৭ আগস্ট ২০২৩, সোমবার, ১২:২৯

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

হলের দখল নিতে মধ্যরাতে হেলমেট-মাস্ক পরে হামলা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি আবাসিক হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ফের সংঘর্ষ হয়েছে। শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে একটি গ্রুপ ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মাস্ক ও হেলমেট পরে শের-ই-বাংলা হল ও বঙ্গবন্ধু হলে হামলা চালায়। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সংঘর্ষকালে একটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এ নিয়ে চলতি বছরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত চারটি বড় ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটল। গত ২৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের ৪০১৬ নম্বর রুমে হেলমেট ও মুখোশ পরে এক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছিল দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে শনিবার রাতের ঘটনাটি সবচেয়ে ভয়াবহ।

ঘটনার পর থেকে হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকলেও একাধিক পক্ষ ক্যাম্পাসে সক্রিয় আছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এসব পক্ষ প্রায়ই সংঘাতে জড়াচ্ছে। তারা আরো বলছেন, শনিবার রাতে যে গ্রুপটি হামলা চালাতে হলে ঢুকেছিল, তারা বরিশাল সিটির মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

দীর্ঘ সময় সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীরা ক্যাম্পাসের হলগুলোর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে সিটি নির্বাচনে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ জিতে যাওয়ায় তারা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ সময় হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সমর্থক হিসেবে পরিচিত গ্রুপটি।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বরিশাল সিটি নির্বাচনের দেড় মাসের মধ্যেই শনিবার রাতে মাস্ক-হেলমেট পরে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ফের হল পুনরুদ্ধারে আসেন সাদিকপন্থীরা। রাত ১১টার দিকে ৪০-৪৫ জন ছাত্রলীগকর্মী প্রথমে শের-ই-বাংলা হলে ঢোকেন।

তাঁদের মুখে মাস্ক ও মাথায় হেলমেট ছিল। তাঁরা হলে ঢুকে প্রধান ফটক আটকে দেন। পরে বাইরে থেকে শিক্ষার্থীদের রুমগুলোতে সিটকিনি লাগিয়ে দেন, যাতে তাঁরা বের হতে না পারেন। এরপর হলের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় গিয়ে কয়েকটি কক্ষে তল্লাশি করেন।
এরপর শের-ই-বাংলা হল থেকে বেরিয়ে সরাসরি বঙ্গবন্ধু হলের চতুর্থ তলায় যান তাঁরা। সেখানে জাহিদ ফারুকপন্থী পক্ষের কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করেন তাঁরা। এরপর তাঁরা দুটি হলেরই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন।

আহত ছাত্রলীগ কর্মীদের অভিযোগ, সাদিক আব্দুল্লাহপন্থী গ্রুপের নেতৃত্বে থাকা বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিদ জামান ওরফে নাভিদ, ইংরেজি বিভাগের তানজিদ মঞ্জু, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের আল সামাদ ওরফে শান্তর নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে।
হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাহমিদ জামান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকায় অবস্থান করছি। তবে গণ্ডগোল হচ্ছে, এটা শুনেছি। এতে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

এই পক্ষের আরেক নেতা তানজিদ মঞ্জু বলেন, ‘ময়ীদুর রহমানের নেতৃত্বে আমার ওপর হামলা হয়। আমি হাতে আঘাত পেয়েছি। ময়ীদুর পিকআপে করে ইট নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা হামলা করিনি।’

শিক্ষার্থীরা জানান, হামলার পর জাহিদ ফারুকপন্থী ছাত্রলীগ কর্মী অমিত হাসান ওরফে রক্তিম এবং ময়ীদুর রহমান ওরফে বাকির অনুসারীরা প্রতিরোধে এগিয়ে এলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এ সময় অমিত হাসানের একটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

রাত ২টা পর্যন্ত দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার পর অমিত ও ময়ীদুরের সমর্থকরা ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয়। এর মধ্যে বন্দর ও কোতোয়ালি থানা থেকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। বর্তমানে ক্যাম্পাসের অবস্থা থমথমে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ময়ীদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বেশির ভাগই নানা অপরাধে অভিযুক্ত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এভাবে হামলা চালানোর সাহস পেয়েছে তারা।’

বন্দর থানার ওসি (তদন্ত) হরিদাস নাগ বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখন শান্ত। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে এ নিয়ে কোনো পক্ষ মামলা বা অভিযোগ করেনি। কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম বলেন, রাতে হামলার বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে দুই হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ছিলেন। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আপাতত পরিস্থিতি শান্ত আছে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/08/07/1306008