৭ নভেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:৪৬

তোরা পারবিনে ফুটাতে, পাপড়ি ধরে যতই টানিস আঘাত করিস বোঁটাতে

-ড. মো. নূরুল আমিন

 

‘চাঁন্দনা বদলা সুরুজ না বদলা কেইসে বদলতা হায় ইনসান?’ ষাটের দশকের জনপ্রিয় একটি সিনেমার গানের অংশ বিশেষ। প্রেমিক প্রেমিকার বিচ্ছেদের গান। প্রেমিক প্রেমিকাকে ছেড়ে চলে গেছে, তার আর খোঁজ-খবর নেয় না। সে সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেছে। কিন্তু নায়িকা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না যে সে বদলে গেছে। তার যুক্তি, চাঁদ বদলায়নি, সূর্যও বদলায়নি, তাহলে মানুষ কিভাবে বদলাতে পারে? গানের রূপ নিয়ে দর্শকদের কাছে ছুড়ে দেয়া এই প্রশ্নই নায়িকার সুরেলা কণ্ঠে সিনেমাটিতে বেজে উঠেছিল। তার এই প্রশ্নের জবাব অত্যন্ত কঠিন মনে হলেও এর মধ্যে আরো অনেক প্রশ্ন আছে।

মানুষ বদলায় না মানুষের আচরণ বদলায়। মানুষ নৈতিক জীব, নৈতিক জীব হিসেবে তাকে যে কোন রকমের আচার ব্যবহারে তার বিবেক এবং নৈতিক বা মানবিক মূল্যবোধের কথা ভাবতে হয়। যারা এটা করতে পারেন না তারা মানুষ কিনা এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। যারা বিবেক ও মূল্যবোধ তাড়িত হয়ে আচরণ পরিবর্তন করতে পারেন তারা শ্রদ্ধার পাত্র হন, মানুষের প্রকৃতি, তার মূল্যবোধ, ভাল-মন্দ জ্ঞান, সামাজিক জীবন হিসেবে দায়িত্ব ও কর্তব্য, সহমর্মিতা, আমানতদারিতা, বিশ্বস্ততা, হক্কুল এবাদ ও হক্কুল্লাহর প্রতি নিষ্ঠা প্রভৃতি হচ্ছে সৃষ্টির এই সেরা জীবের বৈশিষ্ট্য।

রাজনীতির ক্ষেত্রে তার একক ও দলীয় ভূমিকা যদি জনবান্ধব ও দূরদর্শিতার পরিচায়ক না হয় তাহলে একটি জাতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। জর্জ অরওয়েল তার Longman Study Texts এর অধীনে প্রণীত Animal Farm শীর্ষক পুস্তকে মানুষ রূপী পশুদের এক অনন্য চিত্র অংকন করেছেন এবং বলেছেন যে যখন কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাদের মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলো হারিয়ে ফেলে তখন তাদের মধ্যে পশুত্ব দেখা দেয় এবং তারা ভয়ংকর লোভী, জেদী, দুর্নীতিগ্রস্ত, হিংস্র ও কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠে। তারা জালেমে পরিণত হয়।

আমি মানুষ কিভাবে বদলায় এই প্রশ্ন দিয়ে শুরু করেছিলাম। আসলে মানুষ বদলায় না, তার আচরণ বদলায় এবং যদি তা সঠিক পথে হয় তাহলে তার মধ্যে মনুষ্যত্ব ফিরে আসে। মনস্তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের মতে তিনটি বস্তু মানুষকে বিভ্রান্ত করে। তার একটি হচ্ছে অর্থ-সম্পদের লিপসা, দ্বিতীয়টি ক্ষমতার মোহ এবং তৃতীয়টি হচ্ছে নারীর প্রতি মোহ। এগুলো মানুষের জন্য অত্যন্ত লোভনীয় ও আকাক্সিক্ষত। রাসূল (সা.) যখন মক্কায় ইসলামের দাওয়াত দেয়া শুরু করলেন এবং মানুষকে একমাত্র আল্লাহর আনুগত্য করা ও তার প্রভুত্ব মেনে শুধু তার আইন মেনে চলার পরামর্শ দিতে থাকলেন, তখন মক্কার ক্ষমতাসীন সর্দাররা প্রমাদ গুণলেন, তারা তাকে কালেমার দাওয়াত থেকে বিরত রাখার জন্য প্রস্তাব করলেন যে তোমাকে আমরা আরবের সমস্ত ক্ষমতা দিতে রাজী, যত মূল্যবান সম্পদ আছে সব তোমার পায়ের নীচে এনে দেব এবং এ দেশের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটিকে তোমায় উপহার দেব, শুধু একটি মাত্র শর্তে, তোমাকে কালেমার দাওয়াত বন্ধ করতে হবে। আল্লাহর রাসূল (সা.) এই লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন যে তোমরা যদি আমার এক হাতে চন্দ্র ও অন্য হাতে সূর্য ও এনে দাও তবুও আমি আমার তৌহিদ প্রচার ও আল্লাহর জমিনে আল্লাহর রাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে পিছপা হবো না। চাঁন্দ সুরুজ বদলায় না মানুষ কিভাবে বদলায় উর্দু গানের এই কথাগুলো দিয়ে আলোচনাটি কেন শুরু করলাম তার এখন পরিষ্কার করা যাক। এই প্রশ্নটি বাংলাদেশের সতের কোটি মানুষের।

পাঠককরা নিশ্চয়ই জানেন যে পাকিস্তান আমলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন, মানুষের মৌলিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, পরোক্ষ মৌলিক গণতন্ত্রের পরিবর্তে প্রত্যেকটি মানুষের জন্য সার্বজনীন ভোটাধিকার আদায়, জুলুম নির্যাতন প্রভৃতির অবসানের লক্ষ্যে তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ জামায়াত, পিডিপি, নেজামে ইসলাম ইসলাম পার্টি, ন্যাপ, কাউন্সিলপন্থী মুসলিম লীগ প্রভৃতি দলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বৈরাচারী শাসকদের অবিমৃষ্যকারিতা, সীমাহীন নির্যাতন সরকার বিরোধী আন্দোলনকে স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে ঠেলে ছিল। দুই প্রদেশের দুই নেতা ও সামরিক শাসকদের একগুঁয়েমী মনোভাবের কারণে রাজনৈতিক সমাধানের পথ রুদ্ধ হয়ে যায় এবং আওয়ামী লীগ ভারতীয় রাজনৈতিক ও সামরিক হস্তক্ষেপ আহ্বান করে। প্রায় ৮২ লক্ষ লোক ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থী বিশ্ব বিবেককে স্তম্ভিত করে দেয়। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয় এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়, স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনভার আওয়ামী লীগ নিজ হাতে তুলে নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র সমর্পণ করে নিজ নিজ কাজে ফিরে যায়। মানুষের মধ্যে একটি নতুন প্রাপ্তির প্রত্যাশা জেগে উঠে। এই প্রত্যাশা ছিল ইনসাফ ও ভোটাধিকারসহ যাবতীয় মানবাধিকার প্রাপ্তি ও উন্নত জীবনযাত্রা এবং দুর্নীতি মুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রাপ্তির প্রত্যাশা। কিন্তু শীঘ্রই মানুষের মোহ মুক্তি ঘটতে থাকে। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংস্থাসমূহের নেতাকর্মী এবং এমনকি মুজিববাদের ধারক বাহক বিপুল সংখ্যক তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে অভাবিত পরিবর্তন দেখা দেয়। বাঙ্গালী অবাঙ্গালী নির্বিশেষে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, শিল্প কারখানা লুটপাট, চোরাকারবারি, মওজুতদারি, চাঁদাবাজি, ভিন্নমত দলন, দুঃশাসন ও অত্যাচার অবিচার মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। বর্ণচোরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এই পরিবর্তিত রূপ মানুষের বঞ্চনার অনুভূতিকে তীব্রতর করে তোলে। মুজিবনগরে গঠিত সংগ্রামকালীন অস্থায়ী সরকারের পররাষ্ট্র সচিব, স্বাধীনতাউত্তর সরকারের মুজিব সরকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশে মুখ্যসচিব ও বিশেষ সচিব জনাব মাহবুব আলম চাষী তাদের এই অপকর্মে নিজের হতাশা ব্যক্ত করতে গিয়ে তার In Quest of Shawnirvar পুস্তকের ৮৫ ও ৮৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ÒWhen he (Bangabandhu) asked me to join Government Service again, I after some hesitation joined as Secretary, Local Government and Rural Development (LGRD). But soon all my expectation started to errode. I once again placed a proposal for training the youth for natural reconstruction, only to be disappointed again. Many of the freedom fighters, who were once eager to sacrifice their lives for the cause of the motherland were now trying to devour the entire nation. Excesses committed by them made normal work nearly impossible. Situation became so unmanagable that once a leader of a foreign delegation asked me whether the country was liberated or Conquered. I wanted to know why he asked this question. He told me in reply that in a liberated country everybody felt safe and happy, while in a conquered country people were affraid and conqueres looted and plundered the conquered land. In his opinion the general condition in Bangladesh was closer to the latter.

অর্থাৎ (১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে এসে) বঙ্গবন্ধু আমাকে পুনরায় সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়ার অনুরোধ করেন। কিছুটা দ্বিধা সংশয়ের পর আমি স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসাবে যোগদান করি। কিন্তু শীঘ্রই আমার মহান প্রত্যাশাগুলো উবে যেতে থাকে। আমি জাতীয় পুনর্গঠনের লক্ষ্যে যুব প্রশিক্ষণের একটি প্রস্তাব দিয়ে আবারো হতাশ হলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই, এক সময় যারা মাতৃভূমির জন্য জীবনকে উৎসর্গ করতে ব্যাকুল ছিল তারা এখন গোটা জাতিকে গোগ্রাসে গিলে ফেলার চেষ্টায় রত। তাদের বাড়াবাড়ি স্বাভাবিক কাজ কর্ম সম্পাদন প্রায় অসম্ভব করে তুললো। পরিস্থিতি এতই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল যে একবার বিদেশী প্রতিনিধিদের একজন নেতা আমাকে প্রশ্ন করে বসলেন যে, এই দেশটি তোমরা স্বাধীন করেছ, না শক্তিবলে দখল করেছ? আমি তার প্রশ্নের কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, একটি স্বাধীন দেশের প্রতিটি মানুষ নিজেকে নিরাপদ ও সুখী মনে করে। পক্ষান্তরে বিজীত বা দখলকৃত দেশের মানুষ থাকে ভীত সন্ত্রস্ত; দখলদারীরা দখলকৃত দেশের সম্পদকে গণিমতের মাল মনে করে লুটপাটে লিপ্ত হয়। তার মতে বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থা শেষোক্ত অবস্থার কাছাকাছি। এই লজ্জা আমরা রাখি কোথায়?

আরেকটি উদ্ধৃতি দেই, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক জেমস জে, নোভাক Bangladesh: Reflections on the water. শীর্ষক একটি পুস্তক রচনা করেছিলেন। যুক্তরাষ্টের ইন্ডিয়ান ইউনিভাসির্টি প্রেস পুস্তকটি প্রকাশ করে। ১৯৯৫ সালে রাহাত খানের সম্পাদনায়  “বাংলাদেশ: জলে যার প্রতিবিশ্ব” শিরোনামে বইটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়। বইটিতে আওয়ামী লীগের প্রথম শাসনামলকে দুঃশাসন আখ্যায়িত করে তাকে খুন ও রাজনীতির আমল নাম দেয়া হয়েছে। পুস্তকটিতে আওয়ামী লীগের শ্রেষ্ঠনেতা সম্পর্কে যে মন্তব্য করা হয়েছে তা প্রণিধানযোগ্য। এতে বলা হয়, সেই বিজয়োচ্ছল মুহূর্তের পর মুজিবকে ঘিরে বরাবর যে অদম্য আবেগোচ্ছ্বাস ছিল এবং যা তাকে সাফ্যলের  দিকে নিয়ে এসেছিল তা শিগগির বদলে যায় এবং মাত্র ৪০ মাসের মাথায় তার হত্যাকান্ড ডেকে আনে। ক্ষমতাসীন হবার পর তার বৌদ্ধিক অলসতা- যা তার জীবনের বৈশিষ্ট্য ছিল- তার ভেতরের শ্রত্রু হয়ে ওঠে। তিনি শাসন করতে সক্ষম ছিলেন না, তিনি দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালক ছিলেন না, তিনি অর্থায়ন বৈদেশিক সাহায্য বাণিজ্য, বৈদেশিক সম্পর্ক আইন মতাদর্শ, ইতিহাস কিছুই বুঝতেন না...যত ধরনের প্রশাসনিক ভুল করা সম্ভব তার সবই তার প্রশাসন করেছিলো, মতাদর্শগতভাবে অযোগ্য উপদেষ্টাদের পরামর্শে তিনি দেশকে প্রায় দেউলিয়া করে ফেলেন এবং এমন এক দুর্ভিক্ষাবস্থা সৃষ্টি হতে দেন যা ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষের সমকক্ষ। তিনি আওয়ামী লীগের মধ্যে কিছু লোককে সমগ্র বিশ্ব হতে পাঠানো ত্রাণসামগ্রী ভাগাভাগি করে নিতে এবং এমন কি ভারতে বিক্রি করতে পর্যন্ত দেন। এভাবে তার সহচর আওয়ামী লীগের লোকেরা লাভবান হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের প্রথম সরকারের অনেক কিছু করার ছিল। তারা করতে পারতো কিন্তু করেনি। মাওলানা ভাসানীর ভাষায় তারা দেশকে লুটপাট সমিতিতে রূপান্তর করেছিল। গণতন্ত্র হত্যা করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। নির্মমভাবে ভিন্নমত দমন করেছিল। ২ টি দলীয় ও দু’টি সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা বাদে দেশের সব পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলোও নিষিদ্ধ হয়েছিল। এর পরিণতি হয়েছিল ভয়াবহ। ফলে ২১ বছর তারা আর ক্ষমতায় আসতে পারেনি। একুশ বছর হাত জোড় করে মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে মানুষের সহানুভূতি আদায় করে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনে তারার যে আসন পান তা ছিল ক্ষমতার যাবার কাছা কাছি। জাতীয় পার্টি ও জাসদের (রব) সহযোগিতায় তারা ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু তাদের আচরণ মানুষকে সন্তুষ্টি করতে পারেনি। তাই পরবর্তী নির্বাচনে তারা হেরে যান। তাদের আন্দোলনের ফসল ও লগি-বৈঠার তান্ডবের ফলে সেনা সমির্থিত মইন-ফখরুল সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে দুই বছর পর দি ইকনমিষ্টের ভাষায় বস্তা বস্তা ভারতীয় টাকা ও কিছু বৈদেশিক শক্তির সহযোগিতায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে’ তারা তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় আসেন। ক্ষমতায় এসে তারা প্রশাসন, আইন-শৃংখলা বাহিনী ও বিচার বিভাগকে কব্জা করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের বিধানটি রদ করে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান পুন: প্রবর্তন করা ছাড়াও দেশকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, চাদাবাজি টেন্ডারবাজি, সরকারী সম্পত্তি গ্রাস, জে¦না ব্যভিচর, প্রতিদ্বন্দ¦ী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা, গুম, গ্রেফতার নির্যাতন, তাদের বাড়ীঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল প্রভৃতি তাদের বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়। ২০০৮ সালের পর দেশে আর কোন নির্বাচন হয়নি। মানুষ ভোটঅধিকার এবং মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে খাদ্যসামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা জেলখানায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলগুলো সরকারের পদত্যাগ, বিরোধী নেতা-কর্মীদের মুক্তি কেয়ারটেকার সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নামিয়ে আনা প্রভৃতি দাবিতে আন্দোলন করছে। গত দশ অক্টোবর বিএনপি-জামায়ত ও অন্যান্য দল ঢাকায় মহাসমাবেশ করেছে। সমাবেশে জনতার ঢল অবিস্মরণীয়। সরকার বিরোধী দলের একটি দাবিও মানতে রাজি নন। নতুন উদ্যমে তারা গ্রেফতার-নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে। বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলো সংলাপের পরামর্শ দিয়েছে। সরকার অশালীন ভাষায় তা প্রত্যাখ্যান করেছে। বিরোধী দলগুলোও ছাড়বার পাত্র নয়। এই অবস্থায় দেশ এক ভয়ঙ্কর সংঘাতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে হয়। কেউ কেউ এ থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক পদত্যাগ দাবি করছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার দল গত ১৫ বছর ক্ষমতার যে স্বাদ পেয়েছেন, ক্ষমতার দোর্দ- প্রতাপ সহায় সম্পত্তি ও অর্থবিত্ত অর্জন এবং নারীদের ইজ্জত লুন্ঠন প্রভৃতি ত্যাগ বা অনিশ্চিত করে তারা পদত্যাগ করতে পারেন না। তারা আবার যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। এর বিকল্প কী ? সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ? তা সম্ভব নয়। প্রতিবেশী দেশকে এই সরকার যে সুযোগ দিয়েছে তারা প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে এতে সন্দেহ নেই। আরেকটি বিকল্প আছে সেটা হচ্ছে স্বেচ্ছায় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ। তার বয়স হয়েছে। চার মেয়াদে ক্ষমতা ভোগ করেছেন। আর কত ? তিনি জাতির উদ্দেশে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে ক্ষমা না চাইলেও জাতির মঙ্গল কামনা করে সরে যেতে পারেন। এতে দেড় যুগের তার জুলুম-নির্যাতনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রতিহিংসার ক্ষোভ কিছু লাঘব হবে। সম্পদ লুট ও পাচারের শাস্তির বিষয়টি কিছুটা গৌণও হয়ত হতে পারে। নিরাপদ প্রস্থানও সহজ হতে পারে। তা না হলে গণঅভ্যত্থান ঘটতে পারে। নেতা-নেত্রীদের জেলে পুরে গণঅভ্যুত্থান ঠেকানো যায় না। মানুষ যখন ক্ষেপে তখন তারা নিজেদের নেতা নিজেরাই বানিয়ে নেয়। আওয়ামী লীগ শান্তি সম্মেলন ও সমাবেশ এবং বিরোধী দলকে পাহারা দেয়ার জন্য যা করছে তা অব্যাহত থাকলে দেশে হানা-হানি ও গৃহযুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। ক্ষমতার জন্য দেশের এই ক্ষতিটা না করলে কি নয়। আমার মন বলছে গণঅভ্যুত্থানই একমাত্র দেশকে উদ্ধার করতে পারে। আওয়ামী লীগের হাতে এখন সময় খুব কম। তাদের হাতে দেশ ও জাতি নিরাপদ নয়। জাতি গঠনের যোগ্যতা আওয়ামী লীগের নেই। ফুল ফুটানোর কিছু নিয়ম-প্রক্রিয়া আছে। মালিরাই এ সম্পর্কে ভাল জানেন। একটি উর্দুগান  দিয়ে শুরু করেছিলাম এখন একটি বাংলা গানের দুটি ছত্র দিয়ে শেষ করতে চাই। তোরা পারবিনে ফুল ফুটাতে পাপড়ি ধরে যতই টানিস, আঘাত করিস বোঁটাতে আওয়ামী লীগের রক্তে গণতন্ত্র, ইনসাফ সততা পরমত সহিষ্ণুতা সুশাসন কখনো ছিল না। এখনো নেই, হবেও না।

https://www.dailysangram.info/post/540003