১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:২১

সেপ্টেম্বরের ১৩ দিনেই দেশে ডেঙ্গুতে ১৭৪ জনের প্রাণহানি

চলতি মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। দিন যত যাচ্ছে, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর মিছিল ততই দীর্ঘ হচ্ছে। ঢাকার বাইরেই ডেঙ্গুর দাপট বেশি। রাজধানীর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে গ্রামে। একদিনে আরও ১৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ১৩ দিনে মারা গেছেন ১৭৪ জন। দেশে এ পর্যন্ত ৭৬৭ জন মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। দেশে ইতিমধ্যে ডেঙ্গু রোগী মৃত্যু ও শনাক্তে পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। একদিনে ডেঙ্গুতে ২ হাজার ৯৪৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫৭ হাজার ১৭২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এর মধ্যে রাজধানীতে ৬৯ হাজার ৭৬০ জন এবং ঢাকার বাইরে ৮৭ হাজার ৪১২ জন। মৃত ৭৬৭ জনের মধ্যে নারী ৪৪৪ জন এবং পুরুষ ৩২৩ জন। মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ২৩০ জন এবং রাজধানীতে ৫৩৭ জন। গতকাল বুধবার সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৯৪৪ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮২৩ জন এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার ১২১ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ২ হাজার ৯৪৪ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৯৮৮ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ হাজার ১৩৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫ হাজার ৮৫১ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫৭ হাজার ১৭২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীর মধ্যে পুরুষ আক্রান্ত ৯৬ হাজার ৯২১ জন এবং নারী ৬০ হাজার ২৫১ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪১৭ জন।

অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাইতে শনাক্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৪ জন। আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন শনাক্ত এবং প্রাণহানি ৩৪২ জন। সেপ্টেম্বরের ১৩ দিনে শনাক্ত রোগী ৩৩ হাজার ৩৬৪ জন এবং মারা গেছেন ১৭৪ জন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খাতায় নেই।

খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী
ছাড়াল সাড়ে ৯২২৪ : মৃত্যু ৩১
খুলনা ব্যুরো: খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছাড়াল ৯ হাজার ২২৪ জন। এসময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮ হাজার ২৪০ জন। ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে মোট ৩১ জনের। মারা যাওয়ার মধ্যে খুমেক হাসপাতালে ১০ জন, খুলনায় ২ জন, সাতক্ষীরায় ১ জন, যশোরে ৬ জন, মাগুরায় ১ জন, কুষ্টিয়ায় ৫ জন, ঝিনাইদহে ২ জন এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৮৩০ জন এবং রেফার্ড করা হয় ১১৩ জনকে।

খুলনা বিভাগে (সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) গত ২৪ ঘন্টায় বিভাগের ১০ জেলায় ও সরকারি দুই মেডিকেল হাসপাতাল মিলে নতুন করে ২৬৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ২৬ জন এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ জন ভর্তি হয়েছে।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, গত একদিনে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় নতুন করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ২৬৬ জন। বিভাগে ১০ জেলায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির মধ্যে খুলনায় ১৭ জন, বাগেরহাটে ১৩ জন, সাতক্ষীরায় ১১ জন, যশোরে ৪০ জন, ঝিনাইদহ ও মাগুরায় ৩৪ জন করে, নড়াইলে ২৫ জন, কুষ্টিয়ায় ৩৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১ জন এবং মেহেরপুরে ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে।

খুমেক হাসপাতালের আরএমও ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় খুমেক হাসপাতালে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ২৬ জন। এ সময়ে ডেঙ্গুতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১২ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছে ১৭৪ জন। এ পর্যন্ত খুমেক হাসপাতালে ১১৯৩ জনকে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন ১০০৯ জন এবং ১০ জনের মৃত্যু হয়।

খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র মতে, গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা জেলায় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১৭ জন। এ সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৪ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৪২ জন। এ পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৪৬৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪১৮ জন এবং রেফার্ড করা হয় ৫ জনকে এবং মৃত্যু হয় ২ জন রোগীর।

https://www.dailysangram.com/post/535388