৬ আগস্ট ২০২৩, রবিবার, ১২:০৬

কমেছে বিদেশি বিনিয়োগ, বেড়েছে বিদেশি ঋণ পরিশোধ

ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক বিভিন্ন শর্ত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে করে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি সামান্য কমেছে। তবে বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের সামগ্রিক লেনদেনে বড় ঘাটতিতে পড়েছে। আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতির জন্যই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া আশানুরূপ হারে বাড়েনি রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। অন্যদিকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার বেড়েছে। এসব কারণে বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গেল অর্থবছরে সামগ্রিক লেনদেনে ৮২২ কোটি ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আগের অর্থবছর এ ঘাটতি ছিল ৬৬৫ কোটি ডলার।

এদিকে বেড়েছে বিদেশি ঋণ পরিশোধ। ফলে রিজার্ভ কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি, বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ও আশানুরূপ রেমিট্যান্স রপ্তানি না আসা এবং বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ছে বাংলাদেশ। তাই ডলার সংকট কাটাতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুটি খাতের প্রবৃদ্ধি একেবারেই নগণ্য। কিন্তু ব্যয়ের হিসাব অনেক বড় হচ্ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রায় ঘাটতি হচ্ছে। এ ঘাটতির কারণে ডলারের দাম বাড়ছে। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও টান পড়ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি কমলেও বকেয়া আমদানির দেনা ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ মিলে প্রতি মাসে যে ডলারের সংস্থান হওয়া দরকার তা হচ্ছে না। বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে ৭০০ কোটি ডলার আয় হচ্ছে। বিপরীতে তাৎক্ষণিক আমদানির দেনা মেটাতে যাচ্ছে ৬৫০ কোটি ডলার। বকেয়া ঋণ পরিশোধে ব্যয় হচ্ছে আরও কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলার। এ হিসাবে মাসে ঘাটতি ৫০ কোটি ডলার। এ ছাড়া বিদেশে বিভিন্ন সেবা, রয়্যালটি, মুনাফা প্রত্যাবাসনসহ সব মিলিয়ে আরও বাড়তি খরচ হচ্ছে।

বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে: দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ যেখানে ৪৬৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। গেল অর্থবছরে তা কমে ৪৫০ কোটি ডলারে নেমেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়।

আলোচিত অর্থবছর নিট বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। এ সূচকটি আগের বছরের চেয়ে ১১.৮২ শতাংশ কমে ১৬১ কোটি ডলার হয়েছে। আগের অর্থবছরে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১৮২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

একই সঙ্গে আলোচিত সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) নেতিবাচক অবস্থা অব্যাহত রয়েছে। গত অর্থবছরে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল তার চেয়ে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার চলে গেছে। তার আগের অর্থবছরের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল (ঋণাত্মক) ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

চলতি হিসাবের ভারসাম্য (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স): চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সে হিসেবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু দেশে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স এখন ঋণাত্মক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। সবশেষ তথ্য বলছে, গেল অর্থবছরে চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩৩ কোটি ৪০ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৮৬৩ কোটি ডলার।

ওভারঅল ব্যালান্স (সামগ্রিক লেনদেন): সামগ্রিক লেনদেনেও ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। গেল অর্থবছরের সামগ্রিক লেনদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২২ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ সূচকটি আগের বছর একই সময় ঘাটতি ছিল ৬৬৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। তথ্য অনুযায়ী, গেল অর্থবছর ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ২.৭৫ শতাংশ।

রিজার্ভ কমছে: বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। তার আগের অর্থবছরে বিক্রি করে আরও ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির কারণে ধারাবাহিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। গত ২৫শে জুন পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০.৮৪ বিলিয়ন ডলারে।

https://mzamin.com/news.php?news=68027