১২ নভেম্বর ২০২৩, রবিবার, ১০:৫৬

সঙ্কটে অস্থির ডলারের বাজার

 

দেশে দীর্ঘদিন ধরে ডলারের সঙ্কট চলছে। বিনিময় হার বাজারমুখী করার উদ্যোগে সময়ে সময়ে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বাড়িয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। হুন্ডির চাপে আসছে না কাক্সিক্ষত রেমিট্যান্স। বৈশ্বিক নানা কারণে রফতানি আয়ও চাপে। আর তাই কয়েক মাস থেকে ডলারের সঙ্কট চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। কোনো কিছুতেই বাগে আসছে না ডলারের বাজার। আর গত দু’দিন থেকে সে মাত্রা আরো অস্থির করেছে। পুঁজিবাজারের একমুখী সূচকের মতোই ঊর্ধ্বমুখী এখন ডলারের বাজার। ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিবর্তন হচ্ছে এ মার্কিন মুদ্রার বিনিময় মূল্য। গতকালও বিদেশগামী অনেককেই খোলাবাজারে ১২৯-১৩০ টাকায় ডলার ক্রয় করতে হয়েছে। আর গত বৃহস্পতিবারে খোলা বাজারে ডলারের দাম ছিল ১২৭ দশমিক ৫০ টাকা। সংশ্লিষ্টদের শঙ্কা চলতি সপ্তাহেই ডলারের দাম ১৫০ টাকা হতে পারে। এমনিতেই ডলার সঙ্কটে নতুন এলসি খোলা কমিয়েছে বেশির ভাগ ব্যাংক। এখন তা আরও তলানিতে নামার শঙ্কা। আমদানি আরও কমলে দেশে আমদানিকৃত পণ্যের দামকে আরও বৃদ্ধি করবে। যা নিয়ে শঙ্কিত সংশ্লিষ্টরা। দেশে ডলার সঙ্কট একদিনে তৈরি হয়নি বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ১০-১২ বছর ধরে ডলারের দাম ৮০ টাকার আশপাশে ছিল। এ সময়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। সে অনুযায়ী ডলারের দাম সমন্বয় না করায় ডলারের দাম হুট করেই বেড়ে গেছে, যার কারণে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মতে, পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিবর্তন হচ্ছে ডলারের বিনিময় মূল্য। বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) প্রশ্রয়েই মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান ও পাচারকারীরা অস্থিতিশীল করছে বৈদেশিক মুদ্রা বাজার। যদিও ডলারের দাম নির্ধারণে বাফেদার সিদ্ধান্তকে অবৈধ উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে মার্কিন এ মুদ্রার লেনদেন। কাজেই বাংলাদেশ ব্যাংককেই এর দায় নিতে হবে বলে মনে করেন তারা। বাফেদা ও এবিবির বেঁধে দেয়া দামকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে ডলার লেনদেনে। যদিও অর্থনীতিবিদদের মত, কোনোভাবেই ডলারের দাম নির্ধারণ করতে পারে না বাফেদা। অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে আলো-ছায়ার খেলা বন্ধ করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। বাজার স্বাভাবিক রাখার দায় কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই। ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রাটির বাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত ‘কঠিন’।

 

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। যদিও ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) হিসাবে রিজার্ভ আরও কম। গত দুই বছর ধরে ডলার সঙ্কটে বারবার টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। প্রভাবে দেশে খাদ্য, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ঘন ঘন বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ছোট ছোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে এবং কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমনকি কোনো উৎস থেকে ডলার আশা করার সুযোগও নেই। বিদেশি ঋণের ছাড়, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই, রফতানি কিংবা প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) কোনো উৎস থেকেই নেই সুখবর। ডলারের সব উৎসে চলছে ভাটার টান। অন্যদিকে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হচ্ছে আগের চেয়ে ঢের। এ ঋণে সুদের হারও এখন বেশি। একে তো ডলার আসছে কম, আবার পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি। এ দ্বিমুখী পরিস্থিতি রিজার্ভ সঙ্কটের চাপকে আরও অসহনীয় করে তুলেছে।

দেশের অর্থনীতি বর্তমানে যেসব সমস্যার মুখে পড়েছে, এর মূলে রয়েছে মার্কিন ডলারের সঙ্কট। নীতিনির্ধারকরা মনে করেছিলেন, ডলারের সঙ্কট এবং এর দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা সাময়িক। তারা দীর্ঘদিন ধরে বলছেন, অচিরেই এর সমাধান হবে। কিন্তু সেই ‘অচিরেই’ আর আসছে না। ডলার সঙ্কট ও দর বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। জিনিসপত্রের বাড়তি ব্যয় মেটাতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এমনিতেই আমদানিতে এলসি নেই বললেই চলে। ডলার সঙ্কট এবং বাজার অস্থির হওয়ায় সামনের দিনগুলোতে আমদানি আরও কমবে। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতি অর্থনীতিকে আরও বিপদে ফেলছে।

সূত্র মতে, অনেক ব্যাংক এখন আগের দেনা শোধ করতে পারছে না। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ১২২ থেকে ১২৪ টাকা দরে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে। আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করছে ১২৫ টাকা পর্যন্ত। খোলাবাজারে এক দিনে ৫ টাকা পর্যন্ত দর বেড়ে গত বৃহস্পতিবার নগদ ডলার বিক্রি হয়েছে ১২৭ টাকায়। আর গতকাল শনিবার বন্ধের দিনে খোলাবাজারে এই দাম ১৩০ টাকায় ঠেকেছে।

এদিকে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় গত বৃহষ্পতিবার বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনকারী প্রায় ২০ ব্যাংকের এমডি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সেখানে এবিবি ও বাফেদা নির্ধারিত দর মেনে ডলার বেচাকেনার জন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমদানিতে কোনো ব্যাংক যেন ১১১ টাকার বেশি না দেয়, সে বিষয়ে সতর্কও করা হয়েছে। এমনকি বাফেদা ও এবিবির যৌথ সিদ্ধান্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে যেসব ব্যাংক মানবে না তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেওয়া নীতি-সহায়তা আটকে দেওয়া হতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে ডলার সঙ্কট চলছে। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন কারণে অস্থিরতা বেড়েছে। এর অন্যতম কারণ অর্থপাচার। এদিকে প্রতিনিয়ত দর বৃদ্ধির কারণে বাড়তি মুনাফার আশায় প্রবাসী ও ব্যবসায়ী অনেকে এখন ডলার ধরে রাখছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকারসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে পরামর্শ নিচ্ছে। এসব বৈঠকে ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণে অর্থপাচার ও হুন্ডি প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানের পরামর্শ এসেছে। এ ছাড়া বেনামি ও ভুয়া ঋণ ঠেকানো, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, তদারকি জোরদার ও ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, নির্বাচনের পর আর্থিক খাতে বিভিন্ন সংস্কার আনা হবে। ডলার সরবরাহ বাড়লে ধীরে ধীরে দর বাজারভিত্তিক করা হবে। এ কারণে অনেকেই মনে করতে পারেন, আগামীতে ডলারের দর অনেক বাড়বে। যে কারণে ডলার ধরে রাখার প্রবণতা বাড়ছে।

কয়েকজন ব্যাংকার জানান, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নতুন এলসি খোলা কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে কারণে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে এখন উদ্বৃত্ত হয়েছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণ কমার কারণে আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বর্তমানে বাণিজ্যিক ঋণ অনেক কমেছে। ডলার সঙ্কটের কারণে অনেক ব্যাংক বিদেশি ব্যাংকের কাছে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। যে কারণে দর যাই হোক বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ডলার কিনছে। চলমান ব্যবসা ধরে রাখতেও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) নির্ধারিত দরের চেয়ে ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দিচ্ছে।

জানা গেছে, বেশির ভাগ ব্যাংক যে দরে ডলার কিনছে বিক্রি করছে তার চেয়ে ১ থেকে ২ টাকা বেশিতে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রিপোর্ট করছে বাফেদার নির্ধারিত দরেই। তবে তারা কৌশল অবলম্বন করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকিতে যেন ধরা না পড়ে, সে জন্য আলাদা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আমদানিকারকের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিচ্ছে। আবার বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস ও রফতানিকারক দিচ্ছে আলাদা হিসাবের মাধ্যমে। কোনো কোনো ব্যাংক আমদানিকারকের কাছ থেকে কোনো টাকা না নিয়ে বাজারের তুলনায় অর্ধেক সুদে আমানত নিয়ে পুষিয়ে নিচ্ছে। অবশ্য এর মধ্যেও কিছু ব্যাংক নির্ধারিত দরের বাইরে যাচ্ছে না।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, ব্যাংক কোনোভাবেই লোকসান করবে নাÑ এটাই বাস্তবতা। কেউ যদি বলে ১২৪ টাকায় ডলার কিনে ১১১ টাকা বিক্রি করতে হবে, তা কখনোই বাস্তবসম্মত নয়। ধরা যাক, এবিবি-বাফেদার বক্তব্য শুনে কোনো ব্যাংক প্রতি ডলারে ১৩ টাকা লোকসান করল। ওই ব্যাংক যদি বছরে ৫০ কোটি ডলারের এলসি খোলে, তাকে লোকসান দিতে হবে ৬৫০ কোটি টাকা। প্রতি ডলারে সাড়ে ৬ টাকা লোকসান করলেও গুনতে হবে ৩২৫ কোটি টাকা। এত টাকা মুনাফা করে এমন ব্যাংক খুব কমই আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নামানোর কথা জানিয়েছে। তবে গত অক্টোবর মাসে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ হয়েছে। এ সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এক যুগেরও বেশি সময়ের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। ডলারের দর এভাবে বাড়তে থাকলে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ কাজে আসবে না। যদিও মূল্যস্ফীতির এই তথ্য নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন রয়েছে। বাস্তবে মূল্যস্ফীতি আরও বেশি।

আইএমএফের শর্তের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি ডলারের দর ঠিক করে না। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদার মাধ্যমে একটি দর ঘোষণা করা হয়। এবিবি ও বাফেদার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ডলার কেনার দর ঠিক করা হয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। রেমিট্যান্সে সরকারি ও ব্যাংকের নিজস্ব প্রণোদনাসহ সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে অনেক ব্যাংক এখন ১২২ থেকে ১২৪ টাকায় ডলার কিনছে। আমদানিকারকদের কাছে ১২৫ টাকা পর্যন্ত দরে ডলার বিক্রি করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেছেন, একেক ব্যাংক একেক রকম দর দেওয়ার পর বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলো বলেছে, সবাই মিলে রেমিট্যান্সে ১১৬ টাকার বেশি যাবে না। তিনি বলেন, এবিবি বা বাফেদা শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। তবে ঘোষিত দর মেনে চলছে কিনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা দেখবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. জামাল উদ্দিন বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খবরদারি ছেড়ে দেয়ায় শক্তিশালী হচ্ছে মানি এক্সচেঞ্জ হাউস ও পাচারকারীরা। তিনি বলেন, বাফেদা লিগ্যাল কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। বাফেদার শেল্টারে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো এই অস্থিতিশীলতা করছে। বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংকের ডাইরেক্টর, ফরেঞ্জ এক্সচেঞ্জের মালিক এ ডলার বিজনেসে জড়িত। যেসব দেশ থেকে ডলার আসে আমাদের, সেসব জায়গায় এদের একাউন্ট রয়েছে। সেখানে তারা হাতবদল করে ডলার সীমানা পার হতে দিচ্ছে না।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, বাফেদা-এবিবির মতো সংগঠন দিয়ে দাম নির্ধারণের এই সিস্টেম আগে ছিল না। এই পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে ডলারের দাম। দাম ঠিক করতে বাফেদার সিস্টেমে না থেকে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ একটা সীমা নির্ধারণ করে দেয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন বলছে, রিজার্ভ থেকে আর ডলার বিক্রি করবে না। যা অনেক আগেই ভাবা দরকার ছিল। যখন অনেক বেশি রিজার্ভ থাকে এবং তা দিয়ে মাসের পর মাস যোগান নিশ্চিত করা যায়, তখন ডলারের দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি সেই পর্যায়ে নেই। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সরকার যেখানে ডিম-আলুর মতো পণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে সেটি কার্যকর করতে পারছে না, সেখানে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত ডলারের বাজার কীভাবে দাম বেঁধে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তা বোধগম্য নয়।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককেই বাজারের ভিত্তিতে ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব নিতে হবে। বাফেদাকে চাপিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি। কারণ তাদের বৈধতার কোনো ম্যানডেট নেই। অন্যের ঘাড়ের ওপর বন্দুক রেখে ফায়ার করা। দায় নিয়ে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককেই। এক্সচেঞ্জ রেটের নীতি নির্ধারণের একমাত্র দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যংকের জানিয়ে তিনি বলেন, বাফেদাকে দেয়ায় স্বচ্ছতায় খাদ তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাফেদাকে দিয়ে শ্যাডো গেইম বা আলো-ছায়া খেলার দরকার নেই।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগামী জানুয়ারির শুরুতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেন অন্তত ১৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে না নামে। তাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। তিনি জানান, রিজার্ভ বাঁচাতে বাংলাদেশকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উৎস থেকে সহায়তা পাওয়াসহ সম্ভাব্য সব বিকল্পের খোঁজ করতে হবে। ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সামনের নির্বাচনটি স্বাভাবিক নির্বাচন নয়, কারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগামী দিনগুলোতে অনেক অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। তাই অর্থনীতি যাতে টালমাটাল পরিস্থিতিতে না পড়ে সে জন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

https://dailyinqilab.com/national/article/616471