১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ৭:৩২

ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্ছিত প্রকৌশলীই উলটো বরখাস্ত

‘অপরাধ’ গণমাধ্যমে তথ্য দেওয়া

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে বিদ্যুৎ কার্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার সময় লাঞ্ছিত প্রকৌশলী রকি চন্দ্র দাসকেই উলটো সাময়িক বরখাস্ত করেছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)। তার ‘অপরাধ’ তিনি গণমাধ্যমে হামলা-ভাঙচুরের বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি নেসকো।

জানা যায়, বুধবার বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নেসকোর লিগ্যাল অ্যান্ড কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স শাখার উপমহাব্যবস্থাপক রহমত উল্লাহ আল ফারুক স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে রকি চন্দ্রকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাকে রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রহমত উল্লাহ আল ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, তিনি (রকি চন্দ্র) বিধিবহির্ভূতভাবে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন।

একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেছেন, ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করা হয়েছে। এটা কোনোভাবেই মঙ্গলজনক নয়।

এদিকে বিদ্যুৎ কার্যালয়ে হামলার ৪৮ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার দুপুরে কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নেসকো রংপুর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী ইকবাল আসিফ রাজী। তবে অভিযোগে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। কারা হামলা করেছে তাদের পরিচয় জানার পরও পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।

ইকবাল আসিফ রাজী সাংবাদিকদের বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ তদন্ত করে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনবে।

কালীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুর রহমান বলেন, নেসকো সহকারী প্রকৌশলী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একই দিন দুপুরে কালীগঞ্জ নেসকো কার্যালয় পরিদর্শন করেন নেসকোর রাজশাহী কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাকিউল ইসলাম। হামলার ঘটনায় মন্ত্রীপুত্র রাকিবুজ্জামানের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন। তিনি বলেন, রাকিবুজ্জামান আহমেদ ঘটনাস্থলে ছিলেন না।

এ ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া যায়নি। এরপর জাকিউল কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে যান। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কালীগঞ্জ নেসকো অফিস পরিদর্শন করেছি। নেসকো অফিসে মঙ্গলবার দুপুরের সৃষ্ট অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত করে বের করবে কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

এদিকে প্রশ্ন উঠেছে-তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আগেই এই কর্মকর্তা কি করে জানলেন ঘটনার সঙ্গে কে জড়িত ছিলেন বা ছিলেন না। মঙ্গলবার দুপুরে কালীগঞ্জে উপজেলা নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় নেসকোর কালীগঞ্জ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রকি চন্দ্র রায়সহ (৪০) কয়েকজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।

অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্রসহ যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। ডিজিটাল হাজিরা মেশিন নষ্ট করে দেওয়া হয়। কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এই হামলার সঙ্গে জড়িত একজন মন্ত্রীর ছেলের নাম জানা গেছে। তিনি সরকারি দলের স্থানীয় নেতা। তার ডাকে সাড়া না দেওয়ায় ওই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। এমন অভিযোগ করেছেন হামলার শিকার ওই প্রকৌশলী

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/713123