২৩ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৭:১৬

৯ ব্যাংকে দুর্বল ব্যবস্থাপনা

প্রভিশন ঘাটতি ২৯ হাজার কোটি টাকা

সাধারণ আমানতকারীদের রাখা অর্থের সুরক্ষা দিতে আদায় অযোগ্য মন্দমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হয়। এতে ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী থাকে। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে না পারলেই ঝুঁকির মুখে পড়ে ব্যাংকগুলো। তাতে ভবিষ্যৎ দায় পরিশোধের সক্ষমতা কমে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দুর্বল হয়ে পড়েছে ৯ ব্যাংক। ওই ব্যাংকগুলো কাক্সিক্ষত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারছে না। উপরন্তু সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিয়েছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না। এতে মূলধনের পাশাপাশি সুদ আদায়ও হচ্ছে না। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে ব্যাংকগুলোর মুনাফার ওপর। মুনাফা কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো এখন প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এভাবে প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে গেলে ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকের ঋণখেলাপি হয়ে গেলে খেলাপি ঋণের ধরনভেদে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। কোনো ঋণ নিম্ন মানের খেলাপি হলে ওই ঋণের বিপরীতে ২৫ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর সন্দেহজনক মানের খেলাপি হলে ৫০ শতাংশ এবং কুঋণ বা আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশই কুঋণ বা আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণ। অর্থাৎ এসব ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকগুলোকে মামলায় যেতে হচ্ছে। কুঋণ পরপর তিন বছর আদায় না হলে ওইসব ঋণকে ব্যাংকগুলোর বাধ্যতামূলকভাবে অবলোপন করতে হয়। আর এ অবলোপন ঋণ যত বেশি হবে, ব্যাংকের ঝুঁকি তত বেশি বাড়বে। এখন অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করা হলে ঝুঁকির মাত্রা কমে যায়। কিন্তু বছরের পর বছর এসব ঋণ আদায় হচ্ছে না। আবার কিছু ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির কারণে এ ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, মূলত আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণেই ব্যাংকগুলো যথাযথভাবে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ১২ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ১৩ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। তবে ব্যাংকভেদে পর্যালোচনা করলে ৯ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, প্রভিশন ঘাটতির তালিকায় সবচেয়ে বেশি ঘাটতি দেখা দিয়েছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের। বিভিন্ন দুর্নীতি এবং অনিয়মের কারণে বেশ আলোচিত এই ব্যাংকটি। তাই অন্যদের তুলনায় আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ আদায় বেশ পিছিয়ে তারা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫১৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। খেলাপিসহ অন্যান্য ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটির প্রভিশনের প্রয়োজন ছিল ১৫ হাজার ৬৮১ কোটি ৮১ লাখ। কিন্তু ব্যাংকটি এক হাজার ৮৮৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাই ১৩ হাজার ৭৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঘাটতিতে পড়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। ঘাটতির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। কারণ সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি চার হাজার ৬০০ কোটিতে পৌঁছেছে। তথ্য মতে, ১৬ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে ব্যাংকটির ঋণ, যা ব্যাংকের মোট বিতরণের ২৪ শতাংশেরও বেশি। প্রভিশন ঘাটতিতে এরপরেই রয়েছে বেসিক ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল চার হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল চার হাজার ১৯৮ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৫৪২ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ৩৯৯ কোটি, এনসিসি ব্যাংকের ৩৩৫ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ২৩৪ কোটি এবং নতুন প্রজন্মের মধুমতি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৯০ লাখ টাকা।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/793558