২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৩:৪৯

সিপিডির গবেষণা ফলাফল

বছরে গড়ে ২৭৬ ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে যানজটে

রাজধানী ঢাকায় যানজট পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। যানজটের কারণে রাজধানীর বাসিন্দাদের ২ ঘণ্টার যাত্রাপথে গড়ে ৪৬ মিনিট নষ্ট হচ্ছে। আর বছরে তাদের গড়ে ২৭৬ ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে যানজটে। ফলে জ্বালানি পুড়ছে, সময় অপচয় হচ্ছে। একই সাথে নষ্ট হচ্ছে উৎপাদনশীলতা। এতে বছরের প্রায় ১১ দিন যানজটের মধ্যেই কাটাতে হয় এই মেগা সিটির বাসিন্দাদের বলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে। সিপিডি বলছে, বায়ুদূষণজনিত রোগের কারণে প্রতি বছর ঢাকাবাসীর জনপ্রতি ব্যয় হয় চার হাজার টাকার বেশি। অথচ সরকারের বাজেট বরাদ্দ জনপ্রতি ২ হাজার ২২৮ টাকা।

রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে গতকাল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আয়োজিত সিপিডি ‘রিডিউসিং পলিউশন ফর গ্রিন সিটি’ শীর্ষক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার ৫০০ খানার ওপর জরিপ করে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেলসহ দেশী-বিদেশী পরিবেশবিদরা উপস্থিত ছিলেন।

সিপিডির গবেষণায় বলা হয়, গত ২-৩ বছরে রাজধানীতে বায়ু দূষণের পরিমাণ বেড়েছে। ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে প্লাস্টিক দূষণও। ৪৩ শতাংশ পরিবার মনে করে সরাসরি রাস্তায় আবর্জনা ফেলার কারণেই পরিবেশ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তার ওপর যোগ হয়েছে গাড়ি, কারখানার ধোঁয়া ও নির্মাণ কাজের ধুলাবালি। জরিপে অংশগ্রহণ করা ৭৬ শতাংশ পরিবার মনে করে বায়ু দূষণের পরিমাণ গত ২ থেকে ৩ বছরের তুলনায় আরো বেড়েছে। আর ৭৩ শতাংশ মনে করে ২ থেকে ৩ বছর তুলনায় প্লাস্টিক দূষণের পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়া ৪৩ শতাংশ পরিবার মনে করেন সরাসরি রাস্তায় প্লাস্টিক ফেলার কারণে এই দূষণ আরো বাড়ছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের বায়ু দূষণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বয়স গোষ্ঠী বিবেচনা করা হয়। গড়ে অসুস্থ পরিবারের সদস্যদের ২০ শতাংশ ছিল এই দুর্বল বয়স গোষ্ঠীর অন্তর্গত। এ ছাড়া সবচেয়ে সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা দুর্বল বয়স গোষ্ঠীর সর্দি এবং শ্বাসকষ্ট।

জরিপে বলা হয়েছে, এ দিকে, গৃহস্থালির বর্জ্যরে ৪৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক সেক্টর দ্বারা সংগৃহীত। আর গৃহস্থালির বর্জ্যরে ৪৪ শতাংশ সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিদের দ্বারা সংগৃহীত। রাস্তায় ৪৩ শতাংশ সরাসরি বর্জ্য ফেলে দেয়ার প্রবণতা স্বীকার করেছেন। এটি ব্যাপকভাবে ছুড়ে ফেলার সংস্কৃতি রয়েছে। যা ব্যক্তিরা প্রায়ই প্রদর্শন করে বাংলাদেশ। ৫৪ শতাংশ তাদের পানীয় জল ফুটিয়ে ব্যবহার করেন না। প্রায় ৩৯ শতাংশ তাদের পানি ফুটানো অবলম্বন এবং শুধু প্রায় ৩ শতাংশ পরিবার তাদের পানীয় জল ফিল্টার করে ব্যবহার করেন বলে জানান।

সিপিডির সুপারিশ অনুযায়ী, ২০২৮ সালের মধ্যে স্থায়ী চিমনি ইটভাটা বন্ধ করতে একটি নীতিমালা করা উচিত। যেন পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের সমস্ত স্থায়ী চিমনি ইট ভাটাগুলো বন্ধ করা যায়। একই সাথে ইট উৎপাদন কম দূষণকারী প্রক্রিয়ায় স্থানান্তরিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন উন্নত জিগজ্যাগ ভাটা, হাইব্রিড হফম্যান ভাটা এবং উল্লম্ব খাদ ইটভাটা। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা-ভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার সুপারিশও করেন তারা। এ ছাড়া পরিবেশ সারচার্জ বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয় সিপিডির গবেষকরা। গবেষকরা জানান, অর্থ আইন পরিবেশ দূষণকারী শিল্প দ্বারা উৎপাদিত পণ্যের ওপর ১ শতাংশ সারচার্জ নির্ধারণ উচিত। যা পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যয় হবে। প্লাস্টিক দূষণের জন্য মূলনীতি সুপারিশ পলিথিন ব্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার পাশাপাশি প্লাস্টিক পণ্যের রিসাইক্লিংয়ের ওপরে জোর দিতে হবে।

বক্তারা জানান, পরিবেশ দূষণের প্রধান দু’টি উৎস হলো বায়ু ও পলিথিন। এ ছাড়া নির্মাণ, যানবাহন, শিল্প, ইটভাটা থেকে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। ঘরের বাইরে বা ভেতরে দুই পর্যায়ে হচ্ছে ক্ষতি। ঘরের ভেতরে ইলেকট্রনিক পণ্য, ফ্রিজ, ফ্যান, এমন কি বাজারে ব্যবহৃত পলিথিন ঘরে এসে পরিবেশের ক্ষতি করছে। এ ক্ষতি মারাত্মকভাবে শিশুদেরও ওপর পড়ছে। এ ক্ষতি থেকে মুক্তি পেতে আইনি পদক্ষেপ যেমন দরকার, আবার সচেতনতাও দরকার।

উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, আইন করে এসব দূষণ বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য দরকার জনসচেতনতা। বিদ্যমান যেসব আইন আছে, তা আংশিক প্রয়োগ করলেও বাংলাদেশ ‘সোনার বাংলা’ হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, সড়ক তৈরিতে প্রধানমন্ত্রীকে ধোঁকা দিয়ে ফাইল পাস করে গাছকাটা হয়। প্রধানমন্ত্রী এখন বুঝে গেছেন। কোনো ফাইল এলেই সেই প্রকল্পে গাছকাটা হচ্ছে কি না, পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে কি না, তা যাচাই করে পাস করেন। পরিবেশে সম্মত নয়, এমন অনেক ফাইল ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে বটে, কিন্তু তা হচ্ছে পরিবেশকে ধ্বংস করে। পরিবেশ না বাঁচিয়ে উন্নয়ন করলে সে উন্নয়ন টেকসই হবে না।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/780428