১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ১:০৩

গ্রামের ডেঙ্গু রোগীরা ভিড় করছে ঢাকায়

মৃত্যু আরো ১২ আক্রান্ত ২১২৯

গ্রামের ডেঙ্গু রোগীরা ঢাকায় ভিড় করছে। সেখানে চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না, প্রয়োজনীয় চিকিৎসকও নেই। যদিও সরকারিভাবে দেশের সব হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার গাইড লাইন পাঠানো হয়েছে। গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বলছেন, দিনের বেলা ডাক্তার থাকলেও রাতের বেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার পাওয়া যায় না। এ দিকে গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও ডেঙ্গুতে ভোগে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে আক্রান্তের সংখ্যাও কম নয় যদিও অনেক হাসপাতাল গতকাল ডেঙ্গুর রিপোর্ট জমা দেয়নি। গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ১২৯ জন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ এমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কনট্রোল রুম।

ডেঙ্গু চিকিৎসা করেন এমন কয়েকজন চিকিৎসক নয়া দিগন্তকে জানান, শহুরে মশাটি এখন সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা শহরে সারা দেশ থেকেই রোগীরা আসছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের শুরুতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অন্তত গ্রামের মানুষগুলো বেঁচে যেত। অন্য দিকে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে চাপ কম থাকত এবং আমরা অন্য রোগগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে পারতাম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘এখনতো প্রায় প্রতিটি হাসপাতালেই প্রচুর ডেঙ্গু রোগী আসছে। একজন রোগী পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগেই তাকে হাসপাতাল ছেড়ে দেয়া হচ্ছে আরেকজন রোগীর জন্য। নতুন রোগী চিকিৎসার স্বার্থে এটা করা হলেও নৈতিক দিক থেকে এটা ঠিক না হলেও আমরা তা করতে বাধ্য হচ্ছি। চিকিৎসকরা বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে দেশে এত মানুষের মৃত্যু ও ডেঙ্গু আক্রান্তের জন্য তাদেরই দায় বেশি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়ন করা হলেও সেখানে এখনো ডাক্তার অনুপস্থিতি রয়েছে বলে রোগীরা বলছেন, ফলে চিকিৎসার জন্য ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অথবা রোগীর অথবা একটু ক্রিটিকেল হলেই ঢাকায় চলে আসছেন তারা। ঢাকার মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার আগে এক ডেঙ্গু রোগীর অভিভাবক মো: মাহবুব আলী (গত ১৪ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছেন, তিনি এসেছেন নরসিংদীর পলাশ থেকে। ঢাকার কাছেই থাকায় তিনি তার ডেঙ্গু আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে চলে এসেছেন ঢাকায়। তিনি বলেন, পলাশ উপজেলায় রাতের বেলা চিকিৎসক থাকে না। থাকলেও চিকিৎসকরা চেম্বারে রোগী দেখায় ব্যস্ত থাকেন। এসব কারণে তিনি তার ছেলেকে পলাশে ভর্তি না করে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন, মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কনট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে ঢাকায় ৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে গতকাল ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৪৩ জন এবং ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ২৮৬ জন। ঢাকার ৮৪৩ জনের মধ্যে ৬০৬ জন ঢাকার ২০ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং বেসরকারি ৫৬ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৫৬ জন রোগী। গতকাল পর্যন্ত চলতি সেপ্টেম্বরের ১৫ দিনে দেশে মোট ৩৮ হাজার ১৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে এবং একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১৯৭ জনের।

চলতি বছর সারা দেশে গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৯৬৪ জন, মৃত্যু হয়েছে ৭৯০ জন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/777654