২ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবার, ২:৫৭

দেড় মাসে বিএনপি জামায়াতের ৬৫৮ নেতা-কর্মীর সাজা 

নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি-জামায়াত। একইসঙ্গে গত দেড় মাসে বিএনপি-জামায়াতের ৬৫৮ জন নেতা-কর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ৫৪ ও বুধবার ২২ জনকে সাজা দেন আদালত। এদিকে ১৬ বছর আগে সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলার রায় বৃহস্পতিবার ঘোষণা করার কথা থাকলেও পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। রায় প্রস্তুত না হওয়ায় বিচারক নতুন দিন ধার্য করেন।  এছাড়া গোলাপুর রহমান (৫৮) নামে বিএনপির এক নেতার কারাগারে মৃত্যু হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের আগের দিন দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন। এছাড়াও ডান্ডাবেড়ি অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ আরও কয়েজন নেতা কারারুদ্ধ অবস্থায় আছে বলে স্বজনরা জানান। 

বিএনপি সূত্র জানায়, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদের মহাসমাবেশে পরিকল্পিত সহিংসতা ও নাশকতার নজিরবিহীন ঘটনাবলির পর এ পর্যন্ত ৮৩৭টির বেশি হয়রানিমূলক গায়েবি মামলায় ২০ হাজার ৩২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ৭৩ হাজার ১২৩ জন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। আহত হয়েছেন আট হাজার ২৪৯ জনের বেশি নেতাকর্মী। একজন সাংবাদিকসহ বিএনপির ১৭ জন নিহত হয়েছেন। অপরদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের গ্রামের বাড়িতে পুলিশের হানা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। গত ২ নবেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে জহির উদ্দিন স্বপন কাসিমপুর কারাগারে বন্দী আছেন।

পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার দুই থানায় করা পৃথক মামলায় বিএনপির ৫৪ নেতাকর্মীর কারাদ-ের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অন্যদিকে জামায়াতের একজনকে দিয়েছেন দুই বছর কারাদ-। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। 

বংশাল থানায় দশ বছর আগে করা এক মামলায় বিএনপির ১৬ নেতাকর্মীকে ৬ মাসের এবং দক্ষিণখান থানায় ২০১৮ সালে করা এক মামলায় বিএনপির ৩৮ জন নেতাকর্মীকে ৪ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নাশকতার অভিযোগে কাফরুল থানার মামলায় জামায়াতের একজনের দুই বছরের কারাদ- দিয়েছেন আদালত। এ দুই মামলাসহ গত তিনমাসে ৩৭ মামলায় বিএনপির ৭১১ জনের কারাদ- দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে নবেম্বর মাসে ৩০ মামলায় ৫৭৫ জনের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। দশ বছর আগে বংশাল থানায় নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় এক ধারায় বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক আলী সরকারসহ ১৬ জনের ছয় মাস সশ্রম কারাদ- দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ৩ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদ-ের আদেশ দেওয়া হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন। এ মামলায় পলাতক থাকা আসামীদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়াসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

দ-প্রাপ্ত আসামীরা হলেন- ইসহাক আলী সরকার, মো. মোহন, রফিকুল ইসলাম, ডলার ইকবাল, মো. শাজাহান, আব্দুল করিম, সিরাজ শেখ ওরফে বাঙাল সিরাজ, মোহাম্মদ মাসুম, মো. বেলাল হোসেন, রাজু আহমেদ, আব্দুর রহমান ওরফে বোমা রহমান, মোহাম্মদ সেন্টু, মো. ফারুক, মোহাম্মদ কামাল হোসেন, জুবায়ের আলম ও কামরুল ইসলাম। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে নাশকতার অভিযোগে বংশাল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করে। অন্যদিকে দক্ষিণখান থানার মামলায় বিএনপির ৩৮ নেতাকর্মীকে চার বছরের সশ্রম কারাদ- দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ সাজা পরোয়ানা জারি করা হয়।

দ-প্রাপ্ত আসামিরা হলেন-মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, আব্দুল আলীম, শাহিন মিয়া, মো মামুন, শামসুল হক রিপন, রুম্মন সিদ্দিকি, শাহীন, রাজীব, সমোয়ার হোসেন, মো. দুলাল মিয়া, নুরুজ্জামান হাওলাদার সোহেল, আনোয়ার হোসেন বকুল, মো. কামাল হোসেন, শাহ আলম, দীন ইসলাম, মো. আব্দুর রহিম বাদশা, রিপন সরকার, আবু বকর সিদ্দিক, ছোকন মেম্বার, আলী হোসেন, মোতালেব হোসেন রতন, শহিদুল ইসলাম, মো. ইয়াকুব আলী, মো. মোকলেস, মমতাজ উদ্দিন, মো. শেখ নূর মোহাম্মদ, মো. হারুন অর রশিদ হারুন, মো. আনোয়ার হোসেন সরকার, মো. তোফাজ্জল হোসেন মিঠু, সরকার রফিকুল ইসলাম মুকুল, মো. গোলাম মোস্তাফা, মো. মোজাফফর হোসেন বাদল, মো. জাকির হোসেন, মো. ইয়াকুব আলী, মো. সফিল উদ্দিন, মো. শরীফ হোসেন, রিপন মিয়া, মো. লুৎফর রহমান খোকন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নাশকতার অভিযোগে দক্ষিণখান থানায় পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করে। দশ বছর আগে কাফরুল থানা এলাকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা একটি মামলায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিমের দুই বছরের সশ্রম কারাদ- দিয়েছেন আদালত। কারাদ-ের পাশাপাশি তার তিন হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও একমাসের বিনাশ্রম কারাভোগ করতে হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২১ মার্চ কাফরুল থানার স্টাফ কোয়ার্টারের বিপরীতে একটি সিএনজি থামিয়ে লস্কর মোহাম্মদ তসলিমসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন অগ্নিসংযোগ করেন। এতে সিএনজির দশ হাজার টাকা ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় সিএনজিচালক মহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে কাফরুল থানায় মামলা করেন। ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিমকে একমাত্র আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। মামলার বিচার চলাকালে ৯ জন সাক্ষীর মধ্যে পাঁচজন সাক্ষ্য দেন।

গত বুধবার পুলিশের করা মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালসহ বিএনপি ও জামায়াতের ২২ নেতাকর্মীকে পৃথক দুটি ধারায় দুই বছর তিন মাসের কারাদ- দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা তরে জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুইমাস কারাভোগের আদেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতাউল্লাহ এ রায় ঘোষণা করেন। হেলাল ছাড়াও কারাদ-প্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- মো. আব্দুস সালাম, মো. আমিনুল ইসলাম, ইমরান হোসেন, সৈয়দ ইমরান আহম্মেদ, মো. গোলাম মোস্তফা, আলাউদ্দিন, মনির হোসেন ভূঁইয়া, আরিফুল ইসলাম, মো. ছেকন মিয়া, মো. তাহের মৃধা, এসআই টুটুল, আশরাফুল হক, আবু বকর সিদ্দিক, মো. মোজাম্মেল হক, বেলাল হোসেন, সোলেমান হোসেন, মো. রফিকুল ইসলাম, জামাল উদ্দিন, অপু সিকদার, আফাজ উদ্দিন ও এম কফিল উদ্দিন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলায় ১০ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। মামলা সূত্রে জানা যায়, বে আইনি সমাবেশ ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর উত্তরা-পূর্ব থানায় এ মামলা দায়ের করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ৯ জুন ৩২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

https://www.dailysangram.info/post/542169