৯ অক্টোবর ২০২৩, সোমবার, ৫:৩৪

চরম ভোগান্তিতে নিম্ন আয়ের ৫ লাখ মানুষ

প্রবল বর্ষণে পানিবদ্ধতার কবলে পড়েছে সাতক্ষীরা। পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা, নদ নদীর তলদেশ পলিপড়ে ভরাট হওয়া, খননের নামে লুটপাট, ভঙ্গুর বেড়ি বাঁধসহ পানিউন্নয় বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও ব্যর্থতার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত অবকাঠামোর কারণে অর্ধশতাধিত নদ-নদীর আন্তঃসংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এসব বন্ধ সংযোগ সচল ও পানিবদ্ধতা নিরসনে নদ-নদী খননের নামে গত ১০ বছরে জেলাতে ২,২৯১ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু কাজের সূফল না পাওয়ার অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে বেশিরভাগ টাকা হরিলুট হয়েছে বলে তাদের দাবি। ফলে বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় অর্ধলক্ষাধিক কৃষকের বিভিন্ন প্রকার ফসল, আউশ ধানের ক্ষেতসহ অসংখ্য মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। ফলে জনদুর্ভোগ চরম আকারে ধারণ করেছে। দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরাশন করতে না পারলে স্থায়ী পানিবদ্ধতায় রূপ নিতে পারে জেলার নি¤œ অঞ্চল। এতে কর্মহীন হবে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষের দাবি জেলা নাগরিক কমিটির ।
টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা পৌরসভার নিম্নাঞ্চল ও ভোমরা স্থলবন্দরসহ জেলার নি¤œ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না গড়ে ওঠায় এক সপ্তাহ এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ির আশপাশ ও সড়কে পানি জমে থাকায় সদর উপজেলাসহ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ দুর্ভোগ পড়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মশিউর রহমান জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে চাষিদের ১৭ কোটি এবং মাছের ঘেরে প্রায় ৫৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলা ও পৌরসভার ইটাগাছা, কামালনগর, কুকরালি, বাঁকাল, রসুলপুর, মেহেদিবাগ, মধুমোল্লাডাঙ্গী, পলাশপোল, রথখোলা, পুরাতন সাতক্ষীরা, রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুড্ডিরডাঙ্গির নিচু এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে। কোনো কোনো এলাকা পরিকল্পিতভাবে নালা নির্মাণ না করায় এবং কোনো কোনো এলাকায় একেবারেই নালা না থাকায় পানি সরছে না। এসব এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে পানি না উঠলেও বাড়ির আঙিনা পানির নিচে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট।
সাতক্ষীরার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল করিম বলেন, বৃষ্টির পানি সহজে নিষ্কাশন করার জন্য পৌরসভার অর্ধেক এলাকার ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত ও নতুন করে ড্রেন নির্মাণ করার জন্য কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার নানা জটিলতায় ওই সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।

এদিকে গতকাল পানিবদ্ধতা নিরসন ও পৌর এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগীরা। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন,

সাতক্ষীরা পৌরসভার ড্রেনগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে ড্রেন নির্মাণের কারণে তা দিয়ে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। অনেক স্থানে পানি নিষ্কাশনের মুখ না রেখেই ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। আবার অনেক এলাকায় পানি নিষ্কাশনের কোনো ড্রেনই নেই। প্রথম শ্রেণীর পৌরসবা হলেও ন্যূনতম নাগরিক সেবা পাচ্ছে না মানুষ। বক্তারা পানিবদ্ধতা নিরসন ও সাতক্ষীরা পৌর এলাকায় কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সাতক্ষীরা বদ্দি কলনি এলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মাওলানা নুরউদ্দীন জানান, সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই তাদের রাস্তায় পানি উঠে যায়। এমনকি সেই পানি আর সহজে নামে না। সংশ্লিষ্ট পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের যথাযথ হস্তক্ষেপ না থাকার কারণে দীর্ঘদিন মানুষের এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

ধুলিহর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী জানান, এই ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার পানি নিষ্কাশন হয় বেতনা নদী দিয়ে। তবে নদী শাসনের ফলে বেতনা আজ অস্তিত্ব সংকটে। এছাড়া অপরিকল্পিত মাছের ঘের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। স্লুইস গেটের শক্তি নেই পানি নিষ্কাশনের। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাবুডুবু খেতে হয় এই এলাকার মানুষের। গত কয়েকদিনের বৃষ্টির প্রভাবে পানিবদ্ধতার শিকার হয়েছে প্রায় তার অঞ্চলের ১০ গ্রামের মানুষ।

সাতক্ষীরা পৌরসভার (ভারপ্রাপ্ত) মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান জানান, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের প্রভাবে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রায় ১০ গ্রাম পানিবদ্ধতার শিকার হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার চলাচলের রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে বসতবাড়ি ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবাদি জমি ও মৎস্য ঘেরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানিবদ্ধতার বিষয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শহরের পানিবদ্ধতার শিকার এলাকাগুলোর সড়ক উঁচু করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

পানিবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী পরিকল্পনা নেয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। এই অঞ্চলের জন্য উপকূলীয় বোর্ড গঠন, বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ, সমস্যার কারণ অনুসন্ধানে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে একটি শক্তিশালি কমিটি গঠন, যে কোন প্রকল্প গ্রহণে স্থানীয় জনগণের পরামর্শ গ্রহণ, অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ বন্ধ, নদীর আন্তঃসংযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জোয়ার-ভাটার ব্যবস্থা করা, নদী খালের ইজারা বন্ধ, টিআরএমসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

https://www.dailysangram.info/post/537535