২ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবার, ২:৫০

বিপর্যস্ত গণতন্ত্র ও আমাদের ভবিষ্যৎ 

-ইবনে নূরুল হুদা

 

আধুনিক বিশ্বে গণতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতি অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় হলেও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে তা খুব একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। ফলে এ সব দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিচ্যুতি রয়ে গেছে। বিশেষ করে আমাদের দেশের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তা আরো বেশি জটিল আকার ধারণ করেছে। আমাদের দেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে যে ধরনের নৈরাজ্যকর অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে তা কোনভাবেই গণতান্ত্রিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নয়। একশ্রেণির রাজনীতিক গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ছদ্মাবরণে আত্মস্বার্থ, শ্রেণিস্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ ও দলীয় স্বার্থ চর্চার অশুভ চর্চায় মেতে উঠেছেন। যা আমাদের জাতিস্বত্ত্বার ভিত্তিমূলকেই হীনবল ও ভঙ্গুর করে তুলছে। কিন্তু শ্রেণি বিশেষের স্বার্থান্ধতা ও অবৈধ লিপ্সার কারণেই আমরা তা থেকে পরিত্রাণ লাভ করতে পারছি না।

গণতন্ত্র বলতে কোন জাতিরাষ্ট্রের এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে। গণতন্ত্রে আইন প্রস্তাবনা; প্রণয়ন ও তৈরির ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সুয়োগ রয়েছে, যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে। ‘গণতন্ত্র’ পরিভাষাটি সাধারণভাবে একটি রাজনৈতিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হলেও অন্যান্য সংস্থা বা সংগঠনের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হতে পারে। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়, শ্রমিক ইউনিয়ন, রাষ্ট্র-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। তাই আধুনিক গণতন্ত্র চর্চার পরিসর খুবই বিস্তৃত ও সর্বব্যাপী।

গণতন্ত্র বলতে জনগণের সার্বভৌমত্বকেই বোঝানো হয়। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে নাগরিকের নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার থাকবে; থাকবে কথা বলার বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। একই সাথে থাকবে সভা-সমাবেশ, সমালোচনা, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এবং রাজপথে কর্মসূচি পালনের অধিকার। পরমতসহিষ্ণুতা গণতন্ত্রের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। কিন্তু আমাদের দেশের চলমান অসহিষ্ণু ও ক্ষয়িষ্ণু রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এসব শুধু কিতাবেই রয়েছে; বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন নেই। বিষয়টি খানিকটা কাজীর গরুর আদলে কিতাবেই আছে; গোয়ালে নেই। যা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র ও জাতির জন্য খুবই লজ্জার।

আমাদের দেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে জনমতের প্রতিফলন হয় না বলে অভিযোগটা সর্বসাম্প্রতিক নয়। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম কম হয়নি। কিন্তু একশ্রেণির রাজনীতিকের আদর্শিক দেউলিয়াত্বের কারণে এসব আন্দোলন থেকে আমরা স্থায়ী কোন সমাধান পাইনি। মাঝে মধ্যে আশার আলো দেখা গেলেও তা আলেয়া বা মরিচিকার মত শূন্যে মিলিয়ে গেছে। ফলে ভাগ্যাহত জাতির ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তন হয়েছে রাজনৈতিক দালাল ও ফরিয়াদের। 

এসব অভিযোগ দীর্ঘ পরিসরে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চাউর হতে দেখা গেলেও এখন তা দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে স্থান করে নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ তাবৎ পশ্চিমা বিশ্ব এবং গণতন্ত্রপ্রিয় শক্তিগুলো এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা প্রকাশ করে আসছে বেশ জোরেজোরেই। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে এখনো উদাসীনই রয়েছেন। কারণ, তাদের কাছে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইন, সংবিধান ও নাগরিক অধিকার কোন মুখ্য বিষয় নয় বরং মুখ্য বিষয় হলো নিজেদের ক্ষমতা লাভ। যেকোন মূল্যে বা যেকোন পন্থায় ক্ষমতা দখলের রাখার একটি অসুস্থ চিন্তা থেকেই আমাদের দেশের রাজনীতির গতিপথ নির্ধারিত হচ্ছে। যা জাতি হিসাবে আমাদেরকে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এতোদিন এসব কথা সরকার বিরোধীদের অপপ্রচার বলে দাবি করা হলেও হালে সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এ বিষয়ে হাটেহাঁড়ি ভাঙতে শুরু করেছে। কিন্তু বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা বুঝেও না বোঝার ভান করছেন। ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনাকাক্সিক্ষত অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে এখন নানাবিধ কথায় বলতে শুরু করেছে। এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র গবেষক জুলিয়া ব্লেকনারের বক্তব্য বেশ চমকপ্রদ ও প্রণিধানযোগ্য। তার ভাষায়, যখন সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে গলা টিপে ধরে এবং খেয়ালখুশিমতো গ্রেফতার, জোরপূর্বক গুম, হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমিকভাবে বিরোধী দল, সমালোচক এবং অধিকারকর্মীদের অক্ষম করে দেয়, তখন একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অসম্ভব। তিনি আরও বলেছেন, ‘সহিংসতা ও সমালোচকদের জেলে পাঠানোর পরিবর্তে সরকারের উচিত অবিলম্বে রাজনৈতিক গ্রেফতার বন্ধের আহ্বান জানানো। একই সঙ্গে এটা পরিষ্কার করতে হবে যে, জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন এবং নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে হত্যাকা-ের ঘটনা সহ্য করা হবে না’। যা বাংলাদেশ নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনকে বেশ সরগরম করে তুলেছে। একই সাথে আমাদের অতীতের সকল অর্জনই বিফলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এ বিষয়ে সম্প্রতি নিজস্ব ওয়েবসাইটে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এতে বলা হয়, অবিলম্বে রাজনৈতিক এবং বেআইনি গ্রেফতার বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। ৭ই জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলীয় নেতা ও সমর্থকদের টার্গেট করছে কর্তৃপক্ষ। একদিকে যখন বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দিয়ে জেলখানা ভরে ফেলছে কর্তৃপক্ষ, তখন সরকার কূটনৈতিক অংশীদারদের সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। যা স্ববিরোধীতারই নামান্তর। এতে কূটনৈতিক অংশীদারদের এটা পরিষ্কার করার আহ্বান জানানো হয়েছে যে, এই দমনপীড়নে দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিপন্ন হতে পারে। এই রিপোর্টে সব সহিংস ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি বলেছে, যেসব ঘটনায় একে অন্যকে দায়ী করছে, তদন্ত করতে হবে তারও। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লিখেছে, গত ২৮শে অক্টোবর প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকে বিরোধী দলের কমপক্ষে ১০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনী পরিবেশকে টালটামাল করে তুলেছে।

চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় দুই পুলিশ সদস্যসহ নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৬ জন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে সাড়ে ৫ হাজার মানুষ। ১৩ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার, ভিডিও ও পুলিশি রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে যে, অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ, খেয়ালখুশি মতো গণগ্রেপ্তার, জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন এবং বিচারবর্হিভূত হত্যাকা-ের জন্য দায়ী নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। সম্প্রতি নির্বাচন সংক্রান্ত সহিংসতায় তা বেড়ে গেছে। ২৮শে অক্টোবরের সহিংসতার পর বিএনপি ৩১ অক্টোবর থেকে ২রা নবেম্বর পর্যন্ত ধর্মঘটের ডাক দেয়। এ সময়ে এবং পরে পুলিশ, বিরোধী দলের সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষোভের জবাবে অনেক ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করেছে পুলিশ। কর্তৃপক্ষ বিরোধী দল বিএনপির বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ এনে তাদের প্রধান কার্যালয় তালাবদ্ধ করে দিয়েছে। একে ‘ক্রাইম সিন’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তারা বিরোধী দলীয় প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে হামলাকে উৎসাহিত করে প্রকাশ্য বিবৃতির মাধ্যমে চলমান সহিংসতাকে উস্কে দিয়েছেন। গত ৩ নবেম্বর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যদি তারা কাউকে অগ্নিসংযোগ করতে দেখেন, তাহলে সেই আগুনে তাদেরকে নিক্ষেপ করতে হবে। যে হাত দিয়ে কোনো কিছু পোড়াবে সেই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে। যা জনমনে রীতিমত আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের হুমকি এবং টার্গেট করায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে সমন্বয়ের প্রমাণ আছে। এটা হতাশাব্যঞ্জক ও দুর্ভাগ্যজনক। বিরোধী দলীয় সমর্থকরা অভিযোগ করছেন, পুলিশ এবং সরকার দলীয় কর্মীরা রাস্তায় থাকায় লোকজন বাইরে আসতে ভয় পাচ্ছে। ৪ নবেম্বর ঢাকায় রেকর্ড করা একজন সাংবাদিকের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ‘দাঙ্গা পরিস্থিতিতে পুলিশের পিছনেই কাঠের লাঠি হাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা স্লোগান দিচ্ছেন, বিএনপির একটা করে কর্মী ধর, ধরে ধরে জবাই কর। আরও স্লোগান দিচ্ছেন, বিএনপির পা-ারা রাস্তায় আসার সাহস দেখিও না। আমরা তোমাদের প্রহার করবো’। যা ভিন্নমত দমন ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতা কথায় স্মরণ করিয়ে দেয়। এটা কোন গণতন্ত্রের  ভাষা হতে পারে না। একই রকম দৃশ্য দেখা গেছে দেশের অন্য অংশগুলো থেকেও। ফেনী থেকে ৪ নবেম্বর স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) ফুটেজে দেখা গেছে, দাঙ্গা মোকাবিলার প্রস্তুতি নেয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাঠের লাঠি হাতে অবস্থান নিয়েছেন সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। ৫ নবেম্বর এক ঘটনার পর ঢাকার তেজগাঁওয়ে যানবাহনের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এরপরই এ ঘটনার জন্য দায়ীদের সন্ধানে একসঙ্গে সেখানে উপস্থিত হয় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শী, ভিডিও এবং ওই ঘটনার ছবিগুলো অনুযায়ী, এ সময় কমপক্ষে একজন আওয়ামী লীগ কর্মীর হাতে ছিল দৃশ্যত ধাতব রড। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, এ সময় রাস্তায় থাকা লোকজনের মধ্যে পুলিশের হাতে গ্রেফতার অথবা আওয়ামী লীগের কর্মীদের হাতে প্রহৃত হওয়ার ভয় দেখা দেয়। এসব সহিংসতার যখন সবদিক দিয়ে তদন্ত করে দেখা উচিত পুলিশের, তখন তাদের পক্ষপাতিত্বে এবং আইনের শাসন সমুন্নত রাখার সক্ষমতা ক্ষুন্ন হয়, বিশেষ করে যখন তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। যখন চলমান সহিংসতায় ভূমিকা থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দায়মুক্তি পায়, তখন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা ব্যাপকহারে গ্রেফতার, কখনো খেয়ালখুশিমতো গ্রেফতারের মুখে পড়েন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরো লিখেছে, বিরোধী দলকে মুছে দেয়ার সুস্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য দিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মুছে দিতে চায়। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি দাবি করছে, তাদের ৫০ লাখ সদস্যের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক বিচারের মুখোমুখি। তারা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে অভিযোগ করেছেন, গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কাউকে বাদ দিচ্ছে না। সিনিয়র পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত গ্রেফতার করা হচ্ছে।

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) একজন মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন, তাদের অনেক সমর্থক রাতে পুলিশী অভিযানের ভয়ে পালিয়ে থাকছেন। জেলখানা আর বন্দী নিতে পারছে না। কারণ সেখানে বন্দিতে উপচে পড়ছে। বর্তমানে সক্ষমতার দ্বিগুণের চেয়েও বেশি বন্দি সেখানে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিডিয়াকে বলেছেন, যদিও আমাদের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতা ৪২ হাজার। তবু সেখানে আমরা রাখতে পারি ৯০ হাজার বন্দীকে। এ জন্য ঠিক এই মুহূর্তে কারাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন নেই।

ওদিকে যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরকে নিরাপত্তা হেফাজতে প্রহার ও নির্যাতন করার অভিাযোগ আছে। একজন নারী বলেছেন, তার ভাইকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি দেখেছেন তার ভাইয়ের বাম হাতের আঙ্গুলগুলো ব্যান্ডেজ করা। অন্য একজন অভিযোগ করেছেন, তার ভাইয়ের হার্টের সমস্যা আছে। ৩০শে অক্টোবর পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে। ১০ দিন যোগাযোগহীন অবস্থায় রাখা হয় তাকে। তার স্বাস্থ্যগত উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও নিরাপত্তা হেফাজতে প্রহার করা হয়েছে। যা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের মারাত্মক লঙ্ঘন।

এর প্রেক্ষিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লিখেছে, বিদেশি সরকারগুলোর বলা উচিত যে, মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখতে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা আছে সরকারের। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ বাণিজ্য কর্মসূচির প্রধান সুবিধাভোগী বাংলাদেশ। এছাড়া জিএসপি সুবিধা প্রয়োগের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। এটা করা হলে গার্মেন্টস সহ গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিতে শুল্ক কমিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু নিয়ম লঙ্ঘনের ফলে এসব কর্মসূচিতে সরকারের বৈধতা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত সুনির্দিষ্ট মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার। সম্প্রতি এ দেশ সফরে এসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কর্মকর্তারা ও ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট এসব নিয়ে উদ্বেগ তুলে ধরেছে।

মূলত, অতিমাত্রায় ক্ষমতালিপ্সা আমাদের দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে খাদের কিনারে দাঁড় করিয়েছে। গণতন্ত্র মানুষকে শান্তি ও সাম্যের বাণী শোনালেও আমাদের দেশের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তা রীতিমত ভীতিকর রূপ ধারণ করায় আমাদের গন্তব্যও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় দেশে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। ক্ষমতাকেন্দ্রীয় হানাহানীর রাজনীতি কোন দেশ ও জাতির জন্যই কল্যাণকর নয়। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই সংশ্লিষ্ট সকলকে এই অশুভ বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। অন্যথায় জাতির আমাদের গন্তব্যই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

https://www.dailysangram.info/post/542112