২৪ নভেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ৩:৪৯

বিদেশফেরত ৭৪% কর্মী ক্ষতিগ্রস্ত

বিদেশ গিয়ে বিমুখ হয়ে ফেরা ৭৪ শতাংশ বাংলাদেশি কর্মী অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ শতাংশ মানসিকভাবে, ৯ শতাংশ শারীরিকভাবে ও ১ শতাংশ সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর এক হোটেলে ‘অসময়ে ফিরে আসা’ শীর্ষক পরামর্শ সভায় এ জরিপের তথ্য প্রকাশ করেছে অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরু।

পরামর্শ সভায় বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে লক্ষাধিক কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যান।

তবে কাজ না পেয়ে, আটকে থেকে ও নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে বেশির ভাগ কর্মীকে ফিরে আসতে হয়।

২০২০ সালের পর বিদেশফেরত ২১৮ জন কর্মীর ওপর জরিপ চালায় রামরু। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক মাস এই জরিপ চালানো হয়। এই ২১৮ জন কর্মীর মধ্যে ৪২ জন নারী।

রামরুর জরিপের তথ্যানুযায়ী, বিদেশ থেকে ২০ শতাংশ কর্মী চুক্তি অনুযায়ী কাজ ও বেতন না পেয়ে ফিরে এসেছে। ১৫ শতাংশ কর্মী কোনো ধরনের কাজ না পেয়ে ফেরত এসেছে। এ ছাড়া আটক হয়ে ১৬ শতাংশ, কম বেতনে ১৪ শতাংশ, শারীরিক অসুস্থায় ১২ শতাংশ, অবৈধ ভিসায় ১০ শতাংশ, নিয়োগকর্তার নির্যাতনে ৮ শতাংশ, স্বেচ্ছায় ৩ শতাংশ ও অন্যান্য কারণে ৬ শতাংশ কর্মী ফেরত আসে।

জরিপের তথ্য মতে, আটক হওয়া কর্মীদের মধ্যে ৪৭ শতাংশের কাজের অনুমতি ছিল না।

৩২ শতাংশ কর্মীকে গ্রেপ্তারের পর ওই দেশে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মস্থল থেকে পালিয়ে যায় ১২ শতাংশ ও চাকরির সন্ধান করতে গিয়ে আটক ৩ শতাংশ।

রামরুর জরিপে দেখা যায়, বিদেশে যাওয়া কর্মীদের মধ্যে ৩০ দিনের ভেতর ১৫ শতাংশ কর্মী ফিরে এসেছে। এক থেকে তিন মাসের মধ্যে ফিরে এসেছে ১৪ শতাংশ কর্মী। তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ফিরেছে ২৯ শতাংশ।

৬ থেকে ১৬ মাসের মধ্যে ফিরেছে ৪৩ শতাংশ।

রামরুর জরিপে দেখা গেছে, বিদেশ যাওয়া কর্মীদের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ কর্মী রিত্রুদ্ধটিং এজেন্সির মাধ্যমে গেছে। ৭৪ শতাংশ কর্মী গেছে দালালদের মাধ্যমে। ৯ শতাংশ কর্মী গেছে আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে।

রামরুর জরিপ অনুযায়ী, ফিরে আসা কর্মীদের মধ্যে নির্মাণ খাতের ১৫ শতাংশ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ১১ শতাংশ, গৃহকর্মী এবং মালপত্র খালাসের কর্মী ১৮ শতাংশ ও কাঠমিস্ত্রি এবং কৃষি খাতের শ্রমিক ১ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘বর্তমান প্রক্রিয়ায় লোক পাঠাতে থাকলে ফিরে আসবেই। এটা শুধু মাথা গুনে লোক পাঠানোর প্রক্রিয়া। পুরো প্রক্রিয়ার সংস্কার দরকার। তারা ভিসা বাণিজ্য করে, কিন্তু স্বীকার করে না। এ জন্য সংশ্লিষ্ট দেশকে জবাবদিহি করাতে হবে। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফর বলেন, ‘তিন লাখ টাকা খরচ করে যিনি কাজ না পেয়ে ফিরে আসেন, তিনি আসলে পাচারের শিকার। এর জন্য সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে। দালালদের জবাবদিহির আওতায় আনা যায় না। তাই জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র পর্যন্ত বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠানো হচ্ছে। এতে কর্মীরা যাচাই করে বিদেশে যেতে পারবেন।’

 

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/11/24/1339191