৩০ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ১২:২৭

সঞ্চয়পত্র এখন সরকারের মাথাব্যথার কারণ

ঋণ নেয়ার পরিমাণ দ্বিগুণ করা হলো

সঞ্চয়পত্র এখন সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা অতিক্রম করেছে অর্থবছরের পাঁচ মাসেই। প্রতি মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ বেড়ে চলেছে। এর ফলে সরকারকে বহন করতে হচ্ছে অধিক সুদের বোঝা। অর্থমন্ত্রী স্বয়ং সংসদে বলেছেন, ‘সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদহার আমাদের অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে’। এই প্রেক্ষাপটে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর জন্য সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। কিন্তু জনগণের একটি বিশাল অংশ সঞ্চয়পত্র কিনে উপকৃত হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে হুট করে এর সুদের হার কমানো সম্ভব হচ্ছে না। এক দিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির উল্লম্ফন, অন্য দিকে সরকারের সুদের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে আর্থিক খাতে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়,চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি (আট মাসে) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩২ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা, যা বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬৫ দশমিক ৪ ভাগ বেশি। আর গত অর্থবছরের একই সময়ে চেয়ে এবার সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্তির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬২ দশমিক ১৮ ভাগ। এ পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ‘সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে অধিক পরিমাণ ঋণ গ্রহণে সরকারের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।’

ব্যাংকে আমানতের সুদের হার ব্যাপক কমে যাওয়া এবং পুঁজিবাজারের ধসÑ এই দুই কারণে সাধারণ মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্রকে বেছে নিয়েছেন। বেশ কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্রে মানুষের বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরের শেষে এ লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ২৮ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে বাজেটে ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরে ৯ মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ৩৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের পরিমাণ ১৯ হাজার ৬১০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৩২ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ দিকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সব মিলিয়ে ৫ হাজার ৪২০ কোটি ৫৯ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। তার আগের মাস ডিসেম্বরে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বেড়েছে ২ হাজার ২৬৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বা ৭২ শতাংশ। আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদাসল শোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে তাকে বলা হয় নিট বিক্রি।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমানোর লক্ষ্য নিয়ে ২০১৫ সালের এপ্রিলে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হলেও এর বিক্রি কমেনি।
সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্যে দেখা যায়, গত বছর নভেম্বর মাসে চার হাজার ৪০২ কোটি, অক্টোবরে ৪ হাজার ২৬৬ কোটি ৬১ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৩ হাজার ৮৫৪ কোটি ৫০ লাখ, আগস্টে ৪ হাজার ২৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। জুলাই ও জুনে বিক্রির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩ হাজার ৪৯৮ কোটি ৩৭ লাখ ও ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/216371