েছে। অসাংবিধানিকভাবে সংবিধান সংশোধন করে দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সামাজিক ভাতা কার্ড নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ভয়ের সংস্কৃতি দেখা দিয়েছে। সামাজিক নেতৃত্বের সংকট চলছে। নাগরিক সমাজকেও খুব বেশি প্রতিবাদ করতে দেখা যাচ্ছে না। অন্যায় সহ্য করতে করতে অনাচার এই পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। নির্বাচনের নামে যা হচ্ছে, তা একতরফা ও জবরদস্তিমূলক। এটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নয়। একটা অংশকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হতে পারে না। সোহরাব হাসান বলেন, সমস্যা সমাধানে বিকল্প খুঁজে বের করা দরকার। 

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নাগরিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে সোহরাব হাসান বলেন, ভয়ের সংস্কৃতি দেখা দিয়েছে। সামাজিক নেতৃত্বের সংকট চলছে। সমস্যা সমাধানে বিকল্প খুঁজে বের করা দরকার। যাতে পরের প্রজন্ম সেই সুফল পায়। তার মতে, গণতন্ত্রের ন্যূনতম শর্তগুলো পূরণ করতে না পারলে নির্বাচনের কারিগরি সমস্যা দূর করে লাভ হবে না।

ব্রতীর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শারমীন এস মুরশিদ বলেন, দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, তাদের বিভিন্ন দলের মুখপাত্র হিসেবে তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়। তার সংস্থাকে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে দেয়া হয়নি। এখন নামসর্বস্ব পর্যবেক্ষকদের দিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করানো হয়। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনেরা সত্যের সম্মুখীন হতে চান না। যে ধারায় নির্বাচন চলে গেছে, এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ দেশ কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন পাবে না। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের ভবিষ্যৎও অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, আগের জাতীয় নির্বাচন ত্রুটিমুক্ত না হলেও এখনকার চেয়ে ভালো ছিল। তিনি বলেন, নানা প্রশ্ন উঠছে যে বাংলাদেশ কি স্বাধীন, সার্বভৌম, শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকবে? দেশকে কি উত্তর কোরিয়া, সিরিয়ার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে? ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য যদি দেশকে যেকোনো দিকে ঠেলে দেয়া হয়, তাহলে তা খারাপ পরিণতি ডেকে আনবে। সমাপনী বক্তব্যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউএসের বাংলাদেশ ও পাকিস্তান বিশেষজ্ঞ (কান্ট্রি স্পেশালিস্ট) সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচন ত্রুটিমুক্ত না হলেও এখনকার চেয়ে ভালো ছিল। নানা প্রশ্ন উঠছে যে বাংলাদেশ কি স্বাধীন, সার্বভৌম, শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকবে? দেশকে কি উত্তর কোরিয়া, সিরিয়ার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে? ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য যদি দেশকে যেকোনো দিকে ঠেলে দেওয়া হয়, তাহলে তা খারাপ পরিণতি ডেকে আনবে।

https://www.dailysangram.info/post/544556