৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১০:২৩

পাবনায় পদ্মার ভাঙন

নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে নদী পাড়ের হাজার হাজার মানুষ

পাবনায় পদ্মা নদী পাড়ের মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে নদী বসতবাড়ির পাশেই চলে এসেছে। যেকোনো সময় নদীগর্ভে তাদের আবাসস্থল ভেসে যেতে পারে।

এলাকাবাসী ভুক্তভোগীরা জানান, ব্রিটিশ শাসনামলে দেশের অন্যতম নৌবন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল ঈশ্বরদীর সাঁড়া। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাইসহ দেশ-বিদেশের বড় বড় জাহাজে মালামাল আসতো এ বন্দরে। পাকশীতে পদ্মা নদীর ওপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের পর এ নৌবন্দর গুরুত্ব হারাতে থাকে। একসময় নৌবন্দরের পাকা স্থাপনা নদীগর্ভে চলে যায়। উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে সাঁড়া ইউনিয়নের আরামবাড়িয়া পর্যন্ত আট কিলোমিটার নদীর তীরের মধ্যে পাকশী ইউনিয়নে দুই কিলোমিটার ও সাঁড়া ইউনিয়নের পাঁচ কিলোমিটার নদীর তীরে বাঁধ রয়েছে। শুধু মাঝের ৫ নম্বর সাঁড়াঘাট এলাকার এক কিলোমিটার নদীর তীরে বাঁধ নেই। প্রতি বছর পদ্মায় পানি বাড়লেই ভাঙন আতঙ্কে থাকেন এখানকার মানুষরা। এ ছাড়া সদর উপজেলার চরতারাপুর, দোগাচ্ছি ও ভাড়াড়া এলাকার মানুষও একই আতঙ্কে ভুগছে।

সাঁড়াঘাট এলাকার বাসিন্দারা জানান, নদীতে পানি বাড়লেই এ এলাকার বাসিন্দারা উৎকণ্ঠায় থাকেন। এখানকার মৎস্য সমিতির অফিস ও দোকানপাট নদীতে ভেঙে গেছে। এ বছর বসতবাড়ি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে এসে বাঁধ নির্মাণের জন্য মাপামাপি করেন কিন্তু বাঁধ নির্মাণ হয় না। এজন্য স্থায়ী কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। এ এলাকায় দরিদ্র জেলেরা বসবাস করেন। নদীর যে গতিবিধি দেখছি এবার বসতবাড়ি ভেঙে যেতে পারে। ভাঙন আতঙ্কে আমাদের দু’চোখে ঘুম নেই। পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি যখন কমবে তখন ভাঙন আরো তীব্র আকার ধারণ করবে। আমরা নদীভাঙন এলাকার অবহেলিত মানুষ। সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিরা এসে বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে যায় কিন্তু সামান্য এক কিলোমিটার এ বাঁধ নির্মাণ হয় না। এখান থেকে ২০০ মিটার দূরেই ঈশ্বরদী ইপিজেড। সাঁড়াঘাটে বাঁধ না দিলে একসময় এ ভাঙন ইপিজেডে গিয়ে ঠেকবে। নিজেদের রক্ষা করার জন্য বালির বস্তা ফেলে এক লাখ টাকা খরচ করেছি। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।

সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রফিক বলেন, সাঁড়াঘাটের নদীর তীরে এক কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নেই। অথচ সাঁড়াঘাটের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে নদীর তীরে সাত কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। এখানকার বাসিন্দারা অধিকাংশই জেলে ও দরিদ্র কৃষক। তাদের মাথাগোঁজার ঠাঁই নদীতে বিলীন হয়ে গেলে এরা নিঃস্ব হয়ে যাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা একাধিকবার দেখে বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন।
সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক রানা সরদার বলেন, সাঁড়া ৫ নম্বর ঘাটের দুই পাশে সাত কিলোমিটার নদীরক্ষা বাঁধ রয়েছে। অথচ মাঝের এ এলাকায় এক কিলোমিটারে বাঁধ নেই। এ বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েছি। এখনো মাঝেমধ্যেই এ বিষয়ে যোগাযোগ করি। তারা শুধু বলেন, এ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আসলে আর কতদিন এই বাঁধ নির্মাণে সময় লাগবে তা বলতে পারছি না।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফরহাদ হোসাইন বলেন, সাঁড়া ৫ নম্বর ঘাট এলাকার ভাঙনের বিষয়টি আমাদের জানা রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এখানে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে। এখানে বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব তথ্য ঢাকা হেড অফিসে পাঠানো হয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুত সময়ে সমস্যার সমাধান হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/775444