১৬ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২:৪৭

বিশ্বব্যাংকের খাদ্য নিরাপত্তা প্রতিবেদন

খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় বাংলাদেশ

যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায় বিশ্বের অনেক দেশেই বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। এর মধ্যে ব্যাপক খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। বিশ্বব্যাংকের হালনাগাদ খাদ্য নিরাপত্তা প্রতিবেদনে এমন চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানে, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

খাদ্য নিরাপত্তা প্রতিবেদনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৩৩.১ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২.৪ শতাংশ, তৃতীয় নেপালের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯.০ শতাংশ (আগস্টের হিসাব)। এ ছাড়া বাকি দেশগুলোর খাদ্য মূল্যস্ফীতি যথাক্রমে ভারতের ৬.৩ শতাংশ, ভুটানের ৬.১ শতাংশ, মালদ্বীপের ৫.৫ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কার (-) ৫.২ শতাংশ। অর্থাৎ এই দেশটির খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ছে না, বরং আগের চেয়ে কমতির দিকে রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। ৫২.৪ শতাংশ নিম্ন আয়ের দেশ, ৮৮.৬ শতাংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশ এবং ৬১ শতাংশ উচ্চমধ্যম আয়ের দেশগুলোতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের বেশি। কোনো কোনো দেশে দুই অঙ্কের ঘরে। এ ছাড়া উচ্চ আয়ের ৬৭.৩ শতাংশ দেশও উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে।

দেশগুলোতে প্রকৃত হিসাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সার্বিক মূল্যস্ফীতিকে অতিক্রম করে গেছে।

বিশ্বব্যাংক জানায়, নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য খাদ্য নিরাপত্তা বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। গত কয়েক বছর যাবৎই এই পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এই প্রবণতা বাড়ছে। এফএও এবং ডাব্লিউএফপি এক প্রতিবেদনে ক্ষুধার্ত হিসেবে বিশ্বের ১৮টি হটস্পট চিহ্নিত করেছে।

যাদের জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। এর মধ্যে বুরকিনা ফাসো, মালি, ফিলিস্তিন, দক্ষিণ সুদান ও সুদান ক্ষুধার্ত হটস্পট হিসেবে সর্বোচ্চ উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। এসব এলাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।

এর আগে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানায়, গত অক্টোবর মাসে বিশ্বজুড়ে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম। যদিও স্বল্পোন্নত দেশগুলো উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে। এর অন্যতম কারণ মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার দরপতন। এফএও জানায়, গত মাসে দুগ্ধপণ্য ছাড়া প্রায় সব খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে। এর মধ্যে চালের দাম কমেছে ২.০ শতাংশ, গমের দাম কমেছে ১.৯ শতাংশ, ভোজ্য তেলের দাম কমেছে ০.৭ শতাংশ, চিনির দাম কমেছে ২.২ শতাংশ এবং মাংসের দাম কমেছে ০.৬ শতাংশ। তবে দুগ্ধপণ্যের দাম বেড়েছে ২.২ শতাংশ।

এদিকে এফএওর গ্লোবাল ইনফরমেশন এবং আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের পাশাপাশি গাজা যুদ্ধের কারণে বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। ফলে খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমলেও বেশির ভাগ স্বল্পোন্নত দেশ এর সুবিধা পাবে না, কারণ ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার দরপতন হচ্ছে। বিশেষ করে আফ্রিকার ৩৩ দেশসহ বিশ্বের মোট ৪৬ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বহির্বিশ্বের সহযোগিতা প্রয়োজন। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা। ২০২২ সালের হিসাবেই এই অঞ্চলের অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠী তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।

https://www.kalerkantho.com/online/business/2023/11/16/1336680