এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় পাস করার পর শিক্ষার্থীদের প্রথম টার্গেট থাকে ভালো কলেজে ভর্তি। কিন্তু সেই কলেজ পছন্দের দৌড়ে এবারো পিছিয়ে পড়েছে মেধাবীরা। তাই ভর্তির জন্য শীর্ষে থাকা কলেজগুলো পছন্দক্রমে রাখলেও শেষাবধি কোনো কলেজেই ভর্তির জন্য নির্বাচিত হতে পারছে না জিপিএ ৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী। প্রতি বছরই দেখা যায় কলেজ পছন্দ নিয়ে এমন নানা বিপত্তিতে পড়ছে মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এবারো কলেজে ভর্তির দ্বিতীয় দফার আবেদনের ফল প্রকাশ হয়েছে। সেখানেও দেখা গেছে জিপিএ ৫ পাওয়া দুই হাজার ২৯১ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য কোনো কলেজই পায়নি। আর মোট ২২ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য তারাও কোনো কলেজের তালিকায় নেই।
ভালো ফলাফল করার পরেও কেন এই মেধাবী শিক্ষার্থীরা পছন্দের কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হতে পারছে না তার কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যারা ভর্তির জন্য ভালো কলেজ পায়নি তারা মূলত পছন্দ দিয়েছেন তালিকায় শীর্ষে থাকা কলেজগুলো। ফলে মোট জিপিএ ছাড়াও যারা সব বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বরে এগিয়ে তারাই ভালো কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। আবার ক্যাচমেন্ট এরিয়া কিংবা বিভিন্ন কোটা সংরক্ষণের জন্যও অনেকে ভালো কলেজ পছন্দ দিলেও তারা আশানুরূপ কলেজ পায়নি।
মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভালো কলেজ না পাওয়ার বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জানান, কলেজ পছন্দের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আরো সচেতন হলে এ চিত্র হতো না। তাই যখন কলেজ বাছাইয়ের জন্য শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের ক্রম নির্ধারণ করবে তখন শুধু শীর্ষে থাকা কলেজের পাশাপাশি অন্যান্য ভালো কলেজও পছন্দের তালিকায় রাখতে হবে। তাহলেই এমন চিত্র হতো না। তবে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন দ্বিতীয় ধাপে কলেজ না পাওয়া শিক্ষার্থীরা তৃতীয় ধাপে আবেদনের সুযোগ পাবেন। আগামী ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর তৃতীয় ধাপে আবেদন নেয়া হবে। তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে ২৩ সেপ্টেম্বর। ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর তৃতীয় ধাপের নির্বাচন নিশ্চায়নের সুযোগ দেয়া হবে।
এ দিকে সূত্র জানায়, একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিতে দ্বিতীয় ধাপে আবেদন করেও কলেজ পাননি ২২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে রয়েছেন জিপিএ ৫ পাওয়া দুই হাজার ২৯১ জন শিক্ষার্থীও। কলেজে ভর্তি হতে তাদের ফের তৃতীয় ধাপে করতে হবে আবেদন। এর আগে প্রথম ধাপে আবেদন করেও কলেজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন সাড়ে ৮ হাজার জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীসহ মোট ৪৫ হাজার আবেদনকারী।
জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে দুই লাখ ৯৪ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করেন। তাদের মধ্যে কলেজ পেয়েছেন দুই লাখ ৭২ হাজার ৮৭০ জন। এ ধাপেও কলেজ না পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২ হাজারের বেশি। এর মধ্যে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী রয়েছেন দুই হাজার ২৯১ জন। জিপিএ ৫ পাওয়া এসব শিক্ষার্থীরা যদি প্রথম ধাপে বা দ্বিতীয় ধাপে আরো বেশি কলেজ পছন্দক্রমে দিতেন, তাহলে তুলনামূলক ভালো কলেজ পেতেন বলে মনে করেন ঢাকা বোর্ডের এ কলেজ পরিদর্শক।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, কিছু কলেজ আছে- যারা জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের নিশ্চয়তা দিয়ে জিম্মি করে রাখে। তারা অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া ছাড়াই ভর্তি করিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এটা কিছুতেই করতে দেয়া হবে না। গতবারো আমরা এটা হতে দেইনি, এবারো কেউ সুযোগ পাবে না। সূত্র আরো জানায়, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ মিলিয়ে এ পর্যন্ত একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় রয়েছেন ১২ লাখ ৫১ হাজার ৯২৮ জন শিক্ষার্থী। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর হিসেবে এখনো সাড়ে তিন লাখের বেশি শিক্ষার্থী একাদশে ভর্তি প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছেন। ভর্তির প্রথম ধাপে আবেদন করেন ১৩ লাখ সাত হাজার শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে কলেজ পান ১২ লাখ ৬১ হাজার জন, আর ভর্তি হবেন বলে নিশ্চিত (নিশ্চায়ন) করেন ১০ লাখ ২৬ হাজার শিক্ষার্থী।
অন্য দিকে দ্বিতীয় ধাপে আবেদন করেন দুই লাখ ৯৪ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে কলেজ পেয়েছেন দুই লাখ ৭২ হাজার জন। প্রথম ধাপে নিশ্চায়ন করা এবং দ্বিতীয় ধাপে কলেজ পেয়ে প্রাথমিক নির্বাচিত হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখের মতো। বাকি সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়াতেই নেই।
উল্লেখ্য, একাদশ শ্রেণীতে চূড়ান্ত ভর্তি শুরু হবে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর, যা চলবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। চলতি বছর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ভর্তির সর্বোচ্চ ফি ৮ হাজার ৫০০ টাকা। ভর্তি শেষে একাদশ শ্রেণীতে ক্লাস শুরু হবে ৮ অক্টোবর।
