১১ নভেম্বর ২০২৩, শনিবার, ১০:৫৮

শীতের সবজিতে বাজার ভরপুর বিক্রি হচ্ছে চড়া মূল্যে

নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবন অনেক কষ্টকর হয়ে পড়েছে। একের পর এক জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে। বাজারে শীতকালীন সবজি আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর প্রায় সবক’টি বাজারই শীতের সবজিতে ভরপুর। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে চড়া মূল্যে। তবে আকাশচুম্বী দাম থেকে কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মওসুমের শুরুতে দাম বেশি থাকে। কিছুদিন পর সবজির দাম কমতে পারে। তবে বৃদ্ধি পাওয়া অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম কমেনি। পেঁয়াজ সেঞ্চুরি পার করেছে। দাম কমার কোন লক্ষন নেই। অবিলম্বে বাজার মনিটরিং এর মাধ্যমে জিনিসপত্রের দাম কমানোর জন্য দাবি জানিয়েছে ক্রেতারা।

সারা বছরই সবজি পাওয়া যায় বাজারে। তবু শীতকালকে বলা হয় সবজির মৌসুম। শীতকালীন সবজির প্রতি মানুষের আগ্রহও থাকে বেশি। প্রকৃতিতে শীতকাল আসি আসি করছে। আর এরই মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। সারা বছর পাওয়া যায় এমন সবজির পাশাপাশি এখন কাঁচা টমেটো, শালগম, পেঁয়াজ পাতা, মুলা, শিমের মতো সবজিও জায়গা করে নিচ্ছে বাজারে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, লাউ, টমেটো শীতকালীন সবজি হলেও এখন সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়। তবে ক্রেতারা বলেন, সারা বছর পাওয়া গেলেও শীতে এগুলোর স্বাদই থাকে ভিন্ন, যেহেতু এগুলো শীতের সবজি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, অধিকাংশ জিনিসপত্রের দাম চড়া। বৃদ্ধি পাওয়া অধিকাংশ জিনিসপত্রের দামই কমেনি। তবে ডিম, মাছ, মুরগি, আলুসহ বেশ কিছু সবজির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কিছুটা কমলেও অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখনো বেশি। এখন ঢাকার বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। যা গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে। তবে স্বাভাবিক সময়ে বছরজুড়ে এ আলুর দাম থাকে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। 

খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের জানান, মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে বাজারে আলুর সরবরাহ কম। এরমধ্যে ভারত থেকে আলু আমদানি হচ্ছে। তবে যে পরিমাণে আলু এসেছে, তা চাহিদার তুলনায় খুব সীমিত। ফলে বাজারে তেমন প্রভাব রাখতে পারছে না। দাম কিছুটা কমে এলেও নাগালের মধ্যে আসেনি। প্রায় তিন মাস আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে খুচরা পর্যায়ে আলুর দর ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু বাজারে এ দর কার্যকর হয়নি। উল্টো দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা হয়েছিল। যা গত সপ্তাহে আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর থেকে কিছুটা কমতে শুরু করেছে।

ভারত থেকে ডিমও আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তারও কিছুটা প্রভাব বাজারে রয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বেশ কমেছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। এ সময়ের ব্যবধানে প্রতিটি ডিমের দাম প্রায় এক টাকা কমেছে। পাইকারি ব্যবসায়ী ও খামারিরা জানিয়েছেন, আগের তুলনায় উৎপাদন বাড়ায় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। অন্যদিকে, অবরোধের কারণে চাহিদায় কিছুটা টান পড়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই পাইকারি বাজারে ডিমের দাম কমে এসেছে। খুচরা বাজারে প্রতি হালি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, ডজন ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। এক হালি ডিম দুই সপ্তাহ আগে ৫৫ টাকার বিক্রি হয়েছে। এদিকে, পাইকারি বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে। ডিমের সঙ্গে ব্রয়লার মুরগির দামও কিছুটা কমেছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সবজি বাজারে দেখা গেছে, শীতকালীন সবজি ছাড়া অন্যান্য সব সবজির দামই রয়েছে নিম্নমুখী। বিক্রেতারা বলছেন, সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। আরও হয়তো কমে যাবে। শিম ৮০-৯০, শালগম ৬০-৭০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৯০-১২০, টমেটো ১৪০, পেঁয়াজ পাতা ১২০-১৬০, মুলা ৬০, গাজর ১২০, লম্বা বেগুন ৬০, সাদা গোল বেগুন ৬০, কালো গোল বেগুন ১০০, শসা ৬০- ৮০, করল্লা ৮০, উচ্ছে ৮০, পেপে ৪০, পটল ৬০, মিষ্টি কুমড়া ৬০, ঢেঁড়স ৭০, চিচিঙ্গা ৬০, ধুন্দল ৬০, বরবটি ৮০, কচুর লতি ৬০, কচুরমুখী ৮০, কাঁচা মরিচ ১৬০, ধনেপাতা ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ৭০ টাকা, ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা ও চাল কুমড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ১৩০, ক্রস জাতের পেঁয়াজ ১৩০, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০, লাল ও সাদা আলু ৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিকেজি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। গতকাল ভারতীয় আদা ২২০ টাকা, দেশি রসুন ২০০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারে দেখা যায়, ইলিশ মাছ ১৮০০, রুই মাছ ৩৬০-৫৫০, কাতল মাছ ৩৫০-৫৫০, কালিবাউশ ৪০০-৬০০, চিংড়ি মাছ ৮০০-১৪০০, কাঁচকি মাছ ৫০০-৬০০, কৈ মাছ ৩৫০-১০০০, পাবদা মাছ ৬০০, শিং মাছ ৫০০-৬০০, বেলে মাছ ৬০০-১০০০, টেংরা মাছ ৭০০-১০০০, কাজলি মাছ ৮০০, বোয়াল মাছ ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 

এদিকে বাজারে বেড়েছে সব রকম ডালের দাম। গতকাল ছোট মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১৫ টাকা, মুগ ডাল ১৪৫ টাকা, খেসারি ডাল ৯৫ টাকা, বুটের ডাল ৯০ টাকা, ছোলা ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, সব রকম ডালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে আগের মতোই। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, চিনি ১৩৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

https://www.dailysangram.info/post/540367