১৬ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২:৩৮

বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে উদ্বেগ

সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশের তাগিদ জাতিসঙ্ঘ বিশেষজ্ঞদের

বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেফতার, রাজনৈতিক কর্মীদের গণগ্রেফতার, ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সহিংসতা, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ, প্রতিবাদ বিক্ষোভে বাধা সৃষ্টি করতে ইন্টারনেট শাটডাউন এবং হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রতিশোধ হিসেবে নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের বেআইনিভাবে আটকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞরা (স্পেশাল রেপোর্টিয়ার)।

অবাধ ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের জন্য নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে চাপ দেয়ার জন্য বিশেষজ্ঞরা মানবাধিকার পরিষদ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

 

জেনেভা থেকে গত মঙ্গলবার রাতে দেয়া এক বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞরা বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করা রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে থাকা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ ক্র্যাকডাউন, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী এবং নাগরিক সমাজের নেতাদের বিরুদ্ধে বিচারিক হয়রানি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার জন্য আইন সংস্কারে বাংলাদেশের ব্যর্থতা গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েক বছর ধরে হামলা, নজরদারি, ভীতি প্রদর্শন ও বিচারিক হয়রানির ফলে গণমাধ্যম ব্যাপকভাবে স্বেচ্ছায় সেন্সরশিপ চালিয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, নাগরিক সমাজের নেতাদের বিরুদ্ধে আক্রমণে বিচারিক ব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে। বিচার বিভাগীয় হয়রানির একটি উদাহরণ হলো, অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে মামলা। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দুই বছর তদন্ত করার পর প্রসিকিউশন তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছে। বারবার শুনানি করা হয়েছে। তার ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এতে তার পেশাদার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সেক্রেটারি এবং পরিচালককে মিথ্যে তথ্য প্রকাশের দায়ে অভিযুক্ত করে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১৩ সালে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ নিয়ে অধিকার তথ্য প্রকাশ করেছিল। ঘটনাটি কখনো তদন্ত করেনি বাংলাদেশ সরকার। গত বছর অধিকারের নিবন্ধন নবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। যখন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খান অথবা নাসিরুদ্দিন এলানের মতো নাগরিক সমাজের প্রখ্যাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য অভিযুক্ত করা হয়, তখন এর মধ্য দিয়ে সব সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীর কাছে একটি হিমশীতল বার্তা দেয়া হয়। আর তা হলো, যেকোনো ভিন্নমত বা সমালোচনামূলক মতামত ভয়াবহ শাস্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে, তা যতটাই ক্ষোভ সৃষ্টির বিষয় হোক বা যত প্রসিদ্ধ ব্যক্তিই হোন না কেন। এতে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক কমপক্ষে পাঁচ হাজার ৬০০ মামলা আছে। এর মধ্যে সুপরিচিত সম্পাদক ও সাংবাদিকরদের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। বহুল বিতর্কিত (অধুনালুপ্ত) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) অধীনে এসব মামলা এখন মুলতবি অবস্থায় আছে। পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সামান্য উন্নতি করা হয়েছে। এতে পুরনো অনেক ত্রুটিপূর্ণ ধারা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এটি স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকারকে হুমকিতে ফেলেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদে ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) বাংলাদেশের জন্য শুধু মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার একটি সুযোগই নয়, তা একই সাথে মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আক্রমণ বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ এবং দৃঢ়পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ। অবাধ ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের জন্য নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে চাপ দেয়ার জন্য মানবাধিকার পরিষদ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই। এসব ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের সাথে আমরা যোগাযোগ রাখছি। বিবৃতিদাতারা হলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক স্পেশাল রেপোর্টিয়ার ইরানি খান, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা বিষয়ক স্পেশাল রেপোর্টিয়ার ক্লেমেন্ট ভওলি এবং মানবাধিকার কর্মীদের পরিস্থিতি বিষয়ক স্পেশাল রেপোর্টিয়ার মেরি ললুর।

সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

গতকাল ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মিলার এই অভিমত ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসার জন্য ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বারবার আহ্বানের বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ২+২ বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অবস্থানের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ভিন্নমত পোষণ করে কি না জানতে চাইলে মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/791819