১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ১০:১৮

ডিম আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিলো সরকার

সীমিত পর্যায়ে ডিম আমদানির অনুমতি

প্রথমবারের মতো ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার। এখন প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা, আলু কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজ ৬৪ টাকা ৬৫ টাকা করে বিক্রি করতে হবে। গতকাল থেকে এই দাম কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্য দিকে, সীমিত পর্যায়ে ডিম আমদানিরও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ডিমের দাম না কমলে ডিম আমদানি অবাধ করে দেয়া হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেছেন, ভোক্তা অধিকার মাঠে থেকে এটি মনিটরিং করবেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গত বুধবার মিটিং করেছি। সেখানে আমরা তিনটা কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পেঁয়াজ, আলু এবং ডিমÑ এই তিনটি কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করছি। কৃষি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত কিন্তু আমরা কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেইনি। আজই প্রথম কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলাম। সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই করা হয়েছে। আশা করছি এটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো।

তিনি বলেন, কোল্ডস্টোরেজে রাখাসহ সব কিছু হিসাব করে আলুর দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। তবে ঢাকায় যদি এ দাম হয় তাহলে চট্টগ্রামে একটু বাড়তে পারে। সারা দেশকে বিবেচনায় নিয়েই ভোক্তাপর্যায়ে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আর কোল্ডস্টোরেজ গেটে আলুর দাম হবে ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি। এই দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা আইনগতভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ তে এই ক্ষমতা দেয়া আছে।

তিনি বলেন, সব দিক বিবেচনায় নিয়ে খুচরা বাজারে দেশী পেঁয়াজের যৌক্তিক সর্বোচ্চ মূল্য প্রতি কেজি ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা হওয়া উচিত। তবে স্থানভেদে এক টাকা ব্যবধান হয় দূরত্ব অনুযায়ী। এটা কৃষি মন্ত্রণালয় সব কিছু বিচার-বিবেচনা করেই আমাদের এটা বলেছে। মন্ত্রী বলেন, ডিমের ক্ষেত্রে খুচরা মূল্য ১২ টাকা নির্ধারণ করেছি। ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা হওয়ায় আমরা এই দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। প্রতি পিস ডিম এখন থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করা হবে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এই দাম আমাদের জানানো হয়েছে। আমাদের পাশের দেশে দামের খবর নিয়েছি এবং ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ভোক্তা অধিদফতর থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) বাজার মনিটরিং করবেন। জেলা-উপজেলাসহ বড় বড় শহরে মনিটরিং চলবে। আজকের ঘোষণার পরে সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এই দামটা কি এখন থেকে কার্যকর হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, দামতো কেবল ঘোষণা হলো প্রচার হতে একটু সময়তো লাগবে। আশা করছি দুই-এক দিনের মধ্যে এই দাম কার্যকর হবে। ভোক্তা অধিকার আজ থেকে নামবে।

তিন পণ্যের দাম কি স্বাভাবিক সময়ের থেকে একটু বেশি মনে হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে গত ছয় মাসের দাম বিবেচনায় নিয়েছি। তাই কৃষি ও মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যে দাম বলেছে আমরা সেটাই করেছি। সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা পিস, সেটা ১২ টাকা করা হয়েছে। পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি সেখান থোকে কমিয়ে সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা করেছি। আর আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে সেটা ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা করেছি।

যদি অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে তা হলে কী ব্যবস্থা নেবেন? জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ধরেন আলুর ক্ষেত্রে, আলু বর্তমানে কৃষকের ঘরে নেই সব চলে গেছে কোল্ডস্টোরেজে। সেখানে ২৭ টাকার বেশি বিক্রি করতে দেবো না। যদি তারা সে দামে বিক্রি না করে আটকে রাখে। তাহলে সেখান থেকে বের করে নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হবে। প্রয়োজনে নিলাম করে দেবো যাতে দাম ২৭ টাকা থাকে। পেঁয়াজ এরকম স্টোর করার সুযোগ নেই। কারণ কৃষি মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে পর্যালোচনা করে এই দাম নির্ধারণ করেছে। কাজেই এখানে কোনো সমস্যা হবে না এবং ডিমের সুবিধা হলো আমরা আমদানি করতে পারবো। তাহলে এর প্রভাব কমানো সম্ভব।

বাজারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, দৈব-দুর্বিপাক ঘটলে আমাদের কিছু করার থাকবে না। আশা করছি কোনো প্রভাব পড়বে না। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করছি না। সেটা বলে প্রচলিত যে আইন আছে সে অনুযায়ী ভোক্তা অধিকার ব্যবস্থা নেবে। মোট কথা আইনে যা যা আছে সেটার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাজারে কোনো কারণ ছাড়াই অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য রয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন ন্যায্য দাম কার্যকর করবো।

সীমিত পর্যায়ে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত ক্যাবের সন্তোষ : সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে ডিম বিক্রির হওয়ায় গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভায় সীমিত পর্যায়ে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে ডিম আমদানির এই সিদ্ধান্তে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সন্তোষ প্রকাশ করেছে। ক্যাব মনে করে সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নির্ধারিত প্রতি পিস ডিম ১২ টাকায় বা তার কমে ভোক্তারা কিনতে পারবে। গতকাল পাঠানো এক বার্তায় ক্যাব বলছে, ইতঃপূর্বে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে ডিমের দামের ওপর আলোচনা সভায় ভোক্তা পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত প্রতি পিস ডিম ১২ টাকার নিচে না কমলে ডিম আমদানি করার সুপারিশ করেছিল ক্যাব। ক্যাব মনে করে ডিম আমদানির ফলে ভোক্তারা সাশ্রয়ীমূল্যে ডিম কিনতে পারবে এবং স্থানীয় বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ডিম সাশ্রয়ী মূল্যে বাজারে বিক্রি হবে এবং দেশে ডিমের বাজার একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে পৌঁছাবে। ডিম ছাড়াও পেঁয়াজ, আলু ও সয়াবিন তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্তের জন্যও ক্যাব সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/777422