৬ আগস্ট ২০২৩, রবিবার, ১২:০৫

২ সন্তানের ডেঙ্গু, জ্বর নিয়ে হাসপাতালে বাবা-মাও

https://mzamin.com/news.php?news=68065

দুই ভাই-বোন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। ছোট এই শিশুদের দুরন্তপনাকে ঘিরে রেখেছে দুর্বলতা। মুখে হাসি নেই। মলিন চেহারায় শুয়ে আছে হাসপাতালের বেডে। একই বিছানায় জ্বরে আক্রান্ত তাদের মা সুমাইয়া। তাদের বাবাও জ্বরে আক্রান্ত। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালটির আরেকটি ওয়ার্ডে ভর্তি তাদের চাচা। সে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। বাবা-মা’কেই সামলাতে হচ্ছে সবকিছু। ক্লান্ত হয়ে পড়লেও সন্তানদের নিয়ে থেমে নেই তাদের বিরামহীন যুদ্ধ।

শিশুদের মা সুমাইয়া হাসান মানবজমিনকে বলেন, আমার কাছে যুদ্ধের মতো মনে হচ্ছে তবুও সন্তানদের সুস্থতার জন্য অসুস্থ হয়েও সব সামলাচ্ছি। বুধবার ৬ বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ ইব্নে হাসানের জ্বর আসে। একদিন পরে সাড়ে চার বছরের মেয়ে তাসসিফার জ্বর।
ছেলের একদিন আগে ওদের বাবার জ্বর হয়। আমিও জ্বরে আক্রান্ত। আমার দেবর সিলেট থেকে এসেছে বেড়াতে। সেও এখানে এসে ডেঙ্গু আক্রান্ত। এখন দুই সন্তান ও দেবর হাসপাতালে ভর্তি। দেবর ভর্তি রয়েছে পাঁচতলায় পুরুষ ওয়ার্ডে। দুই সন্তান ও দেবরকে পরীক্ষা করিয়ে রোববার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা দু’জন জ্বরে আক্রান্ত হলেও ভুলে যাচ্ছি সেটি। তিনজন মানুষের পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে। অসুস্থ বাচ্চাদের সামলানো অনেক কষ্টের। এমনিতে সুস্থ মানুষ হাসপাতালে এসে রোগীর সেবা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায় সেক্ষেত্রে আমরাতো পরিবার ধরে সবাই অসুস্থ। এর আগের টেস্ট নেগেটিভ এসেছে এখন আজকের টেস্টের রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে তাদের অবস্থা কি। ছেলেকে একটু সুস্থ মনে হলেও মেয়ে এখনো অনেক দুর্বল। মহাখালীতেই আমাদের বাসা। এতগুলো মানুষের চিকিৎসা সহজ নয়, অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। বিশেষ করে পরীক্ষাগুলোতে অনেক টাকা চলে যাচ্ছে। নিজেরা খরচ করছি পাশাপাশি ধার-দেনা করেও চলছে কিছুটা। আমার স্বামী স্কুল শিক্ষক।

শুধু আব্দুল্লাহ ও তাসসিফা নয়, এই রকম হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিন শরীরে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ছুটছে শত শত মানুষ। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে রোগীদের নিয়ে ছুটছে স্বজনরা। একই পরিবারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই নাজুক পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দিচ্ছে রাজধানীর মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতাল। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালটিকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল হাসপাতালে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ভিড়। এ হাসপাতালে ৫০০ শয্যা নির্ধারণ করেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য। ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে ছুটে আসছেন এই হাসপাতালটিতে। হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ট্রায়াজে রোগী এসেছে ৩২৯ জন। মোট ভর্তি হয়েছে ২৯০ জন। শুক্রবার ভর্তি হয়েছে ৭৭ জন। ছাড়পত্র পেয়েছে ৯০ জন। এরমধ্যে ১৯৯ জন পুরুষ ও ১৩০ জন নারী। ৩য়তলার মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ৬০ জন রোগী। এদিকে চতুর্থতলার পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ৪৬ জন।

৩য়তলার শিশু ওয়ার্ডের ৫ নম্বর বেডে বসে আছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১২ বছরের সামিদ হোসেন। তার পাশে গিয়ে বসছেন ৪ নম্বর বেডের ডেঙ্গু আক্রান্ত আন্নাফি (৮)। তারা একে-অপরের পরিচিত কেউ নয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসে পরিচয় হয়েছে তাদের। দু’জনের মধ্যে তৈরি হয়েছে বন্ধুত্ব। সামিদ হোসেন বলে, গত মাসের ২৮ তারিখে জ্বর আসে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি এই মাসের ১ তারিখে। আমাদের বাসা খিলক্ষেতে। আম্মু আমার সঙ্গে আছে। কীভাবে ডেঙ্গুজ্বর হলো বুঝতে পারছি না। অনেকবার বমিও হয়েছে। এখন অনেকটা সুস্থ মনে হচ্ছে। আন্নাফি জানায়, ১২ দিন আমার জ্বর। ঢাকার মদিনাবাগ আমাদের বাসা। বমি এখন নেই কিন্তু জ্বর আছে। জ্বর হলে ভালো লাগে না। হাসপাতালে থাকতে ইচ্ছা করে না।

লক্ষ্মীপুর থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত ভাইকে নিয়ে এসেছে রোজিনা। তিনি বলেন, প্রথমে অতিরিক্ত জ্বর এসেছে সঙ্গে বমি ছিল। স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিলে ডেঙ্গু পরীক্ষা করালে পজিটিভ আসে। এরপর চিকিৎসক ঢাকায় নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। এই হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রাতে নিয়ে আসি। এখন কিছুটা সুস্থ। চারতলার পুরুষ ওয়ার্ডের ২১ নম্বর বেডে ভর্তি আছে।

ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কর্নেল ডা. একেএম জহিরুল হোসাইন খান মানবজমিনকে বলেন, ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ঘোষণা দেয়ার পর থেকে রোগী বাড়ছে। শিশুদের সেটআপটা একটু আলাদা। আমাদের কোভিড হাসপাতালে যে সাপোর্টটি রয়েছে সেটি পুরোপুরি শিশুদের সাপোর্ট দেয়া আমাদের জন্য একটু কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। এজন্য আমরা বলি তাদেরকে যদি ঢাকা মেডিকেল বা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো ভালো। যেহেতু তাদের পরিপূর্ণ সেটআপ রয়েছে। ডেডিকেটেড ঘোষণার আগে থেকেই দু’-একজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল। চিকিৎসা সেবায় যা যা দরকার সেটি আমরা সার্বক্ষণিক রাখার চেষ্টা করছি। যদি আরও বেশি রোগী আসে ধারণক্ষমতা ক্রস করে সেক্ষেত্রে বেড সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।