২৮ নভেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৩:০৪

২০.৭৭ শতাংশ মানুষ কখনো স্কুলে যায়নি

দেশের প্রায় ২০.৭৭ শতাংশ মানুষ কখনো স্কুলে যায়নি, যাদের সবার বয়স সাত বছরের ওপরে। তবে সাক্ষরতার হার বেড়েছে। ২০১১ সালেও যেখানে দেশে সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৫১.৭৭ শতাংশ, ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৭৪.৮০ শতাংশ।

দেশে ১০ বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে স্নাতক ডিগ্রিধারী।

গত ১০ বছরে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষিত হয়েছে ২০.৭৭% মানুষ কখনো স্কুলে যায়নি ৩.৪০ শতাংশ মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ চূড়ান্ত প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনটি আজ মঙ্গলবার প্রকাশ করা হবে।

এর আগে গত বছরের ২৭ জুলাই শুমারি শেষ হওয়ার এক মাসের মাথায় জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস।

জনশুমারির সেই প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। তবে জনশুমারির তথ্য যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) নিট কাভারেজ এরর পায় ২.৭৫ শতাংশ। সেই এরর যোগ করে বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১। এর আগে ২০১১ সালের আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী, সে সময় দেশের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৬৩।

জনশুমারিতে সাক্ষরতার হারের তথ্যে দেখা যায়, সাত বছরের ওপরে দেশের মোট জনসংখ্যার ১.১৭ শতাংশ প্রথম শ্রেণি শেষ করেনি। ২.৩২ শতাংশ প্রাক-প্রাথমিক পর্যন্ত পড়েছে। প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে ১.৭৩ শতাংশ। প্রাথমিক শিক্ষা, অর্থাৎ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে ২৫.৯১ শতাংশ।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করছে ১৬.১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।

এসএসসি পাস করেনি ৭.৮ শতাংশ। এসএসসি পাস করেছে ৮.৮২ শতাংশ। এইচএসসি পাস করেছে ৭.২৮ শতাংশ। ডিগ্রি বা স্নাতক পাস করেছে ৩.৬২ শতাংশ। ২০১১ সালে স্নাতক ডিগ্রিধারী ছিল ১.৯২ শতাংশ। স্নাতকোত্তর অর্জন করেছে ১.৭২ শতাংশ, যেখানে ২০১১ সালে মাস্টার ডিগ্রিধারী ছিল ০.৮২ শতাংশ।

বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, দেশের মোট শিক্ষিতের মধ্যে সাধারণ শিক্ষা থেকে পড়াশোনা শেষ করেছে ৮৯.২৬ শতাংশ। ২০১১ সালে সাধারণে এই হার ছিল ৯৩.৭১ শতাংশ। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পড়েছে ৭.১৯ শতাংশ। ২০১১ সালে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পড়ার হার ছিল ৫.৫৮ শতাংশ। কারিগরি শিক্ষা শেষ করেছে ০.৮১ শতাংশ, যা ২০১১ সালে ছিল ০.৭১ শতাংশ। অন্যান্য মাধ্যমে পড়াশোনা করেছে ২.৭৪ শতাংশ।

এর আগে বিবিএসের প্রায়োগিক সাক্ষরতা নিয়ে করা জরিপে বলা হয়েছে, দেশে সাত বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ২৬ শতাংশ মানুষ প্রায়োগিক সাক্ষরতার বাইরে রয়েছে। ১১ শতাংশ মানুষ আংশিক সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। বাকি ৬২.৯২ শতাংশ মানুষের প্রায়োগিক সাক্ষরতা রয়েছে। ৭ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এই হারে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে।

জরিপে দেখা যায়, দেশের ৭ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের প্রয়োগিক সাক্ষরতার হার ৭২.৯৭ শতাংশ। এদের মধ্যে মেয়েদের হার ৭৬ শতাংশ আর ছেলেদের হার ৬৯ শতাংশ। শহর ও গ্রামেও মেয়েদের এই হার ছিল বেশি। গ্রামে ৬৭ শতাংশ ছেলের বিপরীতে মেয়েদের হার ছিল ৭৫ শতাংশ। আর শহরে মেয়েদের ৭৯ শতাংশের বিপরীতে ছেলেদের হার ছিল ৭৩ শতাংশ।

জরিপে বলা হয়, ৬২.৯২ শতাংশ সাক্ষরতাসম্পন্ন মানুষের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে ১৯ শতাংশ এবং উন্নত পর্যায়ে রয়েছে ৪৩ শতাংশ মানুষ। ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নিয়ে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করে এই জরিপ চালানো হয়েছে।

জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ১৪ শতাংশের প্রায়োগিক সাক্ষরতা নেই। আর আংশিক হার ১২ শতাংশ। ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ২৮ শতাংশের সাক্ষরতা নেই। ১০ শতাংশের আংশিক সাক্ষরতা আছে। আর ১৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের সাক্ষরতার এই হার ৬০.৭৭ শতাংশ।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক ধরনের ঘাটতি রয়েছে। তা হলো—বাজারের যে রকমের চাকরি দরকার, সে রকম কর্মী পাওয়া যায় না। এটি একটি বড় সংকট। এই সংকটের সমাধান জরুরি। পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ওপর বেশি জোর দিতে হবে।

 

https://www.kalerkantho.com/online/national/2023/11/28/1340480