১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:০৬

গতবারের চেয়ে ডেঙ্গুতে এবার মৃতের সংখ্যা প্রায় ২২ গুন বেশি

গত বছর প্রথম ৯ মাস ১০ দিনে যতো ডেঙ্গু আত্রান্ত রোগী মারা গেছে এবার মৃতের সংখ্যা তার চেয়ে প্রায় ২২ গুন বেশি। মৃত্যু ও আক্রান্তে গত মাসে রেকর্ড গড়ার পর চলতি মাসেই সেই রেকর্ড ভাঙার পথে হাঁটছে এডিস। এমনটিই জানিয়ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতবারের চেয়ে ডেঙ্গুতে এবার মৃতের সংখ্যা প্রায় ২২ গুন বেশি।

গতকাল সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করে ডেঙ্গু ডেথ রিভিউ কমিটি জানিয়েছে, আগামীতে আরও ভয়াবহ হবে পরিস্থিতি, কঠিন হবে রোগী বাঁচানো। তাই প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাছের হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

কঠিন অবস্থা মোকাবিলায় আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলের প্রতিটি ওয়ার্ডেই চালু করা হবে বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থা বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি সব বারের চেয়ে আলাদা। যেটা অনুমান করা যাচ্ছে আগামীতে আরও ভয়ংকর রূপে ডেঙ্গু আসবে। যতদিন যাবে ততদিন খারাপভাবে রোগী হাসপাতালে আসবে। চিকিৎসকরা চেষ্টা করার পরও রোগীকে বাঁচাতে পারবে না। তাই সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে হবে।

মশার কামড়ে হাসপাতালে আসা রোগী ও তার স্বজনদের নাজেহালের দৃশ্য ঢাকা মেডিকেলসহ ঢাকার প্রায় হাসপাতালের বিরাজমান। ডেঙ্গু রোগীতে ঠাসা প্রায় সব হাসপাতাল।

এডিস মশার তা-বে কতোটা নাকাল বাংলাদেশ তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া প্রতিদিনের হাল-নাগাদ তথ্য। গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা যায় ৩২ জন। এ বছর যা প্রায় ২২ গুন বেশি। আক্রান্তের হিসাব যেখানে গত বছর থেমেছে ৬২ হাজার ৩৮২ জনে, সেখানে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাস ১০দিনেই তা ঠেকেছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩২৮ জনে। তেমনি গত মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুতে রেকর্ড করার পর চলতি মাসও রয়েছে নতুন রেকর্ড গড়ার পথে।

এমন ভীতিকর অবস্থার মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে ডেঙ্গু ডেথ রিভিউ কমিটি ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির জানিয়ে গেলেন, দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। বাড়তে পারে মৃত্যুহার। এ অবস্থায় সন্দেহ হলেই কাছের হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, যখনই কোনো ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিবে, যেমন তীব্র পেটে ব্যথা, বমি-ডায়রিয়া যে কোনো জায়গা থেকে রক্ষ বের হওয়া বা একেবাবে দুর্বল বোধ করা সাথে সাথে কাছের কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। বাড়িতে থাকা যাবে না।

ভয়াবহতা মোকাবেলায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫২টি ওয়ার্ডে শিগগির চালু হচ্ছে বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থা। যেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে গুরুতর আক্রান্তদের বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক। হিসাব বলছে, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রতি ২শ' জনে মৃত্যু হচ্ছে একজনের।

এদিকে এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে দেশে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪১ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৯৪৪ জন। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ২৭২ জনে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৮১৬ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৪ হাজার ২০৭ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫ হাজার ৬০৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫১ হাজার ২৭২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৬৮ হাজার ২৬ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮৩ হাজার ২৪৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৭১৫ জন। ঢাকায় ৬৩ হাজার ২৯১ এবং ঢাকার বাইরে ৭৭ হাজার ৪২৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ছাড়াল
৮ হাজার ৬৯০ ॥ মৃত্যু ৩১
খুলনা ব্যুরো : খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছাড়াল ৮ হাজার ৬৯০ জন। এসময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ হাজার ৭৪৩ জন। ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে মোট ৩১ জনের। মারা যাওয়ার মধ্যে খুমেক হাসপাতালে ১০ জন, খুলনায় ২ জন, সাতক্ষীরায় ১ জন, যশোরে ৬ জন, মাগুরায় ১ জন, কুষ্টিয়ায় ৫ জন, ঝিনাইদহে ২ জন এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৮০৪ জন এবং রেফার্ড করা হয় ১১২ জনকে।

শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা বিভাগে ও দুইটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল মিলে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ২৫৩ জন। এ সময়ে কুষ্টিয়া জেলায় একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। এছাড়া একদিনে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ৩২ জন এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৮ হাজার ৬৯০ জন এবং মৃত্যু হয় ৩১ জনের।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, গত একদিনে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় নতুন করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ২৫৩ জন। এ সময়ে কুষ্টিয়া জেলায় একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয় এবং ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ৪২ জন। এছাড়া বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির মধ্যে খুলনায় ১৮ জন, বাগেরহাটে ১৪ জন, সাতক্ষীরায় ১ জন, যশোরে ৪০ জন, ঝিনাইদহে ২৫ জন, মাগুরায় ৩২ জন, নড়াইলে ২৫ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৫ এবং মেহেপুরে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে।

খুমেক হাসপাতালের আরএমও ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় খুমেক হাসপাতালে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৩২ জন। এ সময়ে ডেঙ্গুতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৮ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছে ১৬১ জন। এ পর্যন্ত খুমেক হাসপাতালে ১১৩৮ জনকে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়।

খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র মতে, গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা জেলায় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১৮ জন। এ সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৩৫ জন। এ পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৪৩১ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৮৯ জন এবং রেফার্ড করা হয় ৫ জনকে এবং মৃত্যু হয় ২ জন রোগীর।

https://www.dailysangram.info/post/535248