৩ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার, ৯:২২

শ্রমিক অধিকার বিষয়ে সতর্ক না হলে বিপদের শঙ্কা

 

ড. জাহিদ হোসেন, ফারুক হাসান, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও মাহবুবুল আলমবিশ্বব্যাপী শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেনশিয়াল মেমোরেন্ডামের ঘোষণা দেওয়ার সময় উদাহরণ টানা হয় বাংলাদেশের। এর কয়েক দিনের মধ্যে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস সতর্ক করেছে যে মার্কিন নীতির লক্ষ্য হতে পারে বাংলাদেশ। এর পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়ে দিয়েছে, তাদের ভূখণ্ডে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত অগ্রাধিকার সুবিধা বা জিএসপি অব্যাহত রাখতে চাইলে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে গুরুত্ব দিতে হবে বাংলাদেশকে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর পরপর এসব বাংলাদেশের রপ্তানি খাত ও সার্বিক অর্থনীতির জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। এসব বার্তাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তাঁরা।

অর্থনীতিবিদদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের শ্রম আইন ও শ্রমিকের অধিকার নিয়ে যেসব বিষয় সামনে নিয়ে আসছে, সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। সমাধানে ব্যর্থ হলে বাণিজ্য-সুবিধা স্থগিত হওয়াসহ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে সার্বিক অর্থনীতিতে।

ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কারও কথার ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেবে না। শ্রমিকের অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন এবং ওই দেশগুলোর নিজস্ব পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে একটি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশগুলো ব্যবস্থা নেবে। পশ্চিমারা শুল্কারোপ ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো ব্যবস্থা নিয়ে ফেললে পরিস্থিতি সহজ থাকবে না।’

গত ১৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের প্রকাশ করা শ্রমিকের অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মেমোরেন্ডামকে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ মিশনের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের স্মারকটি একটি বৈশ্বিক নীতি। তারপরও এটা বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে বাংলাদেশ এই নীতির লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। শ্রম অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে এমনটি যুক্তরাষ্ট্র মনে করলে বা বিশ্বাস করলে এই নীতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আরোপ করার সুযোগ রয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিকের অধিকার নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের মেমোরেন্ডাম ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল্যায়ন নিয়ে আগামীকাল ৪ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সভার আয়োজন করা হয়েছে। বৈঠকে এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট, বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতা, শিল্পমালিক, শ্রমিক প্রতিনিধি ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছে। 
শ্রম আইন ও শ্রমিকের অধিকার ইস্যুতে জিএসপি প্রত্যাহার হওয়ার যে ঝুঁকির কথা ইইউ বলছে, সেটার ব্যাপারে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘শ্রমিকের অধিকারের বিষয়ে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। সামনের দিনগুলোতে আমাদের আরও কাজ করার সুযোগ আছে।’

তবে শ্রমিকের অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ যেসব বিষয় সামনে নিয়ে আসছে, সেখানে শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি রাজনৈতিক বিষয়ও জড়িত থাকতে পারে বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা। তাঁদের মতে, এ জন্য দায়ী দেশে চলমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা। শ্রমিকের সম্মানজনক মজুরি হার নির্ধারণ, তাঁদের আইনি সুরক্ষা ও ইপিজেডে শ্রমিক সংগঠন করার মতো যে বিষয়গুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ তুলছে, সেগুলোর দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

অর্থনীতিবিষয়ক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শ্রম ইস্যুতে বাংলাদেশ তাদের রাডারের মধ্যেই আছে। এখানে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নাই। এই বিষয়গুলো সমাধান করা না হলে দেশ বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার মতো পরিস্থিতির শিকার হতে পারে।’

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকের অধিকার নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ তোলে যুক্তরাষ্ট্রসহ বাণিজ্যিক সহযোগী দেশগুলো। এই খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলনের সময় পুলিশ যে তাঁদের ওপর বল প্রয়োগ করে, তা ফুটে উঠেছে আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে। অন্যদিকে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন, ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধি নির্বাচন এবং অবাধে ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম চালানোর অধিকারের আইনি বাধা আছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা প্রতিনিয়ত ইইউ প্রতিনিধির সঙ্গে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে ফারুক হাসান বলেন, ‘শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষা করতে গিয়ে আমাদের এটাও খেয়াল রাখতে হবে, যাতে কারখানাগুলো বন্ধ না হয়ে যায়। শ্রম আইন ও শ্রমিকের অধিকার যাতে দুই পক্ষের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

 

https://www.ajkerpatrika.com/306060