২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৫:৪৪

মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতির তালিকায় বাংলাদেশ

বৈশ্বিক ওয়াচডগ সিভিকাস মনিটরের ওয়াচলিস্টে বাংলাদেশকে যুক্ত করা হয়েছে। মূলত যেসব দেশের নাগরিক স্বাধীনতা দ্রুত কমছে এমন দেশগুলোকে এই ওয়াচলিস্টে রাখা হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর ওই ওয়াচলিস্ট আপডেট করে সিভিকাস মনিটর। আর তাতেই বাংলাদেশের নাম যুক্ত করা হয়। এ ছাড়া নতুন করে এই লিস্টে ঢুকেছে বসনিয়া, ইকুয়েডর, সেনেগাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নামও।

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গভিত্তিক নাগরিক অধিকার গোষ্ঠী সিভিকাস মনিটর। বাংলাদেশ নিয়ে তারা বলেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হবে। এই নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে বিরোধী দল, অধিকারকর্মী ও ভিন্ন মতের কণ্ঠস্বরের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমানভাবে দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে। সিভিকাস মনিটর বিশ্বব্যাপী নাগরিক অধিকার ও সুশীলসমাজ নিয়ে কাজ করছে। সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারবিরোধী দল বিএনপির সমর্থকদের নিশানা করা, আইনি ও অন্যান্য উপায়ে অধিকারকর্মী-সাংবাদিকদের চুপ করানোর চেষ্টাসহ ভিন্ন মতকে দমনে যা কিছু করা দরকার, তা করতে উদ্যোগী বলে মনে হয়। সিভিকাস মনিটরের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের গবেষক জোসেফ বেনেডিক্ট বলেন, বাংলাদেশ একটি বিপজ্জনক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা দেখছেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ দায়মুক্তির সাথে বিরোধী দল, অধিকারকর্মী ও সমালোচকদের ওপর দমনপীড়ন চালাচ্ছে।

জানুয়ারিতে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে অবশ্যই মানুষের মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। এর মধ্যে প্রতিবাদ ও স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার, সব রাজনৈতিক দলের কাজ করার জন্য নিরাপদ-শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার মতো বিষয় রয়েছে।

সিভিকাস মনিটরের হালনাগাদ ওয়াচলিস্ট বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতার ব্যাপক অধোগতির ঝুঁকির দিকটি তুলে ধরেছে। সংগঠনটি বিশ্বের ১৯৭টি দেশ ও অঞ্চলের নাগরিক স্বাধীনতার গতিপথ নজরে রাখে। তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা গবেষণা অংশীদারদের সহায়তা নেয়।

সিভিকাস মনিটরের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের গবেষক জোসেফ বেনেডিক্ট বলেন, মানবাধিকার রক্ষকসহ সাংবাদিকদের হয়রানি ও দমনমূলক পরিবেশ বাংলাদেশে একটি শীতল প্রভাব তৈরি করেছে। এর ফলে অনেকেই কথা বলতে ভয় পায়। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সুশীলসমাজের সাথে একাত্মতা প্রকাশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। এই নিপীড়ন বন্ধে আহ্বান জানাতে হবে। নাগরিক ও গণতান্ত্রিক পরিসর উন্মুক্ত করতে কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ দিতে হবে।

সিভিকাস মনিটরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বছর এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারী বিএনপির সমর্থকদের গণগ্রেফতার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে হাজারো ভুয়া মামলা করেছে। পুলিশ লাঠি, কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়ে বিএনপির আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে। এই হামলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকজনও অংশ নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে।

সিভিকাস মনিটরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকার মানবাধিকার কর্মীদের ওপর হয়রানি বাড়িয়েছে। চলতি মাসে ঢাকার একটি আদালত মানবাধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ সমালোচনাকারী সংবাদমাধ্যম বন্ধ, কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের বিচার, সাংবাদিকদের হয়রানি, নির্বিচারে আটকের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে চুপ করার চেষ্টা করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বদলে যে নতুন বিল আনা হয়েছে, তা আগের আইনের মতোই দমনমূলক। নাগরিক পরিসরের ওপর চলমান বিধিনিষেধ, আক্রমণ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক সনদের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। বাংলাদেশ এই সনদে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ।

জোসেফ বেনেডিক্ট আরো বলেন, প্রতিটি মাস বাংলাদেশের নাগরিক পরিসরের ওপর একটি নতুন আক্রমণ নিয়ে হাজির হচ্ছে বলে মনে হয়। তারা আদিলুর ও নাসিরকে অবিলম্বে-নিঃশর্তে মুক্তির পাশাপাশি অধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ সব নিয়ন্ত্রণমূলক আইন আন্তর্জাতিক আইন ও মান অনুযায়ী সংশোধনেরও আহ্বান জানান।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/779959