২ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৩:০৭

পাহাড়ে এখনও অনেক গ্রুপের কাছে অস্ত্র

 

রাঙামাটির নানিয়ার তইন্নাছড়ি এলাকায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। জব্দ অস্ত্রের মধ্যে ছিল এসএমজি, চায়নিজ রাইফেল, এইচই এমজি বোমা ও তিনটি ম্যাগাজিন। এ ছাড়া ১৪১ রাউন্ড এসএমজির গুলি এবং ২৭ রাউন্ড রাইফেলের গুলিও ছিল। এর আগে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার নোয়াপতং এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছিল সেনাবাহিনী। সে অভিযানেও বিপুল অস্ত্র ও গোরাবারুদ উদ্ধার হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় এভাবে প্রায়ই অভিযান চালিয়ে সেনাবাহিনী নানা ধরনের অস্ত্র উদ্ধার করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৬ বছর কেটে গেলেও এখনও পাহাড়ে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপ সক্রিয়। 

এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ছাড়াও পাহাড়ে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে এসব অস্ত্র গ্রুপগুলো ব্যবহার করছে। বছরে তিন পার্বত্য জেলায় চাঁদাবাজির পরিমাণ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।

চুক্তির আগে ও পরের বর্তমান অবস্থা নিয়ে খোলামেলা কথা বললেন এক সময় পাহাড়ের একটি সশস্ত্র গ্রুপের সদস্য শুভ মঙ্গল চাকমা ওরফে সুদর্শী চাকমা। প্রীতি কুমার চাকমা গ্রুপের সিনিয়র কমান্ডার ছিলেন শুভ মঙ্গল। পরে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেন। শুভ বলেন, ‘পাহাড়ে এখনও চাঁদাবাজি হচ্ছে। আমরা যখন সশস্ত্র গ্রুপে ছিলাম তখন গ্রামে গিয়ে নগদ টাকা, ধান-চাল ও নানা ধরনের জিনিসপত্র চাঁদা তুলতাম। এসব দিয়ে দল চলত। সবার কাছে অস্ত্র ছিল। এখনও অনেকের কাছে হাতিয়ার রয়ে গেছে। যাদের কাছে হাতিয়ার আছে তারা তো চাঁদাবাজি করবেই। গ্রুপ সক্রিয় রাখতে চাঁদা তুলতে হয়। নতুন কিছু গ্রুপের কথাও এখন শোনা যাচ্ছে। অনেকের হাতে দেখি উন্নত সব অস্ত্র। এসব তারা কোথায় পায়?’ 

পাহাড়ে শান্তি আনতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে হবে উল্লেখ করে শুভ বলেন, ‘শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ে আগের তুলনায় অনেক কিছুতে পরিবর্তন এসেছে। এখন দরকার কিছু শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা করে সবাইকে কর্মমুখী করা। যারা অস্ত্র ফেলে শান্তির পথে এসেছে, সবার পরিবার ভালো নেই। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে পার্বত্য এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সুখের আবহ আরও বিস্তৃত করা যেতে পারে।’  

পার্বত্য এলাকা ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সশস্ত্র গ্রুপের যারা আত্মসমর্পণ করেছিলেন, তাদের আয়রোজগার বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। খাগড়াছড়ি শহরের 

চালবাজার সড়কে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওই ভবন ভাড়া দিয়ে যে টাকা আসবে তা ব্যয় হবে যারা অস্ত্র ফেলে শান্তির পথে ফেরত এসেছেন এমন পরিবারের পুনর্বাসনে। চালবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শহরের গুরুত্বপূর্ণ ওই এলাকায় নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে।  

স্থানীয়রা বলছেন, আঞ্চলিক সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের কারণে মাঝে মাঝে পার্বত্য জেলাগুলোতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এখনও পার্বত্য এলাকা থেকে কাঠ পরিবহনকারী প্রতিটি ট্রাককে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা, বাঁশের ট্রাক দেড় হাজার টাকা, কলার ট্রাককে ১ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। অন্য পণ্যবাহী ট্রাককে দিতে হয় ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। নৌকার মাঝিদেরও গুনতে হয় নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ। আবার বিভিন্ন জেলা থেকে যেসব গাড়ি পার্বত্য এলাকায় ঢোকে, তাদেরও বখরা দিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। বছরে তিন পার্বত্য এলাকায় গড়ে ৬০০-৭০০ কোটি টাকা চাঁদা তোলে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপ। বর্তমানে পাহাড়ে সক্রিয় সংগঠনের মধ্যে আছে– জেএসএস (মূল), জেএসএস (সংস্কার), ইউপিডিএফ (মূল) ও ইউপিডিএফ (ডেমোক্রেটিক)-সহ অন্যান্য গ্রুপ। সম্প্রতি নতুন আতঙ্ক হয়ে উঠেছে কুকি চিন নামে আরেকটি সশস্ত্র গ্রুপ।  

খাগড়াছড়ির এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ‘পাহাড়ে চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করা যাবে না। এই ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এক সময় পার্বত্য এলাকায় ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত ছিল।  উন্নয়নের দিক থেকেও এই এলাকা অনেক পিছিয়ে ছিল। এখন সে অবস্থার বদল হচ্ছে।’ 

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। চাঁদাবাজি-অপহরণসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে সবাইকে নিয়ে কাজ করা হয়।

 

https://www.samakal.com/whole-country/article/210604