১৩ নভেম্বর ২০২৩, সোমবার, ৯:১৯

২৫ ফ্যাক্টরিতে ভাঙচুর ১৩০টি বন্ধ

যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি ভ্যালু কমেছে ৩৪.৭২ শতাংশ : বিজিএমইএ

বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত ২৫টি ফ্যাক্টরিতে ভাঙচুরের ঘটনা এবং ১৩০টি ফ্যাক্টরি বন্ধ আছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি বিজিএমইএ। অন্য দিকে ন্যূনতম মজুরি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেলেও শিল্পের সক্ষমতা সে অর্থে খুব বেশি বাড়েনি। চলতি ২০২৩ সালের প্রথম ৯ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পোশাক আমদানি ভ্যালু কমেছে ২২.৮১ শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানি কমেছে প্রায় ২৩.৩৩ শতাংশ। একই সময়ে সারা পৃথিবী থেকে আমদানি কমেছে ২৫.১৬ শতাংশ, আর বাংলাদেশ থেকে কমেছে ২৯.৩৭ শতাংশ। শুধু আগস্টেই বাংলাদেশ থেকে ভ্যালু কমেছে ৩৩.৭১ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে ৩৪.৭২ শতাংশ। গতকাল রোববার দুপুরে উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিজিএমইএ সভাপতি।

ফারুক হাসান বলেন, চলতি ২০২৩ সালের প্রথম ৮ মাসে ইউরোপের বৈশ্বিক আমদানি কমেছে ৯.৬১ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে কমেছে ১৩.৭১ শতাংশ। শুধু আগস্ট মাসেই কমেছে ২৬.০৬ শতাংশ। ২০২৩ সালের অক্টোবরে দেশের সামগ্রিক রফতানি অক্টোবর ২০২২ এর তুলনায় ১৩.৬৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে পোশাক রফতানির কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রকৃত রফতানি পারফরম্যান্স ২৮.৩৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের অন্যতম প্রধান বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের দরপতন শুরু হয়েছে, যেটা শিল্পের জন্য নতুন শঙ্কা তৈরি করছে। সার্বিকভাবে বিশ্ববাজার থেকে গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হওয়া পোশাকের দর ৮ দশমিক ০৩ শতাংশ কমেছে। একই মাসে (আগস্ট ২০২৩) বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হওয়া পণ্যের দর কমেছে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা যখন বৈশ্বিক ও আর্থিক চাপের মধ্যে থেকেই টিকে থাকার সংগ্রাম করছি, ঠিক তখন শিল্পকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা অপতৎপরতা। বিশেষ করে আমাদের শান্ত শ্রমিক গোষ্ঠীকে উসকানি দিয়ে অশান্ত করা হচ্ছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে সে লক্ষ্য করছি, মজুরি বৃদ্ধির পরও আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় কারখানা ভাঙচুর করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আশুলিয়া, কাশিমপুর, মিরপুর ও কোনাবাড়ি এলাকার প্রায় ১৩০টি পোশাক কারখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে কারখানার সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেসব কারখানা শ্রমিকরা কাজ করতে আগ্রহী, সেগুলোতে কাজ চলছে। তাদের কাজ চলমান থাকবে। দুঃখের বিষয় যে, যখন মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড কাজ করছিল, তখনো কারখানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

তিনি বলেন, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার ৮৮৫টি পোশাক কারখানা বিজিএমইএ-এর সদস্যপদ গ্রহণ করলেও কালের পরিক্রমায় তিন হাজার ৯৬৪টি সদস্য কারখানা বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট দুই হাজার ৯২১টি সদস্য কারখানার মধ্যে দুই হাজার ৩৩৯টি কারখানা বিজিএমইএ-তে তাদের সদস্যপদ নবায়ন করেছে। এই দুই হাজার ৩৩৯টি সদস্য কারখানার মধ্যে মাত্র এক হাজার ৬০০টি সদস্য কারখানা ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি অর্ডার এনে কাজ করছে। অর্থাৎ আমাদের এ মুহূর্তে সরাসরি রফতানিকারক কারখানার সংখ্যা মাত্র এক হাজার ৬০০টি।

তিনি আরো বলেন, সদস্যপদ নবায়ন করা দুই হাজার ৩৩৯টি কারখানার মধ্যে এক হাজার ৬০০ কারখানা বাদে বাকি কারখানাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কারখানা বিভিন্ন ব্যাংক দেনা ও দায়ের কারণে সরাসরি ব্যাক-টু-ব্যাক খুলতে পারছে না। ফলে তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি অর্ডার নিতে পারছে না। এই সদস্য কারখানাগুলো মূলত সাব-কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে। অবশিষ্ট কারখানাগুলো ব্যাংক দেনা ও আর্থিক সঙ্কটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে তারা আগামীতে দেনা পরিশোধ করে ব্যবসায় ফিরে আসতে ইচ্ছুক।

এ পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, শিল্পের উত্থানের সাথে পাল্লা দিয়ে বন্ধ কারখানার সংখ্যাও বাড়ছে। শুধু করোনা মহামারীর কারণে ২০২০-২১ সালে বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা ৩১৭টি এবং পরে অন্যান্য কারণে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে না পারার কারণে ২৬০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে বলেও জানান বিজিএমইএ সভাপতি।

 

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/791081