১৬ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২:২৭

চাল নিয়ে চালবাজি

চাল আমাদের প্রধান খাদ্যপণ্য। রুটি আমরা এখন খেতে শিখেছি বটে। তবুও চাল বা ভাত না হলে আমাদের চলে না। তাই চালের গুরুত্ব বাঙালির কাছে অনেক। আর চাল বা ধান আমাদের মাটিতে ফলেও ভালো। মাঠভরা সোনার ধান দেখে আমাদের চোখ জুড়ায়। মন ভরে। কবি কবিতা লেখেন মাঠের সোনারঙ ধান দেখে। তবে এ চাল নিয়ে চালবাজিও কম হয় না। বিশেষত সুযোগ পেলেই এক শ্রেণির ব্যবসায়ী চালের মূল্য বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়ান। 

কিছুদিন চালের বাজার কিছুটা স্থিতিশীলই ছিল। বর্তমানে মিলাররা বাজার অস্থিতিশীল করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তারা চাহিদা অনুযায়ী চাল সরবরাহ না করে মজুত করে রাখছেন। পাইকাররা চাল কেনার বেশি চাহিদা দিলেও আড়তদার বা মিলাররা চাল কম বিক্রির নাটক সাজাচ্ছেন। এভাবে কৌশলে বাজারে চালের সরবরাহ সংকটের অজুহাতে দাম বাড়ানো হচ্ছে। জানা যায়, সরকারের গুদামে চালের মজুত যথেষ্ট। পাশাপাশি মিল থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কোনও সংকট নেই। এরপরও বাজারে দাম বাড়ছে। এক মাসের ব্যবধানে মিল পর্যায়ে ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা। এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। বস্তুত সব নিত্যপণ্যের দামই এখন ঊর্ধ্বমুখী। এতে ভোক্তাদের দুর্ভোগ বাড়ছে। প্রশ্ন হলো, বাজারে যারা কারসাজি করে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করবার কথা যাদের, তারা কী করছেন? গত ২৬ আগস্ট ভারত চাল রফতানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যায়। ওই সময় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ফলন ভালো হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ধান-চালের মজুত যথেষ্ট রয়েছে। আমদানির দরকার নেই। চালের দাম সহনীয় পর্যায়েই থাকবে। কিন্তু বাস্তবে কি তা থেকেছে? থাকেনি।

ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগাম জাতের আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিছু এলাকায় সেচ সংকট ও পোকামাকড়ের আক্রমণ নিয়ে কৃষক চিন্তিত থাকলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় রোপা আমনের ভালো ফলনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। নতুন ধান বিক্রি শুরু হলেও চালের বাজারে অস্থিরতা চলছে। কয়েক বছর ধরেই এমনটি দেখা যাচ্ছে। যেহেতু ধান কাটার মৌসুমেও চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে, সেহেতু সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়ে কোনও সন্দেহই থাকে না। 

এ চক্রের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেয়ার কথা বারবার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়? সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ না হওয়ায় বোঝা যায়, কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। অতীতে দেখা গেছে, দফায় দফায় শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি খাতকে চাল আমদানির সুযোগ দেয়া হলেও ভোক্তারা এর সুফল পায়নি। এ থেকেই স্পষ্ট সিন্ডিকেটের শেকড় কতটা গভীরে বিস্তৃত। মানুষকে জিম্মি করে যারা অনৈতিক ব্যবসা করবার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। যেভাবেই হোক নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা দূর করা জরুরি। প্রয়োজনে চালব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখতে হবে।

https://www.dailysangram.info/post/540798