৯ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:১৩

বায়ু দূষণ ঠেকাতে কয়লা ব্যবহারের বিকল্প ভাবছে চীন

বায়ু দূষণে বিশ্বের যে শহরের অবস্থান সবচেয়ে খারাপ চীনের বেইজিং তার মধ্যে অন্যতম। বৃহস্পতিবার থেকে ধুলোঝড় ও ধোয়াশা মিলে সেখানে অবস্থা আরও দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এ শহরের দূষণের মাত্রা মানুষের শরীরের সহ্য ক্ষমতার অনেক উপরে। কয়েক দিন যাবৎ শহরের বাসিন্ধাদেরকে যতটা সম্ভব কম ঘর থেকে বের হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে শহর কর্তৃপক্ষ।
দূষণের ফলে নানাভাবে প্রভাবিত হচ্ছে শহরের মানুষের জীবনযাত্রা ও স্বাস্থ্য। গত কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশা যেন ঢেকে রেখেছে বেইজিং শহরকে। জানালা দিয়ে তাকালে খুব বেশি দূর দেখা যায় না। কিন্তু এই শহরের বাসিন্ধারা জানেন এটি কোন কুয়াশা নয়।
বেইজিংয়ে দূষণ নতুন কিছু নয়। কিন্তু গত কয়েক দিন হল সেটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে গত কয়েক দিনে পাশের দেশ মঙ্গোলিয়া থেকে উড়ে আসা ধুলো এবারের সংকটের কারণ। শহরের রাস্তায় যারা নামছেন তাদের বেশিরভাগকেই দেখা যাচ্ছে মুখোশ ব্যবহার করতে। শহরের এক বাসিন্ধা বলেন, ‘আজ সকালে খুব খারাপ এক একটা ধুলো ঝড় হল। আকাশের রং ছিল রীতিমত হলুদ। খুবই অদ্ভুদ লাগল সেই রং’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে বাতাসে ধুলোর কণা প্রতি কিউবিক মিটারে সর্বোচ্চ ২৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত সহ্য করার ক্ষমতা রাখে মানব দেহ। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ে সেটা উঠে গিয়েছিল ৫শ’ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত।
শহরের ২ কোটি ২০ লাখ মানুষকে বাড়ির বাইরে যতটা সম্ভব কম যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। শিশু ও বয়স্কদের বলা হচ্ছে বাড়ির ভেতরে অবস্থান করার জন্যে। তবুও যারা জীবিকার জন্য বাড়ির বাইরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার কথা বলছেন।
শহরের অপর এক বাসিন্ধা বলেন, ‘আমি বেইজিং-এ বেড়ে উঠেছি। কিন্তু এরকম ধুলোঝড় আর ধোয়াশার মিশ্রণ আগে কথনও দেখিনি। আমার রীতিমত শারীরিকভাবে অসুস্থ্য লাগে। গত ১৫ দিন ধরে আমার কাশি এবং গলা ব্যাথা। আমার মনে হয় এজন্য দূষণই দায়ী’।
দেশটির উত্তর প্রদেশগুলোয় এই বায়ু দূষণে আক্রান্ত হয়েছে। বিশেষ করে ইনার মঙ্গোলিয়া। কিন্তু তার পরেও দৈনন্দিন জীবনের কর্মকা- বন্ধ রাখা যায় না।
এক নারী বাসিন্ধা বলেন, ‘এখানে যারা কাজ করে তাদের এই খারাপ আবহাওয়ায় অভ্যস্থ হতে হয়। স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। সারাদিন মুখোশ পড়ে থাকা সম্ভব নয়। ঘরে বায়ু বিশুদ্ধকরণ যে যন্ত্র আছে আমার মনে হয় সেটা তেমন একটা কাজ করছে বলে মনে হয় না। এই শহরেই বাস করা মুশকিল হয়ে পড়েছে’।
এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হচ্ছে দেশটিতে কয়লার ব্যবহার। সেইসাথে শহরের পরিধি ধীরে ধীরে মরুভূমির দিকে এগুতে থাকাও একটি অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। যদিও বায়ু দূষণ ঠেকাতে গত কয়েক বছর হল বেশি করে গাছ লাগানো এবং কয়লা ব্যবহারকারী কল কারখানায় বিকল্প ব্যবস্থার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ততদিনে সম্ভবত যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে।

http://www.dailysangram.com/post/283035-