৮ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ৩:৫৮

স্বল্পমেয়াদি বিদেশী ঋণে বাড়ছে ঝুঁকি

- প্রকৃত রিজার্ভ ১৯ বিলিয়নের ঘরে

 

 

স্বল্পমেয়াদি ঋণে বৈদেশিক মুদ্রার দায় পরিশোধে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। একদিকে প্রতি মাসেই রিজার্ভ কমছে গড়ে এক বিলিয়ন ডলারের ওপরে। গত চার মাসে প্রকৃত রিজার্ভ সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার কমে নেমেছে ১৯.১৩ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী স্বল্পমেয়াদি ঋণ আগামী এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে ১৬ বিলিয়ন ডলার। যেভাবে প্রতি মাসে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে এতে সামনে বৈদেশিক মুদ্রার দায় পরিশোধ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সূত্র জানিয়েছে, বাজেট ঘাটতি মেটাতে শুধু সরকার বৈদেশিক ঋণ নিতো। এর মধ্যে কিছু ঋণ ছিল স্বল্প মেয়াদে অর্থাৎ এক বছরের জন্য। আর বেশির ভাগ বিদেশী ঋণই ছিল দীর্ঘ মেয়াদে। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে ব্যাপক মাত্রায় বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ নেয়া শুরু হয়। তখন, স্থানীয় ব্যাংকে টাকার সঙ্কট ছিল। ছিল ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদ। ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিদেশী ঋণ নেয়ার জন্য কিছুটা শিথিলতা আনে। কারণ তখন বিদেশী ঋণের সুদ ছিল স্থানীয় ব্যাংকের চেয়ে অনেক কম। আর এ সুযোগে বেসরকারি উদ্যোক্তারা ব্যাপক ভিত্তিতে বিদেশী ঋণ আনতে থাকে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক তদন্তে এসব বিদেশী ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। পরবর্তীতে স্থানীয় ব্যাংকে সুদহার কমে এলেও ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ বিদেশী ঋণ নেয়া থামাননি। বরং সমানতালে বিদেশী ঋণ নেয়া হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়ে। কারণ, ব্যবসায়ী দীর্ঘমেয়াদি বিদেশী ঋণের চেয়ে স্বল্পমেয়াদি বেশি ঋণ নেয়া হয়। এখানেই বাধে বিপত্তি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত জুন শেষে দেশে বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ দাঁড়িয়েছ ২২ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ১৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলারই স্বল্পমেয়াদি। অর্থাৎ মোট ঋণের ৬১ শতাংশই স্বল্পমেয়াদি। আর এ স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়া হয় এক বছরের জন্য। বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে। অথচ আলোচ্য সময়ে এসে সরকারের বিদেশী ঋণের স্বল্পমেয়াদি ঋণ ২ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন, যেখানে সরকারের মোট বিদেশী ঋণ ৭৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার।

বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়ে যাওয়ার পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০১৬ সালে যেখানে স্বল্পমেয়াদি বিদেশী ঋণ ছিল ৬ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার, সেখানে গত জুন শেষে এসে হয়েছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় দিয়ে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ হচ্ছে, তা দিয়ে চলতি আমদানি ব্যয় কোনো ভাবে মেটানো যাচ্ছে। কিন্তু বকেয়া এলসির দায়, বিদেশী ঋণ পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এটা পরিশোধ করা হচ্ছে রিজার্ভ থেকে অর্থ নিয়ে। আর এ কারণেই প্রতি মাসেই গড়ে এক বিলিয়ন ডলারের ওপরে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ১২ জুলাই দেশে প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার, যা গত ৭ ডিসেম্বর কমে হয়েছে ১৯ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসেবে আরো কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রদর্শিত হিসাবেই চার মাসের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার, যা গড়ে প্রতি মাসে এক বিলিয়ন ডলারের ওপরে।

প্রতি মাসেই যেখানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে, তখন উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে এই স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, জুন শেষে প্রায় ১৬ বিলিয়ন দাঁড়িয়েছে এ ঋণ। তবে নভেম্বর শেষে তা ২০ বিলিয়ন ডলার ছেড়ে গেছে। এ অর্থের বড় একটি অংশ রয়েছে জ্বালানি তেল আমদানি ব্যয়। অপরদিকে রয়েছে, বকেয়া এলসির দায়, যা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এখন এসব ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভ আরো কমে যাবে। এতে আপৎকালীন ব্যয় মেটানোর জন্য বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ কঠিন হয়ে পড়বে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিষয়টি এখনই আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/797208