২৫ নভেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৪:১৭

অভিভাবকদের অভিযোগ

নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধী বানানো হচ্ছে

শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন কারিকুলাম বাতিল দাবি করে অভিভাবকরা বলেছেন, আমাদের মেধাবী সন্তানদের এখন প্রতিবন্ধী হিসেবে গড়ে তোলার আয়োজন চূড়ান্ত করা হয়েছে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের শিক্ষা কারিকুলামে যে পরিবর্তনের কথা বলেছে এখানে মূলত শিক্ষার্থীদের মেধাহীন করার চক্রান্ত চলছে। অবিলম্বে এই কারিকুলাম বাতিল করাসহ আট দফা দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকদের সংগঠন ‘সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন’।

 

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কেন্দীয় শহীদ মিনারের সামনে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে ওই সংগঠনের ব্যানারে কয়েক শত অভিভাবক। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে অভিভাবকরা জানান, নতুন কারিকুলাম বাতিল, নম্বরভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু এবং শিক্ষার্থীদের দলগত কাজে ডিভাইসমুখী হতে অনুৎসাহিত করাসহ আট দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। সংগঠনটির আহ্বায়ক রাখাল রাহা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নাসির আহমেদসহ শতাধিক ব্যক্তি মানববন্ধনে যোগ দেন।

নতুন কারিকুলাম বন্ধের দাবি জানিয়ে রাখাল রাহা বলেন, একটি কারিকুলাম প্রণয়নে বিভিন্ন মহলে আলোচনা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী কি না সেটি ভাবার প্রয়োজন ছিল। সংসদে ও মন্ত্রিপরিষদে এ কারিকুলামে আলোচনা হওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এসব হয়েছে কি না আমরা জানি না। যদি হতো তাহলে এমন কারিকুলাম প্রণয়ন করা হতো না। তিনি বলেন, আমাদের আহ্বান থাকবে অবিলম্বে আমাদের শিক্ষার্থী ও জাতি ধ্বংসের এই কারিকুলামের প্রকল্প বন্ধ করুন। দেশের পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে এ কারিকুলাম বন্ধ করার বিকল্প নেই।

সমাবেশে অভিভাবকরা বলেন, শিক্ষার্থীদের দলগত কাজে ডিভাইসমুখী হতে অনুৎসাহিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নমুখী করতে হবে। যে ইন্ডিকেটর দিয়ে শিশুদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে, সেটি তো প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রযোজ্য। যারা পড়তে জানে না, সংখ্যা চেনে না... তাদের এসব ইন্ডিকেটর শেখাতে হয়। কিন্তু আমাদের শিশুদের এসব শিখিয়ে তাদের প্রতিবন্ধী করা হচ্ছে।

তারা বলেন, নতুন এ কারিকুলামে আমাদের ব্যয়ও বাড়ছে। আমরা এত ব্যয় কুলিয়ে উঠতে পারছি না। প্রতিদিন কাগজ, কলম ও পেন্সিলের পাশাপাশি এখন নতুন নতুন সরঞ্জাম যুক্ত করা হচ্ছে। শিক্ষা ব্যয়ের দিকেও রাষ্ট্রকে নজর দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের দাবিগুলো হলো-

১. ‘শিক্ষানীতি বিরোধী’ নতুন কারিকুলাম সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে। ২. নম্বরভিত্তিক দু’টি সাময়িক লিখিত পরীক্ষা (৬০ নম্বর) চালু রাখতে হবে এবং ধারাবাহিক মূল্যায়ন হিসেবে ৪০ নম্বর রাখতে হবে। ৩. নবম শ্রেণী থেকেই শিক্ষার্থীর আগ্রহ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচনের সুযোগ অথবা বিজ্ঞান বিভাগ রাখতে হবে। ৪. ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ ইত্যাদি নির্দেশক বা ইন্ডিকেটর বাতিল করে নম্বর ও গ্রেডভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি রাখতে হবে। ৫. সবসময় সব শিখন, প্রোজেক্ট ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক ক্লাসের ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে এবং স্কুল পিরিয়ডেই সব প্রোজেক্ট সম্পন্ন হতে হবে। ৬. শিক্ষার্থীদের দলগত ও প্রোজেক্টের কাজে ডিভাইসমুখী হতে অনুৎসাহিত করতে হবে এবং তাত্ত্বিক বিষয়ে অধ্যয়নমুখী করতে হবে। ৭. প্রতি বছর প্রতি ক্লাসে নিবন্ধন ও সনদ দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে, প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা চালু রাখতে হবে এবং এসএসসি ও এইচএসসি দু’টি পাবলিক পরীক্ষা বহাল রাখতে হবে। ৮. সবসময় সব শ্রেণীতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের আগে অবশ্যই তা মন্ত্রিপরিষদ ও সংসদে উত্থাপন করতে হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/794071