১৪ নভেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৫:২০

ভরা মৌসুমেও পর্যটকশূন্য দেশ

দিনে লোকসান শতকোটি

 

ভরা মৌসুমেও পর্যটকশূন্য দেশ। এতে দিনে লোকসান হচ্ছে শতকোটি টাকা। খালি পড়ে আছে হোটেল মোটেল রেস্তোরাঁ। পর্যটকশূন্য স্পটগুলোতেও চলছে হাহাকার। দিনের পর দিন গুনতে হচ্ছে বড় লোকসান। অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতে ব্যবসায়ীদের ঘুম হারাম। বিরোধী দলের ডাকা চলমান অবরোধেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যুরিজম ব্যবসায়ীরা।

পর্যটন খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সারা বছরের মধ্যে পর্যটন খাতে ব্যবসা হয় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। আর বাকি মাসগুলো সাধারণত খুব একটা ব্যবসা সফল হয় না। সে হিসেবে এখন ব্যবসার ভরা মৌসুম। কিন্তু চলমান অবরোধের কারণ সারা দেশের পর্যটন স্পটগুলো এখন পর্যটকশূন্য। বিদেশী পর্যটকতো দুরে থাক দেশী পর্যটকের দেখাও মিলছে না। অবরোধের কারণে দূলপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় মানুষ চলাচল করতে পারছেন না। ফলে ট্যুরিজম খাতে প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে প্রায় দুইশত কোটি টাকার।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ টোয়াব বলছে, দেশের পর্যটন স্পটগুলোর অন্যতম কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কুয়াকাটা, কুকরী-মুকরী, সিলেটসহ সব স্থানই এখন পর্যটকশূন্য। দেশে বিরোধী দলের ঢাকা চলমান অবরোধের কারণে কোথায় পর্যটকের দেখা মিলছে না। আর বিরাজমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদেশী পর্যটকও আসছেন না। ফলে প্রতিটি এলাকার হোটেল মোটেল খালি পড়ে আছে। এতে করে প্রতিদিন বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

 

টোয়াবের সাবেক এক নেতা জানান, করোনার পর এমন পরিস্থিতি আর কখনো হয়নি। বর্তমান সময়ে প্রতিদিন শতকোটির ব্যবসার পরিবর্তে দিনে সব মিলিয়ে প্রায় দ্ইুশত কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে।

তিনি জানান, প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই চার মাস পর্যটন ব্যবসার মৌসুম। এ সময় দেশের প্রতিটি পর্যটন স্পটে ভ্রমণে আসা মানুষের কোলাহলে মুখরিত থাকে। হোটেল মোটেলে রুম পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। যার কারণে বছরের শেষের দিকে তাদের প্রস্তুতিও থাকে ব্যাপক। কিন্তু এবারই হোঁচট খেতে হলো। সব প্রস্তুতির পরও অবরোধের কারণে পর্যটক শূন্যতায় হাহাকার চলছে। ফাঁকা পড়ে আছে হোটেল মোটেল। কোথাও কোলাহল নেই। তাইএ খাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের অলস সময় পার করতে হচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে করোনা সময়ের চেয়েও তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে তিনি জানান।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ জানান, কক্সবাজারে প্রায় পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রেস্টহাউজ ও রিসোর্ট রয়েছে। এতে প্রায় দেড় লাখ পর্যটক থাকার সুবিধা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে পর্যটক না থাকায় হোটেল মোটেল খালি পড়ে আছে। ফলে প্রতিদিন শত কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে।

সিলেট হোটেল মোটেল মালিক সমিতির একজন নেতা জানান, প্রতি বছর এমন সময়ে সিলেটে ভিড় করেন পর্যটক। হোটেল মোটেলে থাকার জায়গা পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। কিন্তু এবার উল্টো চিত্র। অবরোধে গাড়ি বন্ধ। তাই মানুষও ঘরবন্দী। ফলে পর্যটক নেই সেখানে। এতে করে সিলেটের জাফলং, শ্রীপুর, লালাখাল, শাহজালাল ও শাহপরাণের মাজার, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরসহ সবগুলো স্পট জনশূন্য।

বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, সেন্টমার্টিন, কোয়াকাটারসহ অন্যান্য স্পটগুলোরও একই অবস্থা। এতে করে নীলগিরি, রিজুক ঝরনা, চিম্বুক, নীলাচল, মেঘলা, স্বর্ণজাদি মন্দির, ন্যাচারাল পার্ক, কাপ্তাই হ্রদ চরফ্যাশনের কুকরী-মুকরী, জ্যাকব টাওয়ারসহ সব জায়গায় নীরবতা বিরাজ করছে। অন্য দিকে সুন্দরবনের একজন বন রক্ষক জানান, প্রতি বছর এমন সময়ে সুন্দরবনে পর্যটকদের ঢল নামে। কিন্তু এবার পর্যটক শূন্যতায় জাহাজগুলো অলস সময় পার করছে।

বিরাজমান পরিস্থিতিতে টোয়াব সভাপতি মো: শিবলুল আজম কোরেশী বলেন, করোনা পরিস্থিতির সময় যে ক্ষতি হয়েছিল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই অবরোধে আবারো তারা লোকসানের মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, হরতাল অবরোধ হলে মানুষ আতঙ্কে থাকে। তাই এমনিতেই বের হতে চায় না। এর মধ্যে গাড়ি বন্ধ থাকলেতো আর কথাই নেই। তাই সবার উচিত যে কোনো পরিস্থিতে দেশের আর্থিক স্বার্থকে আগে গুরুত্ব দেয়া। এতে করে দেশ বড় আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/791348