১২ নভেম্বর ২০২৩, রবিবার, ১০:৫৮

২০০ কারখানা বন্ধ, উভয় সংকটে মালিক-শ্রমিক

দেশের পোশাকশিল্পে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকদের একাংশের চলমান আন্দোলনে মালিক-শ্রমিক উভয়ে এখন সংকটে। গাজীপুর ও সাভার-আশুলিয়ায় ভাঙচুরের ঘটনায় প্রায় ২০০টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। এতে একদিকে মালিকরা যেমন রপ্তানি হারানোর শঙ্কায় আছেন, তেমনি শ্রমিকরা আছেন মজুরি হারানোর ভয়ে।

এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ উত্তরার কার্যালয়ে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ রবিবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

গতকাল শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গতকাল বিকেলে মজুরি বাড়ানোর আন্দোলনে মারা যাওয়া তিন শ্রমিকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিজিএমইএ। এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তারা এ তথ্য জানিয়েছে।

শিল্প পুলিশের তথ্য অনুসারে, গাজীপুর ও সাভার-আশুলিয়ায় পোশাক শিল্পাঞ্চলে দুই হাজারের বেশি কারখানা রয়েছে।

বিজিএমইএর নেতারা জানান, ভাঙচুরের ফলে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ২০০টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রেখেছেন মালিকরা।

গত ৭ নভেম্বর মূল মজুরি ৫৬.২৫ শতাংশ বাড়িয়ে পোশাক শ্রমিকদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করে সরকার। এই মজুরি প্রত্যাখ্যান করে ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করছে শ্রমিকদের একটি অংশ। এই প্রেক্ষাপটে মালিকরা কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন।

এর মধ্যে পোশাক কারখানা তুসুকায় গত বৃহস্পতিবারের হামলায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে মালিকপক্ষ।

তুসুকা গ্রুপের পরিচালক তারেক হাসানের ভাষ্য, গত বৃহস্পতিবারের ভাঙচুরে মেশিন, আসবাব ইত্যাদি ভেঙে ফেলায় তাঁদের সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কারখানা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে এক কোটি টাকা। 

তুসুকা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফয়জুর রহমান বাদল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আন্দোলনের নামে একটি মহল নাশকতা করছে, যা পোশাক খাতের জন্য অশনিসংকেত। পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে মালিক-শ্রমিক ও দেশের সব পক্ষকে মাসুল দিতে হতে পারে।

শ্রমিক নেতারা বলছেন, কারখানা বন্ধ করে মালিকরা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা তাঁদের নিজেদের লোক দিয়ে শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। একই সঙ্গে চলছে ছাঁটাই আর পুলিশের গ্রেপ্তার।

এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ কালের কণ্ঠকে বলেন, পোশাক শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিয়ে চলমান আন্দোলনে মালিকদের কারখানা বন্ধ রাখা, শ্রমিক ছাঁটাই, গ্রেপ্তার ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি সমস্যার সমাধান নয়, বরং শিল্পে চলমান সংকট আরো বাড়বে।

তিনি বলেন, কারখানায় নেতৃত্বে পর্যায়ের শ্রমিকদের কাজ থেকে বিরত রাখা এবং ছাঁটাই করা হচ্ছে। এসব না করে কারখানা দ্রুত চালু ও শিল্প এলাকায় কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুরের পোশাক অঞ্চলগুলোতে কারখানা বন্ধ করায় রপ্তানি ক্রয়াদেশে বড় ধরনের সংকটে পড়বে রপ্তানি আয়ের এই শীর্ষ খাত।

শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মালিকপক্ষের হুমকি ও ছাঁটাইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফারুক হাসান। বন্ধ কারখানা কবে খোলা হবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ রবিবার চলমান আন্দোলন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন হবে। তখন এই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে।

‘এখন আর মজুরি বাড়ানোর সুযোগ নেই’

মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক মন্ত্রী ও গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক শাজাহান খান বলেন, এখন আর মজুরি বাড়ানোর সুযোগ নেই। ফ্যামিলি কার্ড দিয়ে ন্যায্যমূল্যে জিনিস কিনতে পারবেন শ্রমিকরা।

তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকদের একাংশের মজুরি নিয়ে চলমান আন্দোলনে তাঁরা ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন শাজাহান খান। পোশাক খাতকে রক্ষায় তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

শাজাহান খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মজুরি ঘোষণা করেছেন, তা সাধারণ শ্রমিকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাঁরা আজ খুশি, আনন্দিত। আমরা শ্রমিক ভাই-বোনদের আহ্বান জানাই, তাঁরা যেন কারো কথায় প্ররোচিত না হন।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/11/12/1335364