২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবার, ৯:৩৭

ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৯০০ ছাড়িয়েছে

দেশে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৯০০ ছাড়িয়েছে। একদিনে আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৯০৯ জন মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ হাজার ৮ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত মাসের তুলনায় মৃত্যুর হারও বেশি চলতি মাসে। গত মাসে গড়ে দৈনিক ১১ জন করে মারা গেছেন। রাজধানীর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে গ্রামে। দেশে ইতিমধ্যে ডেঙ্গু রোগী মৃত্যু ও শনাক্তে পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ৭৮ হাজার ৯১৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ লাখ ৮ হাজার ৮১০ জন।

মৃত ৯০৯ জনের মধ্যে নারী ৫২০ জন এবং পুরুষ ৩৮৯ জন। মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ৩০৬ জন এবং রাজধানীতে ৬০৩ জন। গতকাল রোববার সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩ হাজার ৮ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮১২ জন এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার ১৯৬ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ৩ হাজার ৮ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪৭০ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৭৯৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬ হাজার ৬৭৬ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীর মধ্যে পুরুষ আক্রান্ত ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৮৪ জন এবং নারী ৭৩ হাজার ৩৪১ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৪৬ জন।

অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাইতে শনাক্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৪ জন। আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন শনাক্ত এবং প্রাণহানি ৩৪২ জন। সেপ্টেম্বরের ২৪ দিনে শনাক্ত রোগী ৬৩ হাজার ৯১৭ জন এবং মারা গেছেন ৩১৬ জন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খাতায় নেই।

ডেঙ্গুতে মধ্যবয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে
ডেঙ্গুতে এ বছর মধ্যবয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একইসঙ্গে শিশুদের ডেঙ্গু নিয়ে ভয় না পাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে তারা। অধিদপ্তর বলছে, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষ। ৫ বছরের নিচের বয়সী শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার ৮ শতাংশের মতো।

রোববার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার চিকিৎসা প্রসঙ্গে বলেন, সারা দেশের সব জেলা ও উপজেলা হাসপাতালসহ বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও একই প্রটোকল এবং গাইডলাইন অনুসরণ করে ডেঙ্গুর চিকিৎসা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের সব চিকিৎসককে আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু চিকিৎসা এবং পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

স্যালাইন সংকট প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের এই পরিচালক আরও বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য সব জায়গাতেই পর্যাপ্ত পরিমাণ এনএস-১ কিট মজুদ রয়েছে। ডেঙ্গু পেশেন্ট ম্যানেজমেন্টে সবচেয়ে বেশি যেটি প্রয়োজন সেটি হল আইভি ফ্লুইড স্যালাইন। এই স্যালাইন নিয়ে সাময়িক একটা সমস্যা হয়েছিল আপনারা জানেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে জরুরিভাবে আমরা ভারত থেকে ৩ লাখ প্যাক স্যালাইন আমদানি করেছি। এর মধ্যে ৪৪ হাজার প্যাক স্যালাইন আমরা হাতে পেয়েছি।

আমরা ইডিসিএলের (এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড) মাধ্যমে এসব স্যালাইন চাহিদা অনুযায়ী পাঠিয়ে দিয়েছি। বাকি স্যালাইনগুলো পর্যায়ক্রমে দেশে পৌঁছাতে শুরু করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সেগুলো সারা দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছি। সুতরাং বলা যায়, এ মুহূর্তে আমাদের কোনো স্যালাইনের সমস্যা হচ্ছে না। এই তিন লাখ ছাড়াও আরও কিছু স্যালাইন আমদানির প্রক্রিয়া চলছে, সেগুলো অনুমোদনের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। সবমিলিয়ে স্যালাইন নিয়ে আর কোনো সংকটের মুখোমুখি হতে হবে না।

https://www.dailysangram.info/post/536355