৮ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ৪:৩২

নতুন আলু পেঁয়াজ উঠলেও দাম চড়া, বেড়েছে ডিমের দাম

নতুন আলু ও পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে, কিন্তু দাম এখনো বেশ চড়া। সঙ্গে বেড়েছে ডিমের দামও। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আলুর দাম কেজিতে পাঁচ টাকা এবং ফার্মের ডিম হালিতে পাঁচ টাকা ও ডজনে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

নতুন করে দাম বাড়ার জন্য চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ সংকটের অজুহাত দিচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে আলু ও পেঁয়াজের আমদানি কমে যাওয়ার কারণে সরবরাহের কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। এর ফলে এই দুটি পণ্যের দাম নতুন করে বেড়েছে। খুচরা বাজারে দাম বেড়ে দেশি পেঁয়াজ কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আলুর দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে নতুন আসা আলুর কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। নতুন পেঁয়াজপাতাসহ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। ফার্মের ডিম হালি পাঁচ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকায় এবং ডজনপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজির দামে তেমন কোনো পরিবর্তন নেই, আগের সপ্তাহের দামই অপরিবর্তিত রয়েছে। কয়েক সপ্তাহ পর বাজারে প্যাকেট চিনির সরবরাহ দেখা গেছে। প্যাকেটজাত চিনি কেজি ১৪৮ টাকা এবং খোলা চিনি কেজি ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজ ও আলু আসা শুরু হয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজারে পণ্য দুটির সরবরাহ ব্যাপকভাবে বাড়বে। এতে দাম কমে আসবে।

এ কারণে আমদানিকারকরা পেঁয়াজ ও আলুর আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। আমদানি করে কেউ এখন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। এর ফলে বাজারে পণ্য দুটির সরবরাহে কিছুটা সংকট দেখা দেওয়ার কারণে দাম বাড়ছে। বাজারে নতুন পেঁয়াজ ও আলুর ব্যাপক সরবরাহ শুরু হলে আবার দাম কমে আসবে বলেও তাঁরা জানান।

টিসিবির গতকালের বাজারদরের তালিকায়ও আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বাড়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে হঠাৎ পেঁয়াজ ও আলুর দাম বাড়তে শুরু হয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার আলু ও পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়। ব্যাপকভাবে এই দুটি পণ্য আমদানি করার পরও বাজারে তার বড় কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আবুল খায়ের বলেন, ‘পেঁয়াজের আমদানি কমে যাওয়ার কারণে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। তাই নতুন করে দাম বেড়েছে। এখন দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) ৬২৫ থেকে ৬৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতের পেঁয়াজ পাল্লায় ৫২৫ থেকে ৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করলেও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ খুবই কম। তবে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যেই বাজারে ব্যাপক হারে নতুন পেঁয়াজ চলে আসবে। এ কারণে আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। এখন আমদানি করে কেউ ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। কারণ নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলে প্রতি কেজির দাম ৬০ টাকায় চলে আসবে।’

হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সভাপতি হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো আমাদের চাহিদা অনুযায়ী এলসি দিচ্ছে না। এ কারণে চাহিদার অর্ধেক পণ্য আমরা আমদানি করতে পারছি। ২০ গাড়ি পণ্যের চাহিদা থাকলে আমরা আমদানি করতে পারছি মাত্র ১০ গাড়ি। এসব কারণে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে কিছুটা সংকট চলছে। তবে কয়েক দিন পরই দেশের বাজারে নতুন পেঁয়াজ চলে আসবে, তখন আমদানি করা পেঁয়াজের চাহিদাও কমে যাবে। তখন দামও ক্রেতার নাগালে চলে আসবে।’

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘হিমাগারগুলোতে আলু প্রায় শেষের দিকে। কোথাও কোথাও ৫ শতাংশের মতো আলু আছে। এগুলো দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজারে চলে আসবে। এর মধ্যে বাজারে নতুন আলুও চলে আসবে। নতুন আলুর সরবরাহ বাড়লে দামও কমে আসবে।’

৬৫০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস

জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আগামী এক মাস গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত বুধবার বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) ও মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই দাম কার্যকরের প্রতিশ্রুতি থাকলেও রাজধানীর বাড্ডা, জোয়ারসাহারা বাজারসহ বেশ কিছু বাজারে এখনো ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে কারওয়ান বাজার, শুক্রাবাদ বাজারসহ কয়েকটি বাজারে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

https://www.kalerkantho.com/online/national/2023/12/08/1343609