১৪ নভেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৫:২২

চালের বাজারে ফের অস্থিরতা

 

নিত্যপণ্যের বাজারে আলু, ডিম, পিয়াজ ও চিনির পর এবার চালের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল থাকার পর খুচরায় কেজিতে আরও ৪ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে প্রধান খাদ্যশস্য চালের দর। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা ও মাঝারি মানের চালের দাম। তবে সরু চালের দাম তুলনামূলক কম বেড়েছে। অথচ তথ্য বলছে, সরকারের গুদামে চালের মজুত পর্যাপ্ত রয়েছে। পাশাপাশি মিল থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কোনো সংকট নেই। এরপরও অস্থির হয়ে উঠছে পণ্যটির দাম। এবার চালের দাম বাড়ার পেছনে অবরোধকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে দেশে শুরু হয়েছে রোপা আমন ধান কাটা ও মাড়াই কাজ। নতুন ধান বাজারে বিক্রি করা শুরু করেছেন কৃষকরা। তবে চালের বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। 

বাজারে দেখা গেছে, পাইকারি ও খুচরা বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে সব ধরনের চাল।

পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই মুহূর্তে বাজারে চালের কোনো সংকট নেই। দাম বাড়তির বিষয়ে একে অপরকে দুষছেন মিল মালিক ও আড়তদাররা।

চালকল মালিকদের দাবি, অবরোধ ও হরতালের পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। মাঠ পর্যায়ে মজুত ফুরিয়ে আসছে। সে জন্য বাজার কিছুটা বাড়তি। কিছুদিন পর নতুন ধান উঠবে। তখন চালের বাজার স্বাভাবিক হবে।  

মিল মালিকদের কারসাজিতে সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে সরু ও মোটা চালের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। মোটা চালের দাম খুচরা বাজারে কেজিতে বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ টাকা। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পছন্দের মোটা চাল ব্রি-২৮ মানভেদে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। বাজারে মিনিকেট বলে পরিচিত চিকন চাল মানভেদে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং নাজিরশাইল মানভেদে ৬৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, খুচরা বাজারে মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম ২.০৪ শতাংশ বেড়েছে। মাঝারি আকারের চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২.৮৬ শতাংশ আর কেজিপ্রতি সরু চালের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে ২.২৭ শতাংশ।

৩৫২ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। এর মধ্যে ধান ৪৬৯ টন ও ১৪ লাখ ৬ হাজার ৮৩৮ টন চাল; যা একটি আদর্শ মজুত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে মোট চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৯১ লাখ টন। এ অর্থবছরে আউশ উৎপাদন হয়েছে ৩০ লাখ টন।

হাজার ৩০০ টাকা, যা এক মাস আগে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি বস্তা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকা, যা এক মাস আগে ২ হাজার ২০০ টাকা ছিল। আর প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা, যা আগে ২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই মিল পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বাড়তি দামে কেনায় প্রতি বস্তা মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল ২৩৫০-২৪০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে, যা আগে ২২০০ টাকা ছিল। বিআর-২৮ জাতের চালের বস্তা ২৫৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে, যা আগে ২৩০০ টাকা ছিল। আর মিনিকেট চালের বস্তা ৩১০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে, যা আগে ৩ হাজার টাকা ছিল।

আরেক চাল ব্যবসায়ী জানান, কয়েকদিন ধরে মিল পর্যায় থেকে চালের সরবরাহ করা হচ্ছে না। যে পরিমাণ চাল অর্ডার করা হচ্ছে, দিচ্ছে তার কম। একধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। 

এদিকে রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজারে মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫৫-৫৬, যা এক মাস আগে ৫০ টাকা ছিল। মাঝারি আকারের মধ্যে প্রতি কেজি বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা। আগে এ চালের দর ছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। আর প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা। এক মাস আগে ছিল ৬২ থেকে ৬৫ টাকা।

রাজধানীর চালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাবুবাজার। এখানকার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, সাধারণত প্রতিবছর মৌসুমের শেষদিকে চালের দামে কিছুটা পার্থক্য দেখা দেয়। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অবরোধ ও হরতালের প্রভাব। অবরোধে পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এতে বাবুবাজারে পাইকারিতে বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দাম বেড়েছে। 

বাজারে চাল কিনতে আসা বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তৌফিক বলেন, আগে থেকেই চালের দর বাড়তি দামে স্থির ছিল। এখন দাম বাড়ায় আমাদের জন্য তা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার বেতন বেড়েছে মাত্র ১ হাজার টাকা, কিন্তু খরচ বেড়েছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ অবস্থায় সংসার সামাল দিতে গিয়ে খুব বেগ পেতে হচ্ছে।

কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ধান কাটার মৌসুম এলেই মিলাররা চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ায়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। তাই মূল্য নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে বাজারে চাল কিনতে ক্রেতার ভোগান্তি বাড়বে।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন  চোকদার বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা ধানের মণে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাড়িয়েছেন। অনেকে চাল গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছেন। ফলে চালের দামও বেড়েছে।

বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, চালের দাম কেন বেড়েছে, তা তদারকি করা হচ্ছে। কোন পর্যায় থেকে দাম বৃদ্ধি হয়েছে, তা দেখা হবে। এ সময় অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানোর তথ্য পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে।

https://mzamin.com/news.php?news=83406