২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:১৮

তেল-ডালসহ দেড় হাজার কোটি টাকার কেনাকাটা করবে সরকার

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে ১ কোটি ৪৫ লাখ লিটার ভোজ্যতেল ও ২৬ হাজার মে.টন ডাল ক্রয়সহ ১১ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৪৯১ কোটি ৬৫ লাখ ৯৬ হাজার ৩২৩ টাকা।

গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেয়া হয়।

সভাশেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ২টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১১টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ১১টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৪৯১ কোটি ৬৫ লাখ ৯৬ হাজার ৩২৩ টাকা।

সভায়, ‘মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদীর তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং’ প্রকল্পের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের প্যাকেজ নং-৪৮ এর পূর্ত কাজ খুলনা শিপইয়ার্ড লি.-এর সঙ্গে ৩৬৭ কোটি ২৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫০ টাকায় ক্রয়ের চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় নকশা পরিবর্তনজনিত কারণে টেন্ডারভুক্ত বা টেন্ডার বহির্ভূত কিছু আইটেম হ্রাস বা বৃদ্ধি হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১৪ কোটি ৩৩ লাখ ৩৪ হাজার ২৯১ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে ১ম লটে ৩০ হাজার মে.টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে সারের মূল্য নির্ধারণ করে ১ম লটে ৩০ হাজার মে.টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মে.টন ৩৬৫ মার্কিন ডলার হিসেবে সর্বমোট ১ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশী মুদ্রায় ১২০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। সভায়, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ-এর কাছ থেকে ৪র্থ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয় করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৩৬০.১২৫ মার্কিন ডলার হিসেবে সর্বমোট ১ কোটি ৮ লাখ ৩ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশী মুদ্রায় ১১৮ কোটি ৮৪ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় হবে।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে মরক্কো থেকে ৮ম লটে ৩০ হাজার মে.টন টিএসপি সার আমদানি করা হবে। সার আমদানি চুক্তি অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে মরক্কো থেকে ৩০ হাজার (+১০%) মে. টন টিএসপি সার বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে সর্বমোট ১ কোটি ১৮ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৩০ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয় হবে। প্রতি মে. টন টিএসপি সারের দাম পড়বে ৩৯৪ মার্কিন ডলার। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় কানাডা থেকে ১৫তম লটে ৫০ হাজার মে.টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি মে. টন এমওপি সারের দাম ৩২৭.৭৫ মা. ডলার হিসেবে ৫০ হাজার (+১০%) মে. টন এমওপি সার আমদানিতে বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ মা. ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৮০ কোটি ২৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে।

সভায়, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় কানাডা থেকে ১৬তম লটে ৫০ হাজার মে.টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি মে. টন এমওপি সারের দাম ৩২৭.৭৫ মার্কিন ডলার হিসেবে ৫০ হাজার (+১০%) মে. টন এমওপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৮০ কোটি ২৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘ইটাখোলা-মঠখোলা-কটিয়াদী সড়ক ও নয়াপাড়া-আড়াইহাজার-নরসিংদী-রায়পুরা দুটি আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের একটি প্যাকেজের পূর্ত কাজ ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে রিলয়াবল বিল্ডার্স লিমিটেড; ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড; এবং রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৪১ কোটি ৯২ লাখ ৯৯ হাজার ৫৩২ টাকা।
সভায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৮০ লাখ (+৫%) লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে সয়াবিন তেল বিক্রির লক্ষ্যে ৮০ লাখ লিটার সয়াবিন ক্রয়ের জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নিয়ে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড ২ লিটার পেটজাত বোতলে এই সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে। প্রতি লিটার ১৬০.৩০ টাকা হিসেবে ৮০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ে ব্যয় হবে ১২৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৬৫ লাখ লিটার (+৫%) রাইস ব্রান্ড তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য জরুরি প্রয়োজন বিবেচনায় স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এই তেল ক্রয় করা হচ্ছে। মজুমদার প্রডাক্টস লিমিটেড ৫০ লাখ লিটার এবং (২) এআরটি অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস বিডি লিমিটেড ১৫ লাখ লিটার রাইচ ব্রান্ড তেল সরবরাহ করবে। প্রতি লিটার তেল প্রতি লিটার রাইস ব্রান্ড তেলের মূল্য ১৫৯ টাকা হিসেবে ৬৫ লাখ লিটার তেলের দাম পড়বে ১০৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

এ ছাড়া টেবিলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এই দুটি প্রস্তাবের মাধ্যমে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য স্থানীয় পর্যায়ে দরপত্রের মাধ্যমে ২৭ হাজার মে.টন মসুর ডাল ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এর মধ্যে বসুন্ধরা ও ফুলপুর অ্যাগ্রো সিটির কাছ থেকে প্রতি কেজি ১১১ টাকা ৬০০০ মে.টন মসুর ডাল ক্রয়ে ব্যয় হবে ৬৬ কোটি ৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া অপর একটি দরপত্রের মাধ্যমে ২১ হাজার মে.টন মসুর ডাল ক্রয় করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই ডাল সরবরাহ করবে নাবিল নাবা, বসুন্ধরা, ফুলপুর অ্যাগ্রো সিটি ও জে আই ট্রেডার্স। প্রতি কেজি ৯৯ টাকা হিসেবে মোট ব্যয় হবে ২০৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২টি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/778829