২৬ নভেম্বর ২০২৩, রবিবার, ৯:০৬

গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা

একতরফা ও সহিংসতাপূর্ণ নির্বাচনই আমাদের নিয়তি

 

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, একতরফা নির্বাচনই আমাদের নিয়তি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিরোধীরা চাইলেও নির্বাচন করতে পারবে না। কারণ তাদের সব নেতাই এখন জেলে। ইতোমধ্যে অনেকেই আদালত কর্তৃক সাজা পেয়েছেন, আরো অনেকে পাবেন বলে বিশ্লেষকরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেন, পূর্বাভাস বলছে আমরা একটি একতরফা ও সহিংসতাপূর্ণ নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছি। নির্বাচন হয়তো করে ফেলবে। কিন্তু নির্বাচনের পর কী হবে এটি নিয়ে আমি সন্দিহান।

বেসরকারি সংস্থা দি হাঙ্গার প্রজেক্টের ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা প্রকল্পের আওতায় ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের পরিবেশ : প্রত্যাশা, বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক গতকাল এক গোলটেবিল বৈঠকের বক্তারা এই অভিমত জানান। গোলটেবিল বৈঠকটি মোহাম্মদপুরের ওয়াই ডব্লিউ সি এ কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ, আদিবাসী সঞ্জীব দ্রং এবং ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা প্রকল্পের সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার।

লিখিত প্রবন্ধে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আকাক্সক্ষা একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন। কিন্তু পূর্বাভাস বলছে, আমরা একটি একতরফা ও সহিংসতাপূর্ণ নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছি। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি সমঝোতা না হয়, তবে সামনের দিনগুলোতে জাতিগতভাবে আমরা চরম সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হতে পারি। দেশ চলে যেতে পারে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে- যা কারোরই কাম্য নয়।

উপস্থাপনায় বলা হয়, বর্তমান সংবিধানের আওতায় নির্বাচনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে তারা ঐকমত্যে আসতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনের ওপর সব দলের আস্থা নেই। নির্বাচন কমিশন যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারবে, তা এখনো দৃশ্যমান নয়। ‘নির্বাচনকালে সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে, এমন ধারণা রাজনৈতিক দল জনমনে অনুপস্থিত। জনপ্রশাসনসহ নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারীরা দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করবে কি না, তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দলীয়প্রভাবমুক্ত কি না এবং নির্বাচনকালে প্রভাবমুক্ত থাকতে পারবেন কি না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে; নির্বাচনকালে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা হয়রানিমুক্ত পরিবেশে কাজ করতে পারবে কি না এবং ক্ষমতাসীন দল ও জোট ছাড়া অন্যান্য দল নির্বিঘেœ প্রচারণা চালাতে পারবে কি না তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ রয়েছে। বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সরকারের পতনের জন্য আন্দোলন করছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও জোট এবং সমমনা কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা জোরেশোরে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান সরকার জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। এটি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে আরেকটি একতরফা নির্বাচন হচ্ছে। এখন বিভিন্ন মহল থেকে সংলাপের কথা বলা হচ্ছে। আমরাও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে আসছি। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিরোধীরা চাইলেও নির্বাচন করতে পারবে না। কারণ তাদের সব নেতাই এখন জেলে। ইতোমধ্যে অনেকেই আদালত কর্তৃক সাজা পেয়েছেন, আরো অনেকে পাবেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, একতরফা নির্বাচনই আমাদের নিয়তি।

ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা একটা ইউনিক নির্বাচন দেখতে পাচ্ছি। যেমন খুশি তেমন নির্বাচন আর কি। আমরা এখন ঘোরতর সঙ্কটে আছি। অনেকেই এটি বুঝছেন। ১০০ বছরের পুরনো মীমাংসিত বিষয় নিয়ে আমাদের এখনো কথা বলতে হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচন হয়তো করে ফেলবে। কিন্তু নির্বাচনের পর কী হবে এটি নিয়ে আমি সন্দিহান। গত দুটি নির্বাচন নিয়ে মানুষ যা বলতো না এবার তারা কথা বলছে। আমি ঘর থেকে বের হলেই মানুষ আমাকে প্রশ্ন করে, ভোট দিতে পারি না, কী করব? আমি বলি আল্লাহ আল্লাহ করেন।

শারমীন মুরশিদ বলেন, আমরা একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। এর থেকে আমাদের বের হতে হবে। বের হওয়ার জন্য আমরা নাগরিক সমাজ কী করতে পারি সেটির উপরই নির্ভর করবে আমরা তথা জাতির অস্তিত্ব।

রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম লাইন হচ্ছে গভারমেণ্ট বাই দা ডিসকাশন। তাই সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে। সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। যেকোনো সময় সংলাপ হতে হবে। সংলাপের সময় শেষ হওয়া মানে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটা। আমাদের হতাশ হলে হবে না।

আমরা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি, ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি যারা কথা বলছে তাদের নিয়ে একটি পক্ষ সমালোচনা করছে। কিন্তু তারা তো চেষ্টাটুকু করছে না, ইতিহাস তাদেরকে ক্ষমা করবে না।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/794320