১১ অক্টোবর ২০২৩, বুধবার, ৩:২৭

ডিমের ডজন আবার ১৫০ টাকা ছাড়িয়েছে

এক মাসের ব্যবধানে ডিমের ডজন (১২টি) আবার দেড় শ টাকা ছাড়াল। মাঝে দাম সামান্য কমলেও খুচরা বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের এক ডজন ডিম এখন কিনতে হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিমের দাম বেঁধে দেওয়ার প্রায় এক মাস পার হয়ে গেলেও সরকার নির্ধারিত ওই দামে বিক্রেতারা ডিম বিক্রি করছেন না; বরং উল্টো বাজারে ডিমের দাম আবার বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও দেশের কয়েকটি ডিম উৎপাদন এলাকা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজারে ডিমের দাম বাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকাল মঙ্গলবারের বাজারদরেও। টিসিবি জানিয়েছে, প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। তাতে ডিমের দাম পড়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা ডজন। এক সপ্তাহ আগে বাজারে ডিমের হালি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা ছিল বলে জানিয়েছে টিসিবি।

উৎপাদনকারী ও বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ডিমের উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে ভারী বৃষ্টির কারণে বাজারে ডিমের সরবরাহ কমছে। ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য তাঁরা মূলত এই দুই কারণকে দায়ী করছেন। এ নিয়ে এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে ডিমের ডজন তৃতীয়বারের মতো দেড় শ টাকার গণ্ডি পেরোল। এক ডজন ডিমের দাম প্রথমবার দেড় শ টাকা ছাড়ায় গত বছরের আগস্টের শুরুতে।

গতকাল রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার ও কাঁঠালবাগান বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। তবে ১৫৫ টাকায় কিনতে হলে বড় বাজারে যেতে হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকানে বাদামি ডিম ১৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও ১৬৫ টাকাও চাওয়া হচ্ছে। বাজারে সাদা রঙের ডিম পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ টাকায়।

পাইকারিতে প্রতিটি ডিম এখন কিনতে খরচ পড়ছে ১২ টাকার মতো। তাতে খরচ বাদে অল্প লাভ রেখে ডিম ১৩ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না।

তানভীর হাসান, ডিম বিক্রেতা, মালিবাগ বাজার, রাজধানী
সরকার গত ১৪ সেপ্টেম্বর খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ১২ টাকায় নির্ধারণ করে দিয়েছিল। সেই হিসাবে এক ডজন ডিমের দাম পড়ে ১৪৪ টাকা। কিন্তু বাজারে এই দাম পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। গত মাসের শেষের দিকে কোথাও কোথাও ১৪৪-১৪৫ টাকায় ডিম বিক্রি হলেও বেশির ভাগ বাজারে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর মালিবাগ বাজারের ডিম বিক্রেতা তানভীর হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাইকারিতে প্রতিটি ডিম এখন কিনতে খরচ পড়ছে ১২ টাকার মতো। তাতে খরচ বাদে অল্প লাভ রেখে ডিম ১৩ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না।’

ঢাকায় ডিমের বড় দুটি পাইকারি বাজার আছে। এর একটি কারওয়ান বাজারসংলগ্ন তেজগাঁও রেলস্টেশন পাইকারি ডিমের বাজার। অন্যটি পুরান ঢাকার কাপ্তানবাজার। এই দুই বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল পাইকারিতে ১০০ বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১৯০ থেকে ১ হাজার ১৯৫ টাকায়। অবশ্য সাদা রঙের ১০০ ডিম পাইকারিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে।

তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে চাহিদার তুলনায় পাইকারি বাজারে ডিম কম আসছে। সে কারণে ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। তাঁর মতে, ডিমের দাম কমাতে হলে উৎপাদন বাড়াতে হবে অথবা ডিম দ্রুত আমদানি করে বাজারে নিয়ে আসতে হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ২ হাজার ৩৩৮ কোটি। আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৩৫ কোটি। দেশে উৎপাদিত এই ডিম দিয়েই চাহিদা মেটে। এই ডিম খাওয়ার পাশাপাশি একটি বড় অংশ দিয়ে আবার বাচ্চাও ফোটানো হয়।

ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়। এরপর দুই দফায় আরও ১১ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ডিম আমদানি হয়নি। মাত্র গত সপ্তাহে আমদানি অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে। অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠান মীম এন্টারপ্রাইজের মালিক ইয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ডিম আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে। এ সপ্তাহেই ডিম দেশে আসার কথা রয়েছে।

উৎপাদন কমার প্রভাব বাজারে
রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদীকে ডিম ও মুরগি উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই এলাকাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিম আমদানির খবরে অনেকে মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাই খামার বন্ধ করে দেওয়ায় ডিমের উৎপাদন কমেছে এবং চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে গেছে।

রাজশাহী পোলট্রি ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (আরপিডিএ) সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার ডিম আমদানি করছে, এই খবরে ডিমের দাম শুরুতে কিছুটা কমেছিল। কিন্তু এই খবরেই আবার অনেক খামারি এরই মধ্যে মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে ডিমের সরবরাহ কমে দাম বেড়ে গেছে।’

নরসিংদীর মরজালের আড়তদার শরিফুল ইসলামের বক্তব্যও প্রায় একই। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার পাইকারেরা আমাদের কাছে যে পরিমাণ ডিমের চাহিদা জানাচ্ছেন, তার ৮০ শতাংশের মতো ডিম সরবরাহ করতে পারছি।’
আর সরবরাহের এই সংকটের কারণে গত এক সপ্তাহ স্থানীয় পর্যায়ে ১০০ ডিমের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ শহরের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান।

তবে দাম বেশি হওয়ার কারণে ভবিষ্যতে ডিমের উৎপাদন বাড়তে পারে বলে মনে করছেন খামারিরা। নরসিংদীর মরজালের খামারি মো. মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে অনেক সময় লোকসান দিয়ে ডিম বিক্রি করতে হলেও এখন ডিমের ভালো দাম পাচ্ছি। এমন দাম পেলে বন্ধ খামার আবার উৎপাদনে ফিরে আসবে।’

ডিমের উৎপাদন পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাংলাদেশ এগ প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘উৎপাদন আগের অবস্থায় আছে। ডিমের দাম এখন যেমন আছে, তার থেকে আর বাড়বে না।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ২ হাজার ৩৩৮ কোটি। আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৩৫ কোটি। দেশে উৎপাদিত এই ডিম দিয়েই চাহিদা মেটে। এই ডিম খাওয়ার পাশাপাশি একটি বড় অংশ দিয়ে আবার বাচ্চাও ফোটানো হয়।

এদিকে ঢাকার বাজারে চাল, ডাল, আটা, ময়দা ও ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপণ্যের দাম উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে। আলুর সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি কেজি ৩৫–৩৬ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৪৫–৫০ টাকায়। একইভাবে দেশি পেঁয়াজের সরকার নির্ধারিত দর প্রতি কেজি ৬৪–৬৫ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৯০–১০০ টাকায়। মাছ-মাংসের দামেও চলতি সপ্তাহে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। কাঁচা মরিচের কেজি এখনো ২০০ টাকার ওপরে।



https://www.prothomalo.com/business/5wi5m5q3wv