দফায় দফায় বাড়ছে চালের দাম। গত সপ্তাহে আবারও নতুন করে বেড়েছে চালের দাম। এর আগেও এক মাসে দুই দফা বেড়েছে চালের দাম। এখন বাজারে গেলে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। ফলে বেড়ে গেছে নিত্যদিনের বাজার খরচ। যার ফলাফল, কষ্টে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
রাজধানীর খুচরা বাজারে এখন মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৪৩ টাকা। কিছুদিন আগেও যা কেজিতে তিন টাকা কম ছিল। মাঝারি মানের চালের দামও উঠেছে ৪৮ টাকায়। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা কেজি দরে। এ হিসাবে সব রকম চালের দাম কেজিতে তিন টাকা বেড়েছে।
চালের চড়া দামের কারণে সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোলাবাজারে চাল বিক্রি কর্মসূচির (ওএমএস) ট্রাকের সামনে গেলে। এসব জায়গায় ব্যাগ হাতে নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় বেড়েছে। সেখানে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করছে সরকার। তবে এ কর্মসূচির চাল সীমিত হওয়ায় সকাল ৯টায় বিক্রি শুরু করার পরপরই শেষ হয়ে যায়। একটু দেরি হলে আর পাওয়া যায় না। পলাশী বাজারে চালের ক্রেতা হামিদা বেগম বলেন, কিছুদিন আগেও এক বস্তা চাল কিনতে খরচ হয়েছে এক হাজার ৭০০ টাকা। এখন সেটা দুই হাজার টাকা চাচ্ছে। তার মানে, কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ছয় টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় চালের আমদানি প্রায় বন্ধ। আবার হাওর এলাকায় ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে আগামী দিনে চালের সরবরাহ কিছু কম হওয়ার তথ্যের মনস্তাত্তি¡ক প্রভাবও বাজারে পড়েছে। সব মিলিয়ে চালের বাজারে টান পড়েছে বলেই দাম এত চড়ে গেছে। তারা আরো বলেছেন, এপ্রিলের শেষ দিকে ২৫ শতাংশ চালের সরবরাহ আসে নতুন মৌসুমের চাল থেকে। এ বছর সেটা আসছে না। কারণ, বৃষ্টি। তিনি বলেন, এ বছর চালের বাজারে টান ছিল। হাওরে যে পরিমাণ ধান নষ্ট হলো, তাতে সরবরাহ অফুরন্ত থাকবে না।
এ ছাড়া আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে মুদি পণ্য থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সব দ্রব্যের দামে ঊর্ধ্বমুখী। যদিও রমজান আসতে এখনো মাসখানেক বাকি। তবুও দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো রকম পিঁছিয়ে নেই ব্যবসায়ীরা। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে মুদি পণ্যের দাম আবারো বেড়েছে। বেড়েছে সবজির দামও। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, রসুন, ডালের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৩০ টাকা। এ ছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচা সবজির দামও কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ১০ টাকা করে বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষণ ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যতালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দেশি রসুন গতকালের বাজারে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। এ ছাড়া ভারতীয় রসুন কেজিতে ৩০ টাকা বাড়িয়ে ২৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম মানভেদে কেজিপ্রতি পাঁচ-ছয় টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৩২ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মুগডালের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা দরে; ভারতীয় মুগডাল ১২০ টাকা। এ ছাড়া মাসকলাই ১৩৫ টাকা, ছোলার ডাল ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে মসুর ডালের দাম। গত সপ্তাহে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দেশি মসুর ডাল আজকের বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১২০ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ৮০ টাকা।
ভোজ্য তেলের দাম আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ লিটারের বোতল ব্র্যান্ডভেদে ৫০০ থেকে ৫১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি লিটার ভোজ্য তেল ১০০ থেকে ১০৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লবণ কেজিতে দুই টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়। দারুচিনি ১০ বেড়ে ৩৬০ টাকা, জিরা ৪৫০ টাকা, শুকনা মরিচ ২০০ টাকা, লবঙ্গ এক হাজার ৫০০ টাকা, এলাচ এক হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচা পণ্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের সবজির দাম ৫-১০ টাকা হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকারভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ২৫০-৩৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩৫০-৪৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০-১৮০ টাকা, সিলভার কার্প ১৫০-২০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাস প্রতি কেজি ১৩০-১৮০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, মাগুর ৬০০-৮০০ টাকা, প্রকারভেদে চিংড়ি ৪০০-৮০০ টাকা, প্রতিটি ইলিশ এক হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে; প্রতি কেজি ইলিশের দাম রাখা হচ্ছে এক হাজার ৬০০ টাকা।
এ ছাড়া আগের বাড়তি দামেই গরুর গোশত প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, খাসির গোশত প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। এ ছাড়া লেয়ার মুরগি ১৮০, দেশি মুরগি ৪০০, পাকিস্থানি লাল মুরগি ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
https://www.dailyinqilab.com/article/77313/#sthash.QQuG5TyP.dpuf