২৩ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৮:০৭

খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা দাঁড়ালো

 

বিশেষ সুবিধা দেয়ার পরও কমছে না ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায়। খেলাপি ঋণের এই পরিমাণ গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা বা ১৫.৬৩ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে শ্রেণিকৃত ঋণের হার দাঁড়িয়েছে মোট ঋণের ৯.৯৩ শতাংশে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯.৯৩ শতাংশ। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ হাজার এক কোটি টাকা বেশি। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করপোরেট গভর্ন্যান্স ও খেলাপি ঋণকে ব্যাংকিং খাতের বড় দুই সমস্যা। ব্যাংকখাতে প্রধান এ সমস্যা মোকাবিলায় ঢালাওভাবে ছাড় নয় বরং পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। পাশাপাশি নৈতিকতার অনুশীলন প্রয়োগেরও পরামর্শ তাদের।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা।

এর মধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০.১১ শতাংশ। প্রান্তিকটিতে দেশের ইতিহাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে খেলাপি ঋণ।

আর মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা মোট ঋণের ৮.৮০ শতাংশ। সে হিসাবে ৬ মাসের মাসের ব্যবধানে সবশেষ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে ২৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা বেড়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার শর্ত জুড়ে দেয়। আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। সব শেষ প্রতিবেদন মতে, খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে এলো, অর্থাৎ ৯.৯৩ শতাংশ।

আইএমএফ’র ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত হচ্ছে- রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা। তবে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আইএমএফ’র শর্ত মতে, পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি দেখাতে হবে। সেক্ষেত্রে আইএমএফ’র হিসাবে খেলাপি দাঁড়াবে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। 

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছিলেন, করপোরেট গভর্ন্যান্স ও খেলাপি ঋণকে দেশের ব্যাংকিং খাতের বড় দুই সমস্যা। খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের আরও ভূমিকা নিতে হবে। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মীর্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে তথ্য দেয়, বাস্তবে তা আরও বেশি। খেলাপি হওয়ার পরে পুনঃতফসিল করা ঋণও খেলাপি, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তা দেখায় না। খেলাপি হওয়ার পরে গ্রাহক উচ্চ আদালতে গিয়ে স্থিতিবস্থার আদেশ নিয়ে আসে। ওই ঋণকেও খেলাপি দেখানো হয় না। আবার কোনো ঋণ খেলাপি হলে অবলোপন করতে পারে বাণিজ্যিক ব্যাংক। অবলোপন বা রাইট অফ হচ্ছে মন্দ মানের ঋণকে ব্যাংকের স্থিতিপত্র থেকে (ব্যালেন্স শিট) বাদ দিয়ে পৃথক হিসাবে রাখা। বর্তমানে অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

https://mzamin.com/news.php?news=84833