২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ১০:০৪

নতুন মডেলে অর্থনৈতিক সঙ্কট নিরসন চায় আইএমএফ

টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দেয়ার পরামর্শ

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা বাড়াতে ব্যাংক, রাজস্ব ও পুঁজিবাজারের মোট ৪৭টি সংস্কার প্রস্তাবের পর এবার নতুন করে অর্থনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণী মডেল প্রস্তুত করতে আগ্রহ দেখিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

দাতা সংস্থাটি মনে করে, নতুন মডেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট নিরসন হবে। এতে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতিও কমে আসবে। একই সাথে অর্থনীতি হবে শক্তিশালী এবং তা নতুন গতি পাবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সাথে এক বৈঠকে অংশ নিয়ে আইএমএফের ঢাকা সফররত চার সদস্যের কারিগরি সহায়তা (টিএ) বিষয়ক প্রতিনিধিদল এ প্রস্তাব তুলে ধরে।

বৈঠকে অর্থনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণী মডেল প্রস্তুতের প্রস্তাবের অংশ হিসেবে প্রতিনিধিদল আইএমএফের পক্ষ থেকে ‘ইকোনমিক মডেল ফরকাস্টিং’ শীর্ষক একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করে। এ সময় গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আইএমএফের এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এমন যে কোনো প্রস্তাব বাস্তবায়নে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফের কারিগরি কমিটির সাথে বৈঠকে অর্থনৈতিক ফরকাস্টিং মডেলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা হয়। গভর্নর তাদের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফের উদ্দেশ্য হলো সম্ভাব্য এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি ও এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি প্রোগ্রাম। নতুন তৈরি রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) অধীনে ভবিষ্যতে কিভাবে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা যায় আগাম ভবিষ্যদ্বাণী মডেলের মাধ্যমে তারই সতর্কতামূলক নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, যা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ক্ষতি কমিয়ে আনবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে করবে বেগবান। এতে সামষ্টিক অর্থনীতি টেকসই হবে এবং সঙ্কট দূরীকরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

গত ১৮ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে নীতি সুদহারের করিডোর প্রথা, সুদহারের সীমা প্রত্যাহার ও রিজার্ভের প্রকৃত হিসাবায়নসহ নানা বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

এর আগে গত বছরের জুলাই মাসে আইএমএফের কাছে ঋণের আবেদন করে সরকার। ঋণের শর্ত হিসেবে দাতা সংস্থাটি তখন ৪৭টি সংস্কার প্রস্তাব দেয়। এসব প্রস্তাব ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের প্রতিশ্র“তি দেয়ার পর বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়। যার প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় করে গত ফেব্র“য়ারিতে। সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ আগামী নভেম্বর মাসে হাতে পাবে সরকার।

টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দেয়ার পরামর্শ : বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং মূল্যস্ফীতিতে নাকাল দেশবাসী। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও সাংবাদিকদের সাথে পরামর্শের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি নতুনভাবে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সমসাময়িক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সাথে বৈঠককালে এ পরামর্শ দেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। এ অর্থনীতিবিদের সাথে বৈঠক শেষে মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট নিরসনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ জরুরি। তাই আমরা অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টরের সাথে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেসব পরামর্শ আসবে সে অনুযায়ী আগামী মুদ্রানীতি করা হবে। তবে বৈশ্বিক সঙ্কটের মধ্যেও অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। আমরা যে সঙ্কটের মধ্যে আছি তা সত্য। তবে সেই সঙ্কট নিরসনে চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেমন আমদানি নিয়ন্ত্রণ, রফতানি বৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স সংগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশও তার মাশুল গুনছে।

মেজবাউল হক বলেন, আজ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ মুদ্রানীতির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ভবিষ্যতে আরো অর্থনীতিবিদ, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম, চেম্বার অব কমার্স এবং অর্থনৈতিক খাতের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/779077