২১ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১১:১৫

ডলার এনডোর্সমেন্টে অনীহা দেখাচ্ছে অনেক ব্যাংক

 

বছর শেষে এখন অনেকে দেশের বাইরে ভ্রমণে যাচ্ছেন। ওমরাহ করতে যাওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে। আবার দর বাড়তি থাকায় অনেকেই নগদ ডলার কিনে ঘরে রেখেছেন। এতে করে নগদ ডলারের চাহিদা এখন তুলনামূলক বেশি। এ অবস্থায় বিদেশে যেতে পাসপোর্টে ডলার এনডোর্সমেন্টে অনীহা দেখাচ্ছে অনেক ব্যাংক। নিরুৎসাহিত করতে ৩ শতাংশ পর্যন্ত সার্ভিস চার্জ নিচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংক। এর পরও তদবির ছাড়া ব্যাংকে ডলার মিলছে না। এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে ঘুরে না পেয়ে বেশি দর দিয়ে খোলাবাজার থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে। মানি চেঞ্জারগুলোতেও অনেক সময় মিলছে না ডলার। পাওয়া গেলেও দর অনেক বাড়তি।

ব্যাংকাররা জানান, দেশের বাইরে যাওয়ার সময় এনডোর্সমেন্টের জন্য বেশির ভাগই আসেন ব্যাংকে। আর বাইরে থেকে ফিরে এসে বেশি দর পাওয়ার আশায় বিক্রি করেন খোলাবাজার কিংবা মানি চেঞ্জারে। ফিরে এসে বেশি দরে বিক্রি করতে পারবেন এমন আশায় কেউ কেউ বিদেশে যাওয়ার সময় প্রয়োজনের বেশি ডলার কিনে নিয়ে যান। এতে ব্যাংকে নগদ ডলারের সংকট রয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি অনেক জোরদার করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো ডলার এনডোর্সমেন্টে এখন অনেক সতর্ক। গ্রাহকদের বলা হচ্ছে, ডলার নেই কিংবা নিরুৎসাহিত করতে আগের চেয়ে বাড়তি চার্জ আরোপ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সামনে নির্বাচনসহ নানা কারণে অনেকে নগদ ডলার কিনে ঘরে রেখেছে। ধরে রাখা ডলার ব্যাংকে ফেরাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশ ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে বৈদেশিক মুদ্রায় খোলা আরএফসিডি হিসেবে ডলার রাখলে ৭ শতাংশের বেশি সুদ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একজন ব্যক্তি বিদেশ ভ্রমণে যাওয়ার সময় যত কম ডলারই নিয়ে যাক, দেশে ফিরে আরএফসিডি হিসেবে ১০ হাজার ডলার জমা রেখে এই সুদ পাবেন। আবার প্রবাসী বাংলাদেশির সুবিধাভোগীও বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খুলে ডলার জমা রেখে একই সুদ পাবে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, ডিসেম্বরে স্কুল-কলেজ বন্ধের কারণে অনেকেই দেশের বাইরে ভ্রমণে যান। আবার এখন ওমরাহ করতে যাচ্ছেন অনেকে। এতে করে নগদ ডলারের চাহিদা বেড়েছে। তবে বড় ধরনের কোনো সংকটের বিষয় তিনি শোনেননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর কাছে এখন নগদে রয়েছে প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। কয়েক মাস ধরে নগদ ডলারের পরিমাণ এ রকমই রয়েছে। এর আগে অনেক সময় ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ ডলারের পরিমাণ ছিল তিন কোটির ওপরে। অবশ্য চরম সংকটের কারণে গত বছর ব্যাংকের কাছে থাকা এক কোটি ডলারের নিচে নেমেছিল।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, খোলাবাজারে এখন ১২২ থেকে ১২৩ টাকায় ডলার বেচাকেনা হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে একই দরে বেচাকেনা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে মানি চেঞ্জারগুলো কেনার দর ১১৩ টাকা এবং বিক্রি ১১৪ টাকা ৫০ পয়সা ঘোষণা করছে। অবশ্য ঘোষিত দরে ডলার পাওয়া দুষ্কর। আর ব্যাংকগুলো ১১৩ টাকায় ডলার কিনে বিক্রি করছে ১১৪ টাকা। তবে বেসরকারি খাতের বেশির ভাগ ব্যাংক এনডোর্সমেন্টের জন্য ৩ শতাংশ সার্ভিস চার্জ এবং তার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট কাটে। এতে করে ডলারের দর পড়ে যায় ১১৭ টাকার ওপরে।

মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এ কে এম ইসমাইল হক সমকালকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ডলারের দর স্থিতিশীল আছে। বিশেষ করে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার পর বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। এখন ঘোষিত দর ১১৩ টাকায় কিনে এর সঙ্গে দেড় টাকা যোগ করে বিক্রি করা যাবে।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ডলারের দর ঘোষণা করে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদা এবং ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি। সংকটের মধ্যেই সর্বশেষ তিন দফায় প্রতি ডলারে ১ টাকা কমিয়ে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা এবং আমদানিতে ১১০ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও অনেক ব্যাংক বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ১২০ থেকে ১২২ টাকা দরে ডলার কিনছে। আমদানিতে ১২৫ টাকা পর্যন্ত দর নিচ্ছে। এর মানে ঘোষিত দর অকার্যকর। তবে বাজারে নতুন করে কোনো অস্থিরতা নেই।

নির্বাচনের পর ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে নতুন ব্যবস্থায় যাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি দর ঘোষণা করে তার সঙ্গে সর্বোচ্চ কত শতাংশ ওঠানামা করবে, তা ঠিক করা হবে। আইএমএফের পরামর্শ নতুন এ ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ শুরু করেছে। তবে পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে না।

https://www.samakal.com/economics/article/213972