২২ নভেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৫:১৫

গণতন্ত্রের জানাযা ও আব্রাহাম লিংকনের বিদেহী আত্মার কান্না

-ড. মো. নূরুল আমিন

অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত মনে আমাকে আজকের নিবন্ধটি লিখতে হচ্ছে। এর কারণ অনেকগুলো। প্রথমত শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে গঠনতন্ত্রে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও কালেমায়ে তাইয়্যেবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে আকীদা হিসেবে বিধৃত করায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মামলা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে এই দলটি নিজ পরিচয় ও প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। গণমানুষের দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়তে ইসলামীর গণভিত্তি ব্যাপক। যোগ্যতা, সততা, নিষ্ঠা, শৃঙ্খলানুবর্তিতা, দেশপ্রেম ও দুর্গত মানুষের সেবা ও তাদের প্রতি কার্যকর সহানুভূতি প্রদর্শন এবং ভালো মানুষ তৈরির উদ্দেশ্যে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দৃষ্টিকোণ থেকে এই দলটির ভূমিকা অনন্য। সারা দেশের নারী-পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রী মিলিয়ে এই দলটির সাথে প্রায় ৪ কোটির বেশি লোক সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন। শতকরা হিসাবে যা জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে রাজনীতি করার, তাদের মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার এই রায় রাষ্ট্রীয় দেউলিয়াপনা, একনায়কতন্ত্র ও সরকারের গণনির্যাতনকে উৎসাহিত করবে।

বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াত ১১টির মধ্যে ১০টি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ছাড়াও ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোটের কোয়ালিশন সরকারের অংশীদার হিসেবেও কাজ করেছেন এবং যোগ্যতা, সততা, দক্ষতার দিক থেকে জামায়াতের দু’জন মন্ত্রী ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায় বহাল থাকায় দেশ সৎ ও যোগ্য লোকের প্রতিনিধিত্ব, শাসন ও সেবা থেকে বঞ্চিত হবে।

দেশকে এখন বিরোধী দল শূন্য নির্বাচনের নামে অশুভ নাটক মঞ্চস্থ করার মহড়া চলছে। গত ১৫ বছরে সরকার বিএনপি জামায়াতের প্রায় অর্ধকোটি লোকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাদের জেল-জরিমানার শিকার বানিয়ে রাজনৈতিক ময়দান থেকে বিতাড়িত করে এখন আবার নতুন মামলায় প্রতিদিন শত শত লোককে গ্রেফতার করছে এবং নিজেদের মতো করে আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সিডিউল ঘোষণা করেছে। এই নির্বাচনেও গত দুটি নির্বাচনের ন্যায় আমি ভোটাধিকার বঞ্চিত থাকার আশঙ্কা করছি। আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট না দিতে পারার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেছে।

আমি ১৯৬৪ সালে প্রথম ভোটার হই এবং তখন থেকে আজ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে দু’টি নির্বাচন ছাড়া আর সবগুলো নির্বাচনে আমার বাড়িতে প্রার্থীরা ভোট চাইতে এসেছেন এবং আমিও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়েছি। দু’বার আমি ভোট দিতে পারিনি তার কারণ ১৯৭৩ এবং ১৯৭৯ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য আমি আমার ভোট দিতে পারিনি। কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আমি সকল দায়িত্বমুক্ত একজন ভোটার ছিলাম এবং আমাদের সংবিধানে যাদের দেশের মালিক বলা হয়েছিল তাদেরই একজন ছিলাম। কিন্তু আমার মত দেশের মালিকের কাছে কেউ ভোট চাইতে আসেনি এবং আমার নির্বাচনী এলাকায় শুধু আমি কেন কেউই ভোট দিতে পারেনি। তাদের ভোট ছাড়াই এমপি নির্বাচিত হয়ে গেছেন। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইমামতিতে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মৃত্যু ও তার জানাযা অনুষ্ঠান। তিনি তার বহু বক্তৃতা-বিবৃতি, অঙ্গীকার প্রতিশ্রুতিতে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার কথা বলতেন। কিন্তু তার হাতে ভোটাধিকারের এই অপমৃত্যু বিশ্ববাসীকে শোকাভিভূত করেছে। আমার পক্ষেও শোক সংবরণ করা সম্ভবপর হচ্ছে না। তার অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে ৩০০ সদস্যের মধ্যে ১৫৩ জন সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ১৪৭টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক, পত্র-পত্রিকা এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ভোটার ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন। তবে তাদের সবাই যে ভোট দিতে পেরেছেন তা বলা যাবে না। টেলিভিশন চ্যানেলসমূহে প্রচারিত খবরে দেখা গেছে যে, অনেকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তালিকায় তাদের নাম খুঁজে পাননি। আবার অনেকে বিস্ময়ের সাথে দেখেছেন তাদের ভোট দেয়া হয়ে গেছে। ৪১টি নির্বাচনী কেন্দ্রে ১টি ভোটও পড়েনি। আওয়ামী লীগ কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়েও ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে পারেননি। ৩৭টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৩ থেকে ৫টি। আবার ২৯টি কেন্দ্রে ৮৭৮৭২টি ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ২৯৪টি। গড়ে প্রায় ১০টির মতো। ২০১৮ সালে যে দিন ভোট হবার কথা ছিল তার আগের দিন রাতে প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় শাসক দল, তাদের অনুকূলে ব্যালটপেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে নির্বাচনী বিজয় লাভ করেছে।

আমি ৩০০ আসনের সামগ্রিক হিসাব কষে দেখেছি যে, এই নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রাপ্ত গড় ভোটের পরিমাণ ২.৪ শতাংশের মতো। সরকার অবশ্য ভোটার উপস্থিতির হার তাদের মনমতো করে অনেক বেশি দেখিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট এবং পর্যবেক্ষক সংস্থা ফেমা’র তথ্য যদি বিবেচনায় আনা হয় তাহলে ভোটার উপস্থিতির হার ১০ শতাংশের নীচে থাকে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে ৫৩৯টি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছিল। ২০ জন প্রার্থী জাল ভোট, কেন্দ্র দখল এবং পোলিং এজেন্টদের পিটিয়ে বের করে দেয়ার অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছেন। ভোটার না পেয়ে আওয়ামী প্রার্থীদের অনুপ্রেরণায় নির্বাচনী কর্মকর্তারাও ফ্রি স্টাইলে ব্যালট পেপারে সিল মেরেছেন। নির্বাচনের ইতিহাসে অভূতপূর্ব এই ঘটনাকে কোন কোন পত্রিকা টেবিল ক্যাস্টিং নাম দিয়েছেন। আবার এই ক্ষেত্রে এক বাপের বেটা একাই ৪৭৫টি ভোট দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এই রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে পাবনা-১ আসনে বেড়ার পাইকরহাটি শহীদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ছেলে রঞ্জন এই রেকর্ডটি সৃষ্টি করেছেন। একদিকে ভোটারের অনুপস্থিতি অন্যদিকে জাল ভোট, ব্যালট ছিনতাই ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্র দখল সবমিলিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনকে এক অনন্য মাত্রা প্রদান করেছিল এবং এই কলঙ্কের একমাত্র অনুঘটক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ক্ষমতালিপ্সা দেশকে এবং দেশবাসীর নৈতিকতাকে রসাতলে নিয়ে ঠেকিয়েছে। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবী ও বাংলাদেশ সরকারের একজন সাবেক সচিব ও ইসলামী চিন্তাবিদ মরহুম জনাব শাহ আব্দুল হান্নান নির্বাচনী এই পরিহাসের মধ্যে চারটি বাস্তবতা খুঁজে পেয়েছিলেন। তিনি বলেছেন যে, এই নির্বাচন দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর মানুষের কোন আস্থা নেই। দ্বিতীয়ত নির্বাচন কেন্দ্রে ভোটারের অনুপস্থিতি সরকারের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, মানুষ বিরোধী দলের দাবি অনুযায়ী নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনে বিশ্বাসী। তৃতীয়ত এই প্রহসন ও পাতানো নির্বাচন বর্জন করে তারা এটাও প্রমাণ করেছেন যে, একটি প্রতিহিংসাপরায়ণ ও ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতিতে যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে সরকার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্মূল করার যে ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং করছেন তার প্রতি জনগণের বিন্দুমাত্র সমর্থন নেই। এর ফলে সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে না বরং কমছে। এর চতুর্থ শিক্ষা হচ্ছে- সরকার জামায়াত-শিবির-বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপর জঙ্গীবাদের অপবাদ চাপিয়ে দেয়ার যে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন দেশের মানুষ তা গ্রহণ করেননি। সরকারের জন্য এটা অত্যন্ত লজ্জার ও কলঙ্কের।

আমার দুঃখ ভারাক্রান্ত হবার অন্য কারণটি হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রীর অধীনে অনুষ্ঠিত এই পাতানো ও প্রহসনমূলক নির্বাচনে অসংখ্য লোকের প্রাণহানি এবং হাজার হাজার লোকের মর্মান্তিক আহত হবার ঘটনা। হতাহতের বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটেছে পুলিশের গুলীতে। একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশের মানুষ সরকারি নির্দেশে সরকারি বাহিনীর গুলীতে পাখির মতো প্রাণ হারানো ও আহত হবার ঘটনা বিরল। তারা বাক-স্বাধীনতা, নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত। অধিকার আদায়ের জন্য অকাতরে তারা প্রাণ দিচ্ছেন। নিহত ব্যক্তিদের রূহের মাগফিরাত এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ মজলুম। তারা জালেমের নির্যাতন থেকে মুক্তি চায়।

প্রধানমন্ত্রীর দল ও সাবেক মন্ত্রিসভার অন্যতম গোপালভাড় হিসেবে কথিত ড. মখা আলমগীর নির্বাচন শেষে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের আব্রাহাম লিংকন বলে অভিহিত করেছিলেন। গণতন্ত্রের জন্য আব্রাহাম লিঙ্কনের অঙ্গীকার এবং তার ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অবদান বিশ্বের ইতিহাসে লাল অক্ষরে লেখা রয়েছে। তার বিখ্যাত গেটিসবার্গ ভাষণ তাকে গণতন্ত্রের পিতার আসনে বসিয়েছে। গণতন্ত্র যতদিন থাকবে ততদিন তার প্রদত্ত গণতন্ত্রের সংজ্ঞা ইতিহাস থেকে কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। কিন্তু তারও একটা ইতিহাস আছে। আব্রাহাম লিংকন ১৮৬১ সাল থেকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তার সময়টি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ; গৃহযুদ্ধ-উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার রাজ্যগুলোকে নৈরাজ্যের প্রান্তসীমায় নিয়ে গিয়েছিল। হাজার হাজার লোক এই গৃহযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন তার মেধা, চারিত্রিক মাধুর্য, দূরদর্শিতা, দক্ষতা, যোগ্যতা ও দেশপ্রেমমূলক মানবিকতা দিয়ে এই গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিলেন। ১৮৬৩ সালের ১৯ নবেম্বর গৃহযুদ্ধের অন্যতম ক্ষেত্র গেটিসবার্গকে  National Cemetery হিসেবে ঘোষণার প্রাক্কালে তিনি একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। তার ভাষণের শেষাংশ ছিল, ‘It is rather for us- to be here dedicated to the great task remaining before us that from these honoured dead we take increased devotion to that cause for which they gave the last full measure of devotion; that we here highly resolve that these dead shall not have died in vain; that this nation, under God, shall have a new birth of freedom; and that government of the people by the people, for the People shall not perish from the earth.’

মার্কিন গৃহযুদ্ধ ছিল শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। দেশের একাংশকে আরেকাংশ দাস বানিয়ে রেখেছিল, তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম। লিংন এক্ষেত্রে সংহতি এনে স্থায়ী সমাধানের মাধ্যম হিসেবে গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করে তার বাস্তবায়ন করেছেন। যার ফলে আজকের আমেরিকায় কালো ক্রীতদাসের বংশধররা প্রেসিডেন্ট হবার সুযোগ পেয়েছেন। লিংকন হতাহতদের যথাযথ মর্যাদা দিয়েছেন। শেখ হাসিনা দেশকে বিভক্ত করে গৃহযুদ্ধ উসকিয়ে দিয়ে এবং গণতন্ত্রকে হত্যা করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নিকৃষ্ট নজির স্থাপন করে কিভাবে লিংকন হতে পারেন দেশবাসীর কাছে তা বোধগম্য নয়। মখা আলমগীর বুদ্ধিবৃত্তি এবং ইতিহাস জ্ঞানের দিক থেকে এতই দেউলিয়া তা আগে অনেকেরই জানা ছিল না। তার এই জ্ঞানের বহর থেকে আমরা এখন হতভম্ব না হয়ে পারলাম না। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের এই অবস্থা দেখে লিংকনের আত্মা নিশ্চয়ই আর্তনাদ করছেন। বাংলাদেশে আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকারের সকল মন্ত্রী-উপমন্ত্রীরই একই দশা। 

শেষ করার আগে পাঠকদের আরেকটা খবর দেই। জার্মানীর ওজি ভ্যান হেলেনের নেতৃত্বে গঠিত একটি মানবাধিকার সংস্থা বিশ্বের একশত স্বৈরাচারী শাসকের একটি তালিকা প্রণয়ন করেছেন এবং তার মধ্য থেকে ১০ জন নিকৃষ্ট স্বৈরাচারীকে (Worst Dictator) চিহ্নিত করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম নিষ্কৃষ্ট এই স্বৈরাচারীদের তালিকার শীর্ষে স্থান পেয়েছে। তার ক্রেডেনসিয়েলে যে সব ‘কৃতিত্বের’ কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ২০১৩ সালের মে মাসে মাত্র ৪৫ মিনিটে ২৫০০ নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের হত্যা, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা কর্মকর্তা ও বিডিআর সদস্য মিলিয়ে শতাধিক ব্যক্তির গণহত্যা, রানা প্লাজার ভবন ধসে বিদেশী উদ্ধার তৎপরতা প্রত্যাখ্যান ও তিন সহস্রাধিক লোকের প্রাণহানি ত্বরান্বিত করা, সিএনএন-এর সাংবাদিকদের ধ্বংসযজ্ঞের স্থান পরিদর্শনে বাধা প্রদান, দলীয় সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে হাজার হাজার লোকের খুন ও গুম এবং নিরস্ত্র প্রতিবাদকারী বিরোধী দলীয় কর্মীদের ওপর পুলিশকে গুলীবর্ষণের নির্দেশ প্রদান, মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের বিধান বাতিল করে প্রহসন ও পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রচেষ্টা, দেশকে গৃৃহযুদ্ধের মুখে ঠেলে দেয়া এবং অত্যন্ত নির্মমভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার অব্যাহত প্রচেষ্টা চালানো। 

এই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছেন জার্মানীর এডলফ হিটলার। তৃতীয় স্থানে রাশিয়ার স্ট্যালিন, চতুর্থ স্থানে চীনের মাও সেতুং, পঞ্চম স্থানে সিরিয়ার বাশার আল আসাদ, ষষ্ঠ স্থানে উত্তর কোরিয়ার ২য় জং; এবং দশম স্থানে কম্বোডিয়ার পলপট। শেখ হাসিনার প্রাপ্ত নম্বর হচ্ছে ৪০, হিটলারের ১০, স্ট্যালিনের ০৮, মাও সেতুয়ের  ০৫ এবং অন্যান্যদের ২ থেকে ৩। জাতীয় সংসদের দশম নির্বাচন বিশেষ করে নির্বাচনকে উপলক্ষ করে শত শত লোকের হত্যা ও নির্যাতন, বিনা ভোটে এমপি নির্বাচন এবং তার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনসমূহে আসন ও ভোট কেন্দ্রসমূহে ভোটারের অনুপস্থিতি ও সরকারের একগুঁয়েমিকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষই এখন বিচার করতে পারেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী সত্যিকার অর্থে আব্রাহাম লিংকনের সমমর্যাদার না পৃথিবীর নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারী শাসকদের শীর্ষে অবস্থানকারী ব্যক্তি।

https://dailysangram.info/post/541200