২ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৩:০৬

প্রশান্তির যাদুকাটা এখন মন খারাপের নদী

যাদুকাটা নদী : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদী। নদীতে কিলবিল করছে ড্রেজার আর সেইভ মেশিন। তুলছে বালু-পাথর। কাটছে নদীর পার, বসতভিটা, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট। হুমকিতে ২০ হাওর, শিমুলবাগান ও মৈত্রী সেতু। বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগটিয়া বড়টেক এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রতিদিন অন্তত ৮০টি ড্রেজার এবং ৪০০টির বেশি সেইভ মেশিন খুবলে নিচ্ছে নদীর পার, তীরবর্তী ফসলি জমি, গোচারণভূমি, বাড়ির আঙিনা। উত্তোলন করা হচ্ছে বালু-পাথর। পরিবেশবাদীদের চাপে ইজারাদারকে নোটিশ পাঠিয়ে স্থানীয় প্রশাসন আপাতত চুপচাপ আছে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, যাদুকাটা নদীর এই ধ্বংসযজ্ঞ গোটা হাওরাঞ্চলের পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠছে।

যাদুকাটার বর্তমান ইজারাদারদের একজন জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মনজুর খন্দকার। আরেকজন বিএনপির কর্মী রতন মিয়া। তাঁদের এই রাজনৈতিক সমঝোতার কাছে হার মেনেছে স্থানীয় মানুষের স্বর ও স্বার্থ। আর প্রশাসন? প্রস্তাব গ্রহণ, নোটিশ জারি করে বলেছে, ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় থেকে উৎপত্তি যাদুকাটা নদীর। এটি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বারেকটিলা ও লাউড়েরগড় এলাকার মাঝ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, যাদুকাটা নদীর দৈর্ঘ্য পাঁচ কিলোমিটার আর গড় প্রস্থ ৫৭ মিটার (১৮৭ ফুট)। উপজেলা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক বছর ধরে পার কাটতে কাটতে এখন এই নদীর গড় প্রস্থ এক কিলোমিটারের বেশি।

সম্প্রতি যাদুকাটা নদীর বাদাঘাট ইউনিয়নের বড়টেক ও আদর্শগ্রাম এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে যে দৃশ্য দেখা গেছে, তা লিখে প্রকাশ করা কঠিন। দুপুর ১২টায় মনে হয়েছে, নদীর বুকজুড়ে ড্রেজার আর সেইভ মেশিন কিলবিল করছে। বিকট শব্দে সেইভ মেশিন আর ড্রেজার দিয়ে চলছে ঘাগটিয়া বড়টেক মাঠ কেটে বালু উত্তোলন। ঘাগটিয়া আদর্শগ্রাম ও জালরটেক গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির সামনে থেকে নদীর পার কেটে বালু-পাথর তুলে নৌকা বোঝাই করা হচ্ছে। পারকাটা মহাজন ও ড্রেজার মালিকদের বেতনভুক্ত কর্মচারীরা দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করছেন।

সেখানে ছবি তোলা বা এ নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র ও ইজারাদারদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, ইজারাদাররা নদীতে ৮০টি ড্রেজার চালাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রতিদিন চার শর মতো সেইভ (শ্যালো ইঞ্জিনচালিত পাথর-বালু উত্তোলনের যন্ত্র) মেশিন চলে। এক জোড়া ড্রেজার থেকে ইজারাদার প্রতিদিন ৪০ হাজার টাকা পান। এই হিসাবে শুধু ৪০ জোড়া (৮০টি) ড্রেজার থেকেই ইজারাদারদের দৈনিক আয় ১৬ লাখ টাকা। মাসে চার কোটি ৮০ লাখ টাকা। আর সেইভ মেশিনে বালু-পাথর উত্তোলনের জন্য নদীপারের জায়গা যিনি দখল করে দেন, তিনি পান দিনে ৭০০ টাকা। মাসে ২১ হাজার টাকা।

আবার উত্তোলিত বালু যেসব নৌযানে পরিবহন করা হয় সেগুলো থেকে প্রতি ঘনফুট বালুর জন্য ইজারাদার ১২ টাকা করে টোল আদায় করেন। মূলত এটিই তাঁর বৈধ আয়। যাদুকাটা নদীর ফাজিলপুর এলাকা থেকে এই টোল আদায় করা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কয়েক মাস ধরে ড্রেজার ও সেইভ মেশিনে নদী এলাকা থেকে প্রতিদিন আনুমানিক ছয় লাখ ঘনফুট বালু ও ৫০ হাজার ঘনফুট পাথর আহরণ করা হয়। এতে প্রতিদিন ইজারাদারের আয় ৭৮ লাখ টাকা। মাসে ২৩ কাটি ৪০ লাখ টাকা। 

উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে যাদুকাটা নদীতে বালুমহাল তৈরি করে প্রথমে দুটি মহাল ইজারা দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয়বারের মতো এক বছরের জন্য ৬৮ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় নদীর দুুটি বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। যাদুকাটা-১ বালুমহাল ২৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় রতন মিয়ার মালিকানাধীন সোহাগ এন্টারপ্রাইজ এবং যাদুকাটা-২ বালুমহাল ৪২ কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকায় খন্দকার মঞ্জুরের প্রতিষ্ঠান আরাফ ট্রেড করপোরেশন লিমিটেড ইজারা নিয়েছে। বালুমহাল দুটি আলাদা হলেও তাঁরা একত্রেই ব্যবসা করেন।

উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এই নদী উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। উপজেলা সমন্বয়সভায় যাদুকাটা নদীর পার কাটা, ফসলি জমি ও বাড়ির সামনের আঙিনা কাটা রোধে প্রায়ই প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। একটি সভায় পার কাটা ও ড্রেজার বন্ধে লিখিত প্রস্থাবও পাস করা হয়। কিন্তু পার কাটা বন্ধ হয়নি।

উপজেলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকেই নদীর পার কাটা শুরু হয়। শুরুতে রাতের বেলায় লুকিয়ে পার কাটা হতো। কিন্তু ২০২১ সালে বালুমহাল হিসেবে ইজারা দেওয়ার পর দিনরাত চলছে নদী কাটা। স্থানীয়দের মতে, গত পাঁচ মাসে পার কাটার সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। নদীপারের জমি রক্ষা করতে না পেরে ভূমির মালিকরা প্রভাবশালীদের কাছে জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমিনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, আগে স্থানীয়রা ঐক্যবদ্ধভাবে পার কাটা ঠেকাত। কিন্তু কাঁচা টাকার প্রলোভনে এখন প্রতিবাদীদের অনেকেও পার কাটায় যুক্ত হয়ে গেছেন।

 এ যেন কানার হাটবাজার

যাদুকাটা লুট হচ্ছে প্রকাশ্যে। ড্রেজার আর সেইভ মেশিনের শব্দে প্রকম্পিত এর চারপাশ। নদীপারের বাসিন্দারা রাতে স্বস্তিতে ঘুমাতেও পারে না। কিন্তু বক্তব্য বা মন্তব্য জানতে চাইলে কেউ মুখ খুলতে রাজি নয়। যেন তারা কিছু দেখছে না, কিছু শুনছে না।

আদর্শগ্রাম কমিটির সভাপতি মো. সাবিনুর মিয়া বলেন, ‘সরকার থেকে ইজারা এনে বালু-পাথর তুলছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বাধা দেওয়ায় হামলা ও মামলার শিকার হয়েছি। এখন আর কোনো কথা বলতে চাই না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘাগটিয়া আদর্শগ্রামের এক নারী বলেন, ‘বাবা, আমরা গরিব-নিরীহ মানুষ। বাড়ির সামনে থেকে জমি কেটে নিচ্ছে ওরা। কথা কইলে আমার পোলা ও জামাইরে (স্বামী) মাইরা ফালাইব।’ একই গ্রামের সাহারুল মিয়া বলেন, ‘আমার বাড়ির সামনে অন্তত এক কিলোমিটার এলাকা ছিল। গত পাঁচ মাসে বালু-পাথর তুলতে এর বেশির ভাগই কেটে নেওয়া হয়েছে। আর এক মাস চললে সবার ঘরবাড়ি নদীতে হারিয়ে যাবে।’

যাদুকাটার পার কাটা ও দখল নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। পার দখলকে কেন্দ্র করে ২০২০ সালে খুন হয় নদীতীরবর্তী আদর্শগ্রামের শহিদ নুর (১৭)। গত ১৩ অক্টোবর একই গ্রামের নাসির উদ্দিনের সঙ্গে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোশাহিদ আহমদ রানুর মারামারি হয়। ২০২১ সালে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে নদীতীরে স্থানীয় সাংবাদিক কামাল হোসেন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। গত ১৬ অক্টোবর লাউড়েরগড় গ্রামের খাজা মিয়া ও আদর্শগ্রামের সাবিনুর মিয়ার লোকজনের মধ্যে মারামারি হয় নদীপারের জায়গার দখল নিয়ে।

 

মন খারাপের নদী

যাদুকাটার তীরে অবস্থিত ঘাগটিয়া গণগ্রন্থাগারে কথা হয় এর সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় বাসিন্দা অমিয় হাসানের সঙ্গে। তিনি জানান, আগে নদীতীরে গেলে সবুজে মোড়া খাসিয়া পাহাড়, শিমুলবাগান আর যাদুকাটার স্বচ্ছ জল দেখে চোখ ও মন জুড়িয়ে যেত। এখন নদীতীরে গেলে মন ভেঙে যায়। যাদুকাটা এখন হয়ে গেছে মন খারাপের নদী।

অমিয় হাসান বলেন, অপরূপ সৌন্দর্য, বালু-পাথর, বিলুপ্তপ্রায় নানীদ ও মহাশোল মাছের জন্য বিখ্যাত ছিল এই নদী। নদীটি সমতলে তাহিরপুর উপজেলার বারেকটিলা ও লাউড়েরগড় এলাকার মধ্য দিয়ে পাঁচ কিলোমিটার গিয়ে দক্ষিণে ফাজিলপুর এলাকায় তেমোহনায় এবং পরে দক্ষিণে রক্তি ও পশ্চিমে বৌলাই নামে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদী শত বছর ধরে খাসিয়া পাহাড় থেকে বর্ষায় ঢলের পানির সঙ্গে বয়ে আনত বালু-পাথর। কিন্তু এখন বালু-পাথরই নদী ও নদীতীরবর্তী বাসিন্দাদের জন্য কাল হয়েছে। তারা তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে ফেলছে বালু-পাথর ব্যবসায়ীদের কাছে।

অন্যতম ইজারাদার মনজুর খন্দকার বলেন, ‘ড্রেজার বা সেইভ চালানোর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নদীর পার কাটা বন্ধে আমাদের শ্রমিকরা কাজ করছেন প্রতিদিন। কয়েক দিন আগেও পার কাটা বন্ধে আমরা অভিযান চালিয়েছি।’ জেলা প্রশাসন থেকে নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।

ভাঙনে গ্রাম-মৈত্রী সেতু-শিমুলবাগান, বালুময় হওয়ার ঝুঁকিতে হাওর

প্রাকৃতিকভাবেই উঁচু ছিল যাদুকাটা নদীর পার ও নদীতীরবর্তী জমি। পার কেটে কেটে নদীটি গ্রামের দিকে এক থেকে দুই কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে গেছে। তাই পাহাড়ি ঢলে বন্যা হলেই নদীর পানি সহজেই গ্রামের ভেতর প্রবেশ করে। ড্রেজার দিয়ে করা ৩০ থেকে ৪০ ফুট গভীর হাজার হাজার গর্তের কারণে নদীর দুপারের ২০টি গ্রামে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। বালুময় হওয়ার ফলে উপজেলার ২০টি হাওর ঝুঁকিতে পড়েছে। হুমকিতে পড়েছে নদীর ওপর নির্মিত জেলার সবচেয়ে দীর্ঘ শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতু। দেশের আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান জয়নাল আবেদীন শিমুলবাগানও হুমকিতে পড়েছে।

শিমুলবাগান মালিক ও বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রাখাব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কেউই এর দায় এড়াতে পারি না। বালু-পাথর লুট নদীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলেছে। গ্রামের পর গ্রাম ভাঙনে পড়েছে। মানুষজন গ্রামছাড়া হচ্ছে। শিমুলবাগান রক্ষায় নদীর পারে পাহারাদার নিয়োগ করেছি। তবু শিমুলবাগান, মৈত্রী সেতু, নদীতীরবর্তী গ্রামসহ বিভিন্ন স্থাপনা, ফসলের মাঠ ও হাওর ভাঙনে পড়বে নতুবা বালুময় হয়ে যাবে।’

জনপ্রতিনিধিরা যা বলেন

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, যাদুকাটা নদী এলাকায় মানবসৃষ্ট যে বিপর্যয় চলছে, তা বলে বোঝানো যাবে না। নদীতীরবর্তী অনেক গ্রাম বিলীন হচ্ছে। তাই নদীতীরের জনপদ রক্ষায় অবিলম্বে বালুমহাল ইজারা বাতিল করতে হবে।

যাদুকাটার পাশের উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য আজাদ হোসেন বলেন, পার কাটা ও ড্রেজার বন্ধে প্রতিটি সমন্বয়সভায় দাবি তোলা হয়। একটি সভায় রেজল্যুশনও হয়েছে। কিন্তু কিছু বন্ধ হয়নি। তিনি বলেন, এই মানবসৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে উপজেলার অন্তত ১৭টি হাওর বালুময় হয়ে ফসল বিপর্যয় হতে পারে।

বাদাঘাট ইউনিয়নে পড়েছে যাদুকাটা নদীটি। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের দুইবারের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘যাদুকাটা থেকে বালু উত্তোলনের নামে মানুষের বসতভিটা ও ফসলি জমি কাটা হচ্ছে। এসব দেখে নিজের ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সময় খারাপ, তাই প্রতিবাদও করতে পারছি না।’

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, ‘বালু-পাথর লুটছে ইজারাদার ও স্থানীয় দুস্কৃতকারীরা। এসব প্রতিরোধে আমাদের প্রতিবাদ দুর্বল, এটি ঠিক।’ ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজ দলের কেউ কেউ হালুয়া-রুটি খাচ্ছেন বলেও স্বীকার করেন তিনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খান বলেন, ‘পার কাটা বন্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনেকবার নদী এলাকায় গিয়ে প্রতিবাদ করেছি।’

পার কাটায় আলোচিত রানু মেম্বার

মোশাহিদ আলম ওরফে রানু মিয়া বাদাঘাট ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। নদীতীরবর্তী এলাকা কাটার মহোৎসব চলছে তাঁর ওয়ার্ডেই। স্থানীয় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে রানু মিয়ার নাম সবার মুখে মুখে। পার কাটার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়েছে।

রানু মিয়া বলেন, ‘আমার এলাকায় বেশি পার কাটা হয় কথাটা সত্য। একসময় পার কাটা ঠেকাতে কাজ করেছি। এ জন্য তিনবার জেল খেটেছি। এখন সবাই পার কাটে তাই আমিও কাটছি।’ তিনি বলেন, ইজারাদার সহযোগিতা না করলে কেউ পার কাটতে পারবে না।

পরিবেশবাদীদের বক্তব্য

যাদুকাটা নদীতীরের বাসিন্দা হাওর ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, এ বছর পার কাটার রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গোটা হাওরাঞ্চলের জন্য পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হবে এটি।

পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়কারী শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে আদালত অবমাননার একটি নোটিশ পাঠিয়েছি। প্রশাসনের নীরবতা আদালত অবমাননার শামিল।’

ওসি ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) যা বললেন

তাহিরপুর থানার ওসি নাজিম উদ্দিন বলেন, নদীতে পানি কমে গেছে। তাই নদীর পারে এখন নৌকা ভিড়তে পারে না। তাই যাদুকাটায় সব ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান রনি বলেন, দেড় মাস ধরে যাদুকাটায় পার কাটা বেড়েছে। তবে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেলা-জরিমান ও ড্রেজার-সেইভ মেশিন জব্দ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যাদুকাটায় যা হচ্ছে তা সত্যিই দুঃখজনক। দুর্গম যাতায়াতের কারণে আমাদের অভিযানের খবর পেয়েই ওরা পালিয়ে যায়। বেশি বালু তুললে বেশি টোল আদায় হয়। তাই পার কাটায় ইজারাদারদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলা যায়।’ আসাদুজ্জামান রনি জানান, ইজারাদারদের লিজ কেন বাতিল হবে না—জানতে চেয়ে মনজু খন্দকার ও রতন মিয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/12/02/1341677