২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১০:০৫

তৈরী পোশাক রফতানি কমায় ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন

তৈরী পোশাক রফতানি কমায় ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন -

বিগত সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি কমেছে এক-তৃতীয়াংশ ও ইউরোপের বাজারে কমেছে ১৪.৫০ শতাংশ। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে ‘পোশাক শিল্পের সার্বিক অবস্থা’ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগের কথা জানান বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।

লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামগ্রিক পোশাক আমদানি আশঙ্কাজনক হারে কমে এসেছে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পোশাক আমদানি ভ্যালুতে কমেছে ২২ দশমিক ২৮ শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। অন্য দিকে পরিমাণের দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আমদানি ২৮ শতাংশ কমেছে। যেখানে বাংলাদেশ থেকে কমেছে ২৯ শতাংশ; অর্থাৎ পরিমাণের দিক থেকে এই সাত মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। আর একই সময়ে ইউরোপের বৈশ্বিক আমদানি কমেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। পাশাপাশি পরিমাণ অনুযায়ী সমগ্র বিশ্ব থেকে আমদানি কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে কমেছে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।

বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, আমাদের প্রধান দু’টি বাজার হলো উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ। এই বাজার দু’টিতে আমাদের মোট রফতানির প্রায় ৮০ শতাংশ হয়। এ বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে আমাদের শিল্পে। আমরা এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য বরাবরই বাজার সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার তৈরির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছি। ২০১০ সাল থেকে আমরা ক্রমাগত এ কাজটি করে আসছি। সর্বশেষ আমরা অস্ট্রেলিয়ায় দিনব্যাপী বাংলাদেশ অ্যাপারেল সামিট করেছি। সেখানে আমরা আমাদের শিল্পের সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরেছি। আমরা আশা করছি, অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের রফতানিতে নতুন গতি সঞ্চার হবে। আমরা আরো অনেক অপ্রচলিত বাজার নিয়ে কাজ করছি, যেমন দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, ভারত, সৌদি আরব এমনকি ইরাক। বর্তমান এই সঙ্কটময় সময়ে নতুন বাজারে রফতানির প্রবৃদ্ধি আমাদের সাহায্য করছে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ব অর্থনীতি এক নজিরবিহীন সময় অতিক্রম করছে। শতাব্দীর ভয়াবহ বিপর্যয়, কোভিড মহামারীর ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর ফলে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে চরম বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে উৎপাদনকারী বা ক্রেতা, আমরা যে অবস্থানেই থাকি না কেন, সবাই একটি সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।

মূলত জ্বালানি তেল ও খাদ্য পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিশ্বব্যাপী নজিরবিহীন যে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে, তা নিয়ন্ত্রণের জন্য এখন উন্নত দেশগুলো সঙ্কোচনশীল মুদ্রানীতি নিয়েছে। তারা ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছেন, যা ভোক্তাদের আয়-ব্যয় এবং পণ্যের চাহিদায় বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ক্রেতারা এখন পোশাক কিনতে ব্যয় কমিয়ে খাদ্য ও জ্বালানির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে আমাদের পণ্যের খুচরা বিক্রয় কমে গেছে। ফলে প্রধান বাজারগুলোর পোশাক আমদানি কমে এসেছে।

পোশাক খাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি এ বছরে পুনর্নির্ধারণের জন্য বোর্ড গঠন করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড এখন পর্যালোচনার জন্য কাজ করছেন। বোর্ড এরই মধ্যে কয়েকটি সভা করেছেন এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে পরামর্শ করছেন। তারা কারখানা পরিদর্শন করে শ্রমিক ও মালিকদের সাথে আলোচনা করছেন। ধারণা করছি এ বছর শেষ হওয়ার আগেই একটি নতুন ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হবে। এর ফলে আমাদের খরচ কিন্তু আরো বাড়বে।

ফারুক হাসান বলেন, বৈশ্বিক সঙ্কটের মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পও চাপে রয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছর ন্যূনতম নতুন মজুরি কার্যকর হলে পোশাক শিল্প আরো চাপের মুখে পড়বে। এ ছাড়া পোশাক রফতানির আড়ালে ১০ কোম্পানির ৩০০ কোটি টাকা পাচার বিষয়ে প্রচারিত সংবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অভিযোগ তদন্ত না করেই ঢালাওভাবে প্রচার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিজিএমইএ। এই সংবাদে পোশাক শিল্পের ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/780210